Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পূর্ব রাজাবাজার লকডাউন: কঠোর ব্যবস্থাপনায় ফিরছে শৃঙ্খলা


১৩ জুন ২০২০ ২৩:০৯

ঢাকা: টানা চতুর্থ দিনের মত রাজধানীর পূর্ব রাজাবাজার এলাকায় চলছে পরীক্ষামূলক লকডাউন। গত মঙ্গলবার (৯ জুন) মধ্যরাত থেকে এলাকাটিকে স্বাস্থ্য অধিদফতরের নির্দেশনায় লকডাউন ঘোষণা করে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। এখানকার লকডাউনের অভিজ্ঞতা নিয়ে করোনা মোকাবিলায় পরবর্তী করণীয় ঠিক করতে চায় সরকার।

তবে প্রথম দু’দিন লকডাউন বাস্তবায়নে স্থানীয় সরকার ও পুলিশ প্রশাসনকে পড়তে হয়েছিল বিপাকে। শুরুতে বাসিন্দারা যে যেভাবে পারছিলেন প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে যাওয়া-আসা করতে ব্যস্ত ছিলেন। এমন পরিস্থিতিতে দফায় দফায় সিদ্ধান্ত বদলায় প্রশাসন। বাসিন্দাদের অহেতুক প্রবেশ-বাহিরে শুরুতে সহনশীল হলেও পরিস্থিতি বিবেচনায় শেষ পর্যন্ত কঠোর হতে বাধ্য হয় তারা। এতে বাসিন্দাদের মাঝে শৃঙ্খলা ফিরছে বলে জানিয়েছেন দায়িত্ব পালনকারিরা।

পূর্ব রাজাবাজার এলাকার বাসিন্দা, সেচ্ছাসেবী ও দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা বলছেন, দেশে প্রায় আড়াই মাস ধরে চলা সাধারণ ছুটির আড়ালে অঘোষিত লকডাউন আর পূর্ব রাজাবাজারে বর্তমানে বিদ্যমান লকডাউনের মধ্যে রয়েছে পার্থক্য। আগের স্থানীয়দের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এবং জনসমাগম এড়ানোর বিষয়টি নিশ্চিত করা ছাড়া কিছুই ছিল না। আর বর্তমানে পূর্ব রাজাবাজারের লকডাউনে এলাকার বাইরে যাওয়া এবং প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বাসিন্দারাও হঠাৎ এমন পরিবর্তনে অভ্যস্ত না থাকায় প্রথম প্রথম অজুহাত আর ফাঁকফোঁকর গলিয়ে এলাকার বাইরে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু সেসব বিষয়গুলোকে অভিজ্ঞতা হিসেবে নিয়ে প্রশাসন বেশ কিছু পরিবর্তন নিশ্চিত করায় লকডাউনে অভ্যস্ত হয়েছেন বাসিন্দারা।

দায়িত্বপালনকারী পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মাহবুবুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রথম দিকে বাসিন্দারা বুঝতে পারেনি লকডাউন মানে কি। তারা ভেবেছিল লকডাউন মানেই আগে যেভাবে চলেছিল সেভাবেই তো হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাইরে যাওয়া-আসা করা যাবে। কিন্তু আমাদের উপর নির্দেশ ছিল যাতে কেউ প্রবেশ কিংবা বের না হতে পারে সেটি নিশ্চিত করা।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রথম দিকে বাসিন্দারা তো বাঁশের খুঁটির নিচ দিয়ে, গেটের উপর দিয়ে বের হতো ঢুকতো। বিষয়গুলো আমাদের ঊর্ধ্বতন স্যারেরা অবগত হয়ে আরও কঠোর হওয়ার নির্দেশ দিলেন। তাই আমরা গতকাল থেকে কেউ ভেতরে প্রবেশ করলে তার নাম-ঠিকানাসহ মোবাইল নাম্বার এন্ট্রি করে রাখছি। এতে করে ভেতরে যাওয়া ওই ব্যক্তি যদি কোনো সেচ্ছাসেবী কিংবা স্বাস্থ্যকর্মী কিংবা সাংবাদিকও হয় তাহলেও বের হওয়ার সময় তার আগে এন্ট্রির সঙ্গে মিল আছে কিনা তা দেখা হয়। একইভাবে বের হওয়া ব্যক্তির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।’

লকডাউন এলাকায় দায়িত্বপালনকারী স্বেচ্ছাসেবী লুৎফর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘শুরুর দিকে বাসিন্দারা কিছুটা উপহাস আর তাচ্ছিল্য হিসেবে নিয়েছিল লকডাউনটাকে। পরে কঠোর হওয়ার কারণেই লকডাউনে সফলতা আসছে। আজ সেভাবে বাসিন্দারা বের হয়নি চুরি করে। তাই আমি মনে করি কঠোর হলে লকডাউনে সফলতা সম্ভব।’

স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফরিদুর রহমান খান ইরান সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা শুরু থেকে বাসিন্দাদের একটা বিষয় নিশ্চিত করতে চেয়েছি যে, তাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় সব কিছু ঘরের সামনেই পাবে। যাতে গেটের বাইরে যেতে না হয়। ধীরে ধীরে বাসিন্দারা সেটি বুঝতে পারছেন এবং লকডাউনে অভ্যস্ত হচ্ছেন বলে মনে করি। শুধুমাত্র অতি প্রয়োজনে বের হওয়াদের তথ্য এন্ট্রি করার পর বের হওয়ার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। প্রয়োজনে কখনও কখনও মনিটরিং করে আমরা জানতে চাচ্ছি যে বের হচ্ছে সে কি আদৌ অতি প্রয়োজন নাকি শুধু প্রয়োজন। এসব করেই আমরা প্রতিনিয়ত নানান অভিজ্ঞতা নোটেড করার চেষ্টা করছি। যেহেতু এটিই প্রথম এবং একমাত্র পরীক্ষামূলক লকডাউন।’

এ বিষয়ে ডিএমপির তেঁজগাও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘লকডাউন বাস্তবায়নে কোন ধরনের গাফলতি বরদাশত করা হবে না বলেই নির্দেশ রয়েছে আমাদের সদস্যদের উপর। এখন পর্যন্ত লকডাউন বাস্তবায়নে যা যা করা দরকার সব ধরণের ব্যবস্থা আমরা গ্রহণ করছি। মোট কথা লকডাউন সফল হতে হবেই। আজকে অনেক শৃঙ্খলা ফিরেছে। আশা করছি সামনের দিনগুলোতে বাসিন্দারা আরও সচেতন হবে।’

করোনা মোকাবিলা টপ নিউজ ডিএনসিসি পূর্ব রাজাবাজার রাজাবাজার লকডাউন স্বাস্থ্য অধিদফতর


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর