ঝুঁকি আর আতঙ্ক নিয়ে কাজে যোগ দিয়েছেন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা
৩১ মে ২০২০ ২৩:১২
ঢাকা: করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে টানা ৬৬ দিন বন্ধ থাকার পর সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান খুলেছে। মহামারি রূপ ধারণ করা এই ভাইরাসের বিস্তারের মধ্যেই অফিস খোলায় অনেকেই সংক্রমণের আতঙ্ক নিয়ে কাজে ফিরেছেন। অনেকেই বলেছেন, অফিসে যাতায়াতেও ঝুঁকি রয়েছে। তবে সতর্ক থেকেই কাজ করছেন তারা।
রোববার (৩১ মে) সচিবালয়ে দেখা গেছে, দীর্ঘ দুই মাসেরও বেশি সময় পর কর্মচাঞ্চল্য ফিরে পেয়েছে প্রশাসনের এই কেন্দ্রবিন্দু। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রোববারই কাজে যোগ দিয়েছেন প্রায় সবাই। এদিন সচিবালয়ের সবগুলো মন্ত্রণালয়েই কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতি ছিল।
সকালেই সচিবালয়ে নিজ দফতরে কাজে যোগ দিয়েছেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বীরপ্রতীক। কর্মস্থলে পৌঁছেই সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর খোঁজ-খবর নেন তিনি। পরে পাটজাত পণ্যকে বহুমুখী করতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠক করেন।
রোববার অফিস করেছেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। তিনিও তার দফতরের কাজকর্মের খোঁজ নেন, বৈঠক করেন এবং দাফতরিক কাজ করেন।
এছাড়া অফিস করেছেন শিক্ষামন্ত্রী ও শিক্ষা উপমন্ত্রী, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী, বেসামরিক বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী, স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রী, বাণিজ্যমন্ত্রী, পাবর্ত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী, কৃষিমন্ত্রী, খাদ্যমন্ত্রী, ভূমিমন্ত্রী, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রী, সমাজকল্যাণমন্ত্রী এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রীসহ অন্যরাও। মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীদের পাশাপাশি প্রায় সব মন্ত্রণালয়ের সচিবই কর্মক্ষেত্রে উপস্থিত ছিলেন। প্রধান তথ্য কর্মকর্তাসহ তথ্য অধিদফতরের কর্মকর্তারাও সবাই অফিস করেছেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দীর্ঘ বিরতির পর প্রথম দিনেই কর্মচারীদের উপস্থিতিও ছিল প্রায় শতভাগ। তবে করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে কিছুটা শিথিলতা থাকায় কাজ হয়েছে ঢিলেঢালা পরিবেশে। আর কাজে যোগ দিয়েছেন— এমন অনেকেই জানিয়েছেন, তারা মধ্যে সংক্রমণের ভয়ে রয়েছেন। তাছাড়া চলাচলেও রয়েছে ঝুঁকি।
সচিবালয়ে দায়িত্ব পালনকারী নিরাপত্তাকর্মীরা বলছেন, যারা পায়ে হেঁটে সচিবালয়ে প্রবেশ করেছেন, তাদের শরীরে তাপমাত্রা পরীক্ষা করে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে। পাশপাশি জীবাণুমুক্ত করতে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও সাবান-পানি রাখা হয়েছে। যারা গাড়ি নিয়ে প্রবেশ করছেন, তাদের জন্য নিজ নিজ মন্ত্রণালয়ের সামনে গাড়ি জীবাণুমুক্ত করার সরঞ্জাম রাখা হয়েছে।
এদিকে, সচিবালয়ে কাজে গতি আসতে থাকলেও সাধারণ দর্শনাথীরা এখনো প্রবেশের অনুমতি পাননি। নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, দর্শনাথীদের জন্য খুলে দেওয়ার বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত আসেনি।
করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে গত ২৬ মার্চ থেকে সারাদেশে ১০ দিনের জন্য সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। এরপর দফায় দফায় সাধারণ ছুটির মেয়াদ বাড়ানো হয়। সবশেষ ঈদুল ফিতরের ছুটিসহ ৩০ মে পর্যন্ত ছিল সাধারণ ছুটি। ঈদুল ফিতরের পর সরকার সিদ্ধান্ত নেয়, ৩১ মে থেকে আর সাধারণ ছুটি থাকছে না। বরং ১৫ জুন পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে অফিস খোলা যাবে, চালানো যাবে গণপরিবহন। এই সময়ে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ থেকে জারি করা ১৩ দফা নির্দেশনা কঠোরভাবে মেনে চলার পাশাপাশি সবাইকে মাস্ক ব্যবহার করে নিজ দফতরে কাজ যোগ দেওয়ার কথা বলা হয় সরকারের পক্ষ থেকে। তবে জেষ্ঠ্য, অসুস্থ ও গর্ভবতী নারীদের অফিসে যেতে নিষেধ করা হয়েছে।
অফিস খোলা করোনা আতঙ্ক করোনাভাইরাস কাজে যোগদান সংক্রমণের ঝুঁকি সচিবালয়