মৃত্যুহার বাড়ছেই: জুনেই প্রাণ হারাতে পারেন দেড় হাজার মানুষ
১১ জুন ২০২০ ১০:৩১
দেশে নভেল করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণের তিন মাস পেরিয়ে গেছে। শুরুর দিকে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার হার যেমন কম ছিল, তেমনি কম ছিল মৃত্যুর হারও। কেবল শুরুর দিকে না, তিন মাসের মধ্যে প্রথম দুই মাসেই সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার ছিল বেশ কম। তবে শেষ এক মাস সময়ে আক্রান্তের হারের পাশাপাশি মৃত্যুর পরিমাণও বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। আর তাতেই দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ৯৫ দিন ও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রথম মৃত্যুর ঘটনার ৮৫তম দিনের মাথায় এসে এক হাজার জনের মৃত্যু হলো এই ভাইরাসের কারণে। এর মধ্যে তিন-চতুর্থাংশ, অর্থাৎ ৭৫ শতাংশ মৃত্যুই ঘটেছে শেষ ২৯ দিনে।
কোভিড-১৯ সংক্রান্ত স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়মিত বুলেটিন থেকে পাওয়া তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে এ চিত্র উঠে এসেছে। এতে দেখা যায়, গত চার সপ্তাহ ধরেই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে আশঙ্কাজনক হারে। এর মধ্যে জুনের প্রথম ১০ দিনেই ৩৬২ জন মারা গেছেন। আগের চার সপ্তাহের মৃত্যুর পরিমাণ বৃদ্ধির হার অব্যাহত থাকলে কেবল জুনেই দেড় হাজারেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারাতে পারেন।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য বলছে, দেশে করোনাভাইরাসে আক্রন্ত হয়ে প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে ১৮ মার্চ। সেদিন থেকে শুরু করে পরবর্তী এক সপ্তাহে (১৮ মার্চ থেকে ২৪ মার্চ) দেশে ৪ জন এই ভাইরাসের সংক্রমণে মারা গিয়েছিলেন। দ্বিতীয় সপ্তাহে (২৫ মার্চ থেকে ৩১ মার্চ) মারা গেছেন একজন। তৃতীয় সপ্তাহে (১ এপ্রিল থেকে ৭ এপ্রিল) মৃত্যুর সংখা কিছুটা বেড়ে দাঁড়ায় ১২ জনে। চতুর্থ সপ্তাহে (৮ এপ্রিল থেকে ১৪ এপ্রিল) এই সংখ্যা ছিল ২৯ জন।
পঞ্চম সপ্তাহ গিয়ে করোনাভাইরাসে মৃত্যুর সংখ্যা এক ধাক্কায় আগের সপ্তাহের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি হয়ে যায়। ওই সপ্তাহে (১৫ এপ্রিল থেকে ২১ এপ্রিল) ৬৪ জন মারা যান করোনার ছোবলে। পরের দুই সপ্তাহেই অবশ্য ধারাবাহিকভাবে মৃত্যুর সংখ্যা কমে যায়। ষষ্ঠ সপ্তাহে (২২ এপ্রিল থেকে ২৮ এপ্রিল) এই সংখ্যা ছিল ৪৫, সপ্তম সপ্তাহে (২৯ এপ্রিল ৫ মে) ছিল ২৮ জন। অষ্টম সপ্তাহেই (৬ মে থেকে ১২ মে) অবশ্য ফের মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে যায়। ওই সপ্তাহে মোট ৬৭ জন মারা যান, যা ওই সময় পর্যন্ত এক সপ্তাহে করোনায় আক্রান্ত হয়ে সর্বোচ্চ মৃত্যু।
নবম সপ্তাহ থেকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা হু হু করে বাড়তে থাকে। এর আগ পর্যন্ত যেখানে এক সপ্তাহে সর্বোচ্চ মৃত্যু ছিল ৬৭ জনের, সেখানে নবম সপ্তাহে (১৩ মে থেকে ১৯ মে) এর পরিমাণ ছিল প্রায় দ্বিগুণ— ১২০ জন। পরের তিন সপ্তাহেও ধারাবাহিকভাবে বাড়তে থাকে এই সংখ্যা।
দশম সপ্তাহে (২০ মে থেকে ২৬ মে) ১৫২ জন মারা যান এই ভাইরাসের আক্রমণে। একাদশ সপ্তাহে (২৭ মে থেকে ২ জুন) এর পরিমাণ ছিল ১৮৭ জন। সবশেষ দ্বাদশ সপ্তাহে (৩ জুন থেকে ৯ জুন) এই সংখ্যা আবারও লাফ দেয়। এই সপ্তাহে মারা যান ২৬৬ জন।
সবমিলিয়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রথম মৃত্যুর ঘটনার পরবর্তী ১২ সপ্তাহ, অর্থাৎ ৮৪ দিনে মোট ৯৭৫ জন মারা যান করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে। আর ৮৫ তম দিন, বুধবারের (১০ জুন) তথ্য, আগের ২৪ ঘণ্টায় এই ভাইরাসে আক্রান্ত আরও ৩৭ জন মারা গেছেন। সব মিলিয়ে মৃত্যুর সংখ্যা এক হাজার ১২ জন। অর্থাৎ প্রথম মৃত্যুর ৮৫তম দিনে এসে করোনায় মৃত্যু ছাড়িয়েছে এক হাজার।
এদিকে, স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য বিশ্লেষণ করেই দেখা যায়, ১৮ মার্চ প্রথম মৃত্যুর ঘটনার পর ওই মাসে মোট ৫ জন মারা গেছেন করোনায় আক্রান্ত হয়ে। গোটা এপ্রিল মাসে এই সংখ্যা ছিল ৫১ জন। মে মাসে এসে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা এপ্রিলের তুলনায় বেড়ে যায় প্রায় ১০ গুণ। এই মাসটিতে ৫৯৪ জন মারা যান করোনাভাইরাসের ছোবলে। তবে জুন মাসের অবস্থা আরও ভয়াবহ। এ মাসের মাত্র এক-তৃতীয়াংশ দিন অতিক্রান্ত হয়েছে। এই ১০ দিনেই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ৩৬২ জন মারা গেছেন! অর্থাৎ গোটা মে মাসের মৃত্যুর সংখ্যার প্রায় ৬১ শতাংশ মারা গেছেন জুনের এই প্রথম ১০ দিনে।
এদিকে, সব হিসাব বাদ দিয়ে জুনের প্রথম ১০ দিনের হিসাবেই যদি মাসের পরের ২০ দিনেও মৃত্যুর হার বজায় থাকে, তাহলেও জুনে করোনার কারণে মারা যাবেন প্রায় এক হাজার মানুষ। সব মিলিয়ে জুনের শেষে দেশে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা এক হাজার সাতশ ছাড়িয়ে যাবে। আর শেষ চার সপ্তাহে মৃত্যুর পরিমাণ যে হারে বাড়ছে, একই হার বজায় থাকলে জুনেই মৃত্যুর সংখ্যা পেরিয়ে যাবে দেড় হাজার। তাতে করে জুলাই আসার আগেই দেশে করানাভাইরাসে আক্রান্ত দুই হাজারেরও বেশি মানুষ মারা যাবেন।
বুধবার (১০ জুন) স্বাস্থ্য অধিদফতরের অনলাইন বুলেটিনের তথ্য বলছে, দেশে করোনাভইরাসে আকান্ত মোট ৭৪ হাজার ৮৬৫ জন শনাক্ত হয়েছেন। সে হিসাবে সংক্রমণ শনাক্তের বিপরীতে দেশে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৩৫ শতাংশ। শেষ চার সপ্তাহে যেভাবে মৃত্যুর হার বাড়ছে, এই ধারাবাহিকতা চলমান থাকলে সার্বিক মৃত্যুহার আরও বাড়বে— তেমন আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন না কেউ।
অনলাইন বুলেটিন করোনাভাইরাস করোনাভাইরাসে মৃত্যু করোনায় আক্রান্ত করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু কোভিড-১৯ স্বাস্থ্য অধিদফতর