চালের পাইকারি বাজারে অস্থিরতা, ১০ দিনে দাম বেড়েছে বস্তায় ৪শ টাকা
১২ জুন ২০২০ ২২:৪৫
ঢাকা: করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরুর পর চালের বাজার একদফা অস্থিতিশীল হলেও কৃষক নতুন ধান কাটায় দাম কমে স্থিতিশীল পর্যায়ে চলে আসে। তবে ইরি ধানের আবাদ শেষ হতে না হতেই চালের বাজারে ফের অস্থির হয়ে উঠেছে। এবার ১০ দিনের ব্যবধানে পাইকারি বাজারে বস্তা প্রতি ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা দাম বেড়েছে। তবে এ নিয়ে আলোচনা হয়নি। নীরবেই বেড়েছে চালের দাম।
গত ৩১ মে থেকে ৯ জুন পর্যন্ত ১০ দিন রাজধানীর বাদামতলী, জুরাইন, শ্যামবাজার, যাত্রাবাড়ী ও শাহজাদপুরের চালের আড়ত ঘুরে এই চিত্র পাওয়া যায়।
গত ৬ জুন বাদামতলীর চালের আড়তগুলোতে গিয়ে দেখা যায়, মিনিকেট চালের দাম এক সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে ৪০০ টাকা। মিল পর্যায়ে আরও ১০০ টাকা বেড়েছে। তবে ওই চালান এখনো আসেনি।
বাদামতলীর সরকার চাউল ঘরে কথা হয় ম্যানেজার আনিস আলমগীরের সঙ্গে। তিনি বলেন, সিরাজ ব্র্যান্ডের মিনিকেট চালের দাম বস্তা (৫০ কেজি) প্রতি ২৫০০ টাকা। রাজ্জাক ব্র্যান্ডের মিনিকেটের দাম ২৪৫০ টাকা। সাগর ব্র্যান্ডের জিরা চালের বস্তা প্রতি ২৪০০ টাকা। এছাড়া কাজললতা ২৪০০ টাকা, গুটি স্বর্ণা ২৩০০ টাকা ও নাজিরশাইল ২৪০০ টাকা বস্তা দরে বিক্রি হচ্ছে।
আনিস বলেন, এক সপ্তাহ আগেও সিরাজ মিনিকেট ছিল প্রতি বস্তা ২১০০ টাকা, রাজ্জাক মিনিকেট ছিল ২০০০ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে চাল ভেদে বস্তা প্রতি ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা দাম বেড়েছে। এই দাম খুচরা পর্যায়েও বেড়েছে।
৮ জুন শ্যামবাজার টাউন ট্রেডার্স চালের আড়তে কথা হয় মালিক আব্দুর রউফের সঙ্গে। তিনি বলেন, চালের দাম বাড়তি। মিলে বেড়েছে দাম। মিলে বাড়লে এখানে বাড়ে, মিলে কমলে এখানেও কমে চালের দাম। আমরা আগের চাল বিক্রি করেছি একটু কম দামে। আগামীকাল (৯ জুন) থেকে বাড়তি দামে নতুন চাল বিক্রি করব।
শ্যামবাজারে সিরাজ মিনিকেট ২৪৮০ টাকা, রাজ্জাক মিনিকেট ২৪৩০ টাকা ও সাগর জিরা চাল ২৩৮০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে।
এর আগে, ৭ জুন রাজধানীর জুরাইন বালুরমাঠ এলাকায় চালের আড়ত শরীয়তপুর স্টোরে কথা হয় মেফতাহুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি অন্তত চার ব্র্যান্ডের চাল পাইকারি বিক্রি করেন। এর মধ্যে রয়েছে সিরাজ, রাজ্জাক, সাগর ও কাজললতা। তিনি বলেন, প্রত্যেক ব্র্যান্ডের চালেই সপ্তাহের ব্যবধানে দাম বেড়েছে বস্তা প্রতি ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। মোকামে আরেক দফা দাম বেড়েছে। তবে সেই চাল এখনো এসে পৌঁছায়নি।
মেফতাহুল জানান, ৭ জুন সিরাজ মিনিকেট বিক্রি করেছেন ২৪৭০ টাকায়, রাজ্জাক ২৪৮০ টাকায়, সাগর ২৪০০ টাকায় ও কাজললতা বিক্রি করেছেন ২২৮০ টাকায়।
জুরাইনে বিসমিল্লাহ ট্রেডার্সে কথা হয় ফাহিম হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, চালের বাজার বাড়তি। সহজে কমবে না। মিল মালিকরা ধান পাচ্ছে না। মিনিকেট ধানের কম আবাদ হয়েছে।
রাজধানীর শাহজাদপুরে গত ৯ জুন কথা হয় আহমেদ চাউল ঘরে। ম্যানেজার ফারুক হোসেন বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, পাবনার ঈশ্বরদী, নাটোরের গুরুদাসপুর, বগুড়া ও ময়মনসিংহ থেকে চাল আসে। সব জায়গাতেই চালের দাম বেড়েছে। তাই ঢাকাতেও চালের দাম বেড়েছে। আহমেদ চাউল ঘরে মিনিকেট বস্তা প্রতি (৫০ কেজি) ২৪৫০ টাকা ও জিরা ২৪৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল।
বুধবার (১০ জুন) নাটোরের গুরুদাসপুর চাঁচকৈড় বাজারে তালুকদার রাইস মিলের স্বত্বাধিকারী আরিফ হোসেন মোবাইলে সারাবাংলাকে বলেন, এক সপ্তাহ আগে মিনিকেটের দাম ছিল ২১০০ টাকা। তার দুইদিন আগে ছিল ২০০০ টাকা বস্তা। আমরা দেশের বিভিন্ন জেলায় লোড দিয়েছি। সপ্তাহের ব্যবধানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৪০০ থেকে ২৫০০ টাকায়।
কী কারণে মিল পর্যায়ে চালের দাম বাড়লো— জানতে চাইলে আরিফ বলেন, এবারে মিনিকেট ধানের আবাদ কম হয়েছে। সে কারণে বেশি দামে ধান কিনতে হয়েছে মিল মালিকদের। ধানের দাম বেশি হওয়ায় চালের দাম বাড়ছে। মিনিকেটের চালের দাম আর কমবে না বলেও আশঙ্কার কথা জানান তিনি।
এর মধে ৫ জুন কথা হয় ঈশ্বরদীর রহমান রাইস মিলের স্বত্বাধিকারী ইসমাইল হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, মিনিকেট ও জিরা ধান পাওয়া যাচ্ছে কম। এজন্য চালের দাম প্রতিদিন বাড়ছে। ধান পাওয়া না গেলে আরও দাম বাড়বে। একেবারই ধান পাওয়া না গেলে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাবে। তখন ২৮, পায়জাম, স্বর্ণা ও ২৯ ধানের চালের ওপর প্রভাব পড়বে। তখন ওইসব চালের দামও বাড়বে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১০ জুন লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজারে ধান বিক্রি হয়েছে ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকা দরে। অথচ তিন মাস আগেও আমন ধান বিক্রি হয়েছে ৪৮০ টাকায়।
৯ জুন ধানের দাম বেড়েছে গুরুদাসপুরেও। উপজেলার খুবজীপুর ইউনিয়নের ধান চাষি কসের হাজী বলেন, জিরা ধান বিক্রি করেছি ১০০০ টাকা মণ। চার দিন পরই ওই ধান এখন ১১৫০ টাকা। সামনে আরও দাম বাড়তে পারে। গত বছর ১০০ বিঘাতে ধান চাষ করলেও দাম না পাওয়ায় এবার ৫০ বিঘা ধান চাষ করেছি। অথচ এবার দাম বেশি
রাজধানীর বেশ কয়েকটি বাজারে খুচরা ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের সঙ্গেও কথা হয় সারাবাংলার এই প্রতিবেদকের। বুধবার (১০ জুন) সুত্রাপুর বাজারে সালমান স্টোরের মালিক আহনাব ভুঁইয়া বলেন, মিনিকেট কয়েকদিন ৫৫ থেকে ৫৭ টাকা কেজি বিক্রি করলেও আজ বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। জিরা চাল ৫৮ টাকা, সাগর ৫৬ টাকা, স্বর্ণা ৫০ টাকা, কাজলতা ৪৬ থেকে ৪৮ টাকা আর হাসকি বিক্রি হচ্ছে ৪২ টাকা কেজি দরে।
একই কথা বলেন, যাত্রাবাড়ী বাজারের মুদি দোকানি আব্দুর রাজ্জাকও। তিনি বলেন, খুচরা পর্যায়ে চালের দাম কেজি প্রতি ৫ থেকে ৮ টাকা বেড়েছে। সবখানেই তো দাম বেশি। তাই আমাদেরও বাড়তি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।
যাত্রাবাড়ী বাজারে কথা হয় ক্রেতা হাফিজ উদ্দিনের সঙ্গে। চাল কিনতে এসে ক্ষোভ নিয়ে বলেন, চিকন চাল তো কিনতে পারি না, মোটা শাল কিনেই দিন চালাই। সেই মোটা চালেরও দাম বেড়েছে। কয়েকদিন আগেও যে চাল ৪২ টাকায় কিনতাম, সেটা আজ ৪৬ টাকা। কেন বাড়ছে দাম, সেটা তো সরকার দেখবে। কিন্তু কেউ দেখে না। একবার দাম বাড়লে এ দেশে সেটা আর কমে না।