রাজধানীর বাইরে কোথাও করোনা রোগীদের জন্য ডায়ালাইসিস ইউনিট নেই
১ জুন ২০২০ ১০:১০
ঢাকা: দেশে নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) পরিস্থিতিতে এরই মধ্যে ৬৪ জেলায় বিভিন্ন বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আট বিভাগে বিভিন্ন হাসপাতালে ৩৯৯টি নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) থাকলেও রাজধানী বাদে আর কোথাও নেই ডায়ালাইসিস বেড। এর ফলে কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে যারা জটিল কিডনি রোগে ভুগছেন, তারা প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হতে পারেন বলে আশঙ্কা রয়েছে।
কোভিড-১৯ হাসপাতালে কিডনি ডায়ালাইসিস ইউনিট থাকা কতটা জরুরি— এমন প্রশ্নের উত্তরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) নেফ্রোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মো. শহিদুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, কিডনির সমস্যা আছে— এমন রোগী যদি কোভিড-১৯ আক্রান্ত হন, তবে তার জন্য আলাদাভাবে অবশ্যই ডায়ালাইসিসের প্রয়োজন আছে। শুধু প্রয়োজন আছে বললে হবে না, কোভিড রোগীদের জন্য ডায়ালাইসিস ইউনিট থাকাটা জরুরিই।
এক্ষেত্রে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর প্রসঙ্গ তুলে ধরেন ডা. শহিদুল। জানা যায়. ডা. জাফরুল্লাহকে সপ্তাহে তিন বার ডায়ালাইসিস নিতে হতো। সম্প্রতি তিনি কোভিড-১৯ পজিটিভ হয়েছেন। পরে আলাদাভাবে একটি মেশিন দিয়ে তার ডায়ালাইসিস চলছে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, রাজধানীতে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল ও বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে কয়েকজন কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগী ডায়ালাইসিস ইউনিটে ভর্তি আছেন। সব মিলিয়ে ঢাকায় ডায়ালাইসিস বেড আছে ১০৬টি। কিন্তু রাজধানীর বাইরে এমন কোনো সুযোগ কোনো হাসপাতালে নেই।
ঢাকার বাইরে ডায়ালাইসিসের প্রয়োজন হলে তা কিভাবে মোকাবিলা করা হবে?— জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন কর্মকর্তা ডা. শেখ ফজলে রাব্বি সারাবাংলাকে বলেন, আমাদের এখানে কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য এখনো কোনো ডায়ালাইসিস ইউনিট নেই, এটা সত্য। এ বিষয়টি নিয়ে আমাদের নিজেদের মধ্যে আলাপ হয়েছে অনেক। বর্তমানে আসলে যেসব স্থানে কোভিড-১৯ চিকিৎসা চলছে, সেখানে কোভিড-১৯ আক্রান্তদের জন্য আলাদাভাবে ডায়ালাইসিস ইউনিট করা যাবে কি না, তা নিয়ে এখনো সন্দেহ রয়েছে। তবে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কোভিড-১৯ চিকিৎসা শুরু হতে যাচ্ছে। সেখানে আমরা অন্তত একটা ডায়ালাইসিস ইউনিট রাখার জন্য বলেছি। এছাড়া আমাদের আর উপায় নেই।
চট্টগ্রামে ডায়ালাইসিস ইউনিট স্থাপন বিষয়ে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও স্বাচিপের চট্টগ্রাম অঞ্চলের করোনা বিষয়ক সমন্বয়ক ডা. আ ম ম মিনহাজ উদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, সাধারণত চট্টগ্রামে কিডনি ডায়ালাইসিসের রোগীদের বেসরকারিভাবে কোনো ক্লিনিকে সেবা নিতে হতো। বর্তমান পরিস্থিতিতে তাদের কোনো হাসপাতাল ভর্তি নিচ্ছে না, ডায়ালাইসিস সেবাও দিচ্ছে না। সরকারিভাবে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের নির্দিষ্ট ওয়ার্ড ছাড়া আর কোথাও ডায়ালাইসিস সেবার ব্যবস্থা নেই। ফলে এই রোগীগুলো ডায়ালাইসিস করতে পারছেন না। যদি তারা কোনোভাবে কোভিড-১৯ পজেটিভ হন বা তাদের কারো মধ্যে কোভিড-১৯ সংক্রমণের আশঙ্কা করা হয়, সেক্ষেত্রে আসলে ডায়ালাইসিসের কোনো সুযোগ নেই।
তিনি বলেন, বর্তমানে এই অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালকের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। তিনি নিজে উদ্যোগ নিয়ে পাঁচটি ডায়ালাইসিস মেশিন আনিয়েছেন। তবে আনার পর প্রায় ১০ দিন পেরিয়ে গেলেও কিছু কারণে চালু করা যায়নি। চালু হলে এগুলো আলাদাভাবে কেবল কোভিড-১৯ রোগীদের জন্য ব্যবহার হবে। সেই মেশিন যদি আজকালের মধ্যে চলে আসে, তবে এই সমস্যার কিছুটা সমাধান হবে।
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মুজিবুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, আমাদের হাসপাতালে এখনো আমরা পুরোপুরি আসলে কোভিড-১৯ চিকিৎসাব্যবস্থা চালু করতে পারিনি। ২ থেকে ৩ জুনের দিকে শুরু করতে পারব। এক্ষেত্রে ডায়ালাইসিস ইউনিটের বিষয়টিও আমরা বিবেচনা করব।
রাজধানীর বাইরে ডায়ালাইসিস ইউনিট না থাকা বিষয়ে স্বাচিপ সভাপতি ও জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. এম ইকবাল আরসালান সারাবাংলাকে বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা পরামর্শক কমিটি থেকে হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা নিয়ে অনেক পরামর্শ দিয়েছি। হাসপাতালে ডায়ালাইসিস ইউনিট প্রয়োজন। একইসঙ্গে সেসব ইউনিটে পর্যাপ্ত জনবল নিয়োগও কিন্তু জরুরি। তা না হলে রাজধানীর বাইরে নেমে কিডনি রোগীরা কোভিড-১৯ আক্রান্ত হলে চিকিৎসাব্যবস্থায় নেমে আসতে পারে বড় বিপর্যয়।
এ বিষয়ে জানতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (হাসপাতাল) ডা. আমিনুল হাসানের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
কোভিড-১৯ ডায়ালাইসিস ইউনিট নভেল করোনাভাইরাস নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ