Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

চট্টগ্রামে নতুন পরিবেশে সচল সরকারি অফিস


৩১ মে ২০২০ ২২:১৫

চট্টগ্রাম ব্যুরো: দুইমাস পর বন্দরনগরী চট্টগ্রামের সরকারি অফিসগুলো সচল হয়েছে। তবে পাল্টে গেছে চিরচেনা দৃশ্যপট। সেবাপ্রার্থী-দর্শনার্থীদের অবাধ প্রবেশ নেই। টেবিল-চেয়ার বসানো হয়েছে নির্দিষ্ট দূরত্ব মেনে। তবে কর্মস্থলে আসতে গিয়ে যানবাহনের জন্য দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের।

সরকারি অফিসগুলো খুললেও বেসরকারি অফিসের অধিকাংশই এখনও বন্ধ আছে। জানা গেছে, করপোরেট অফিসগুলোও আংশিক সচল হয়েছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতি সীমাবদ্ধ করা হয়েছে। সরকারি-বেসরকারি সব অফিসেই স্বাস্থ্যসুরক্ষার জন্য বিভিন্ন বিধিনিষেধ চালু করা হয়েছে।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবিলায় গত ২৬ মার্চ থেকে সারাদেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছিল সরকার। এরপর কয়েকদফা ছুটির মেয়াদ বাড়ানো হয়। তবে ৩১ মে থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত সময়ের জন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে অফিস খুলে দিয়েছে সরকার।

এর ফলে দুইমাস পর রোববার (৩১ মে) থেকে সচল হয়েছে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সদর দপ্তর। নগরীর সিআরবি ভবনে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের কার্যালয়ে দেখা গেছে, প্রত্যেক কর্মকর্তা-কর্মচারির টেবিলের মধ্যে অন্তঃত তিনফুট দূরত্ব রাখা হয়েছে। টেবিলের সামনে চেয়ারও রাখা হয়েছে দূরত্ব মেনে। সকালে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রবেশের পর বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে সিআরবি ভবনের মূল ফটক।

একইভাবে চট্টগ্রাম রেলস্টেশনও সচল হয়েছে। দুইমাস পর রোববার সকাল ৭টায় যাত্রী নিয়ে চট্টগ্রাম ছেড়েছে সুবর্ণ এক্সপ্রেস ট্রেন। এসময় রেল পুলিশ এবং রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা স্টেশনে জটলা ঠেকাতে তৎপর ছিলেন। যাত্রীদেরও ট্রেনে বসানো হয়েছে নির্দিষ্ট দূরত্বে এবং সবার মুখে মাস্ক ছিল। কেউ কেউ হ্যান্ড স্যানিটাইজার নিয়েই ট্রেনে উঠেন। ট্রেন ছাড়ার আগে জীবাণুনাশক স্প্রে করা হয়।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক নাসির উদ্দিন আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনেই অফিস চালু করেছি। কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাড়া অন্যদের প্রবেশের ক্ষেত্রে কিছু বিধিনিষেধ দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি যে কর্মকর্তার কাছে যাবেন, প্রথমে টেলিফোনে তার অনুমতি নেবেন। তিনি অনুমতি দিলেই প্রবেশ করতে পারবেন। আগের মতো জটলা তৈরি করে সিআরবি ভবনে প্রবেশ করা যাবে না।’

খুলেছে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডও। রোববার সব বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতি ছিল। চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সচিব আবদুল আলীম সারাবাংলাকে বলেন, ‘সাধারণ ছুটি শুরুর আগে থেকেই আমরা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুসারে বেশকিছু বিধিনিষেধ দিয়েছিলাম। এখনও আমরা সরকারিভাবে নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি যাতে সবাই কঠোরভাবে অনুসরণ করেন সেটা বলেছি। যত বড় কর্মকর্তাই হোন না কেন, তিনি মাস্ক ছাড়া অফিসে ঢুকতে পারবেন না। মেইন গেট সবসময় বন্ধ থাকবে। কারও বোর্ডে যাওয়ার প্রয়োজন হলে তিনি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার কাছে বা নিচতলায় আমাদের প্রতিনিধির সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবেন। তবে সরাসরি কর্মকর্তাদের কক্ষে চলে যেতে পারবেন না। আমরা পুরো অফিস জীবাণুমুক্ত করেছি।’

কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সংক্রমণের শংকা কিছুটা থাকলেও সেটা অচিরেই কেটে যাবে বলে আশাবাদের কথা জানিয়েছেন শিক্ষাবোর্ডের সচিব।

সাধারণ ছুটির মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরের কর্মকাণ্ড প্রায় স্বাভাবিক থাকলেও রোববার থেকে বন্দরের সব বিভাগই পুরোপুরি খুলে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সচিব মো. ওমর ফারুক। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের সব বিভাগেই কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কাজে যোগ দিয়েছেন। তবে যারা বয়স্ক এবং অসুস্থ, তাদের অফিসে আসতে আমরা নিষেধ করেছি।’

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের অধীন সব কার্যালয়ও খুলে দেওয়া হয়েছে। নগর ভবনের পাশাপাশি শাখা অফিসগুলোও দুইমাস পর পুরোপুরি সচল হয়েছে।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সামশুদ্দোহা সারাবাংলাকে বলেন, ‘সাধারণ ছুটির মধ্যেও রিলিফ কাজের জন্য আমাদের অনেককেই অফিসে আসতে হয়েছে। আমাদের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ তো ২৪ ঘণ্টা চালু ছিল। রেভিনিউ শাখা খুলে দেওয়া হয়েছে। সব বিভাগেই কাজ শুরু হয়েছে। তবে আমরা কাজ কখনই বন্ধ করিনি, সীমিত আকারে এতদিন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কাজ হয়েছে।’

অফিস খুললেও শঙ্কা এবং ভোগান্তি উভয়ের মধ্যেই আছেন অপেক্ষাকৃত নিচের পদে কর্মরতরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের এক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের বলা হয়েছে নিজেদেরই সুরক্ষার ব্যবস্থা করতে। আমরা বড়জোড় মাস্ক আর হ্যান্ডগ্লাভস ব্যবহার করতে পারি। সেগুলো দিয়ে আমরা নিজেদের করোনা থেকে সুরক্ষিত রাখতে পারব? বাস পুরোপুরি চলছে না। অফিসে আসতে আমাদের অনেক সহকর্মীকে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে।’

চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সচিব মোহাম্মদ আবদুল আলীম সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর তো আর গাড়ি নেই। অনেকে শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে অফিসে আসেন। তাদের কিছুটা কষ্ট হয়েছে। রিকশায় করে আসার মধ্যেও ঝুঁকি আছে। অনেক রিকশাচালকের মুখে মাস্ক নেই। অনেকে রিকশায় উঠছেন মাস্ক ছাড়াই।’

সরকারি অফিসের বাইরে চট্টগ্রামের শিল্প কারখানাগুলোর কার্যালয়ও খুলতে শুরু করেছে। সব ধরনের পোশাক কারখানার বাইরে অধিকাংশ বড় কারখানাও ছুটির মধ্যে চালু ছিল। রোববার থেকে কারখানার প্রধান কার্যালয়েও কাজ ‍শুরু হয়েছে।

বাংলাদেশ স্টিল রি-রোলিং মিলসের (বিএসআরএম) এক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের করপোরেট অফিস খুলেছে। আমাদের ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। তিনদিন যাবে ৪০ শতাংশ স্টাফ। আর তিনদিন বাকি ৪০ শতাংশ। সেলস ডিপার্টমেন্ট আপাতত বন্ধ থাকবে। ভার্চুয়ালি কাজের ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।’

অফিসগুলো সচল চিরচেনা দৃশ্যপট সরকারি অফিস


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর