‘অপ্রতুল নিরাপত্তা ও নগদ বেতনের কারখানাই তাদের টার্গেট’
১৪ জুন ২০২০ ২২:২০
ঢাকা: ‘অপ্রতুল নিরাপত্তা ও শ্রমিকদের নগদ বেতন হয় এমন পোশাক কারখানাই টার্গেট করে তারা। এরই ধারাবাহিকতায় টার্গেট মিলে যাওয়ায় প্রায় ৪ থেকে ৫ মাস আগে ইনক্রেডিবল ফ্যাশনস লিমিটেডে তারা ডাকাতির পরিকল্পনা করে। তবে কারখানা কর্তৃপক্ষ মোবাইল ব্যাংকিংয়ে বেতন পরিশোধ ও মানি এসকট করে টাকা আনায় দুবার তাদের পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। কিন্তু গত ৭ জুন নিরাপত্তা ব্যবস্থা অপ্রতুলতার সুযোগে প্রতিষ্ঠানটির ৮০ লাখ টাকার বেশি ডাকাতি করতে সফল হয় চক্রটি। পরে এই ডাকাত চক্রের মূলহোতাসহ পাঁচজনকে গ্রেফতারের পর বেরিয়ে আসে সব তথ্য।’- কথাগুলো বলছিলেন র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) সদর দফতরের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লে. কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম।
রোববার (১৪ জুন) বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই ডাকাত চক্রের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন তিনি।
ডাকাত চক্রের গ্রেফতার পাঁচ সদস্য হলেন- মূলহোতা মো. জলিল (৪০), তার সহযোগী মো. রিয়াজ (৩৬), মাহমুদ (৪০), মো. ইসমাইল হোসেন ওরফে মামুন (৪৫) ও মনোরঞ্জন মন্ডল ওরফে বাবু।
সারওয়ার বিন কাশেম বলেন, ‘গাজীপুর কালিয়াকৈরে মাইক্রোবাসে গুলি করে ইনক্রেডিবল ফ্যাশনস লিমিটেড গার্মেন্টসের ৮০ লাখ ২২ হাজার টাকা ডাকাতি করে নিয়ে যায় তারা। পরে এ ঘটনায় মামলা হলে ছায়া তদন্ত শুরু করে র্যাব। এরই ধারাবাহিকতায় গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গত শনিবার (১৩ জুন) রাত দেড়টা থেকে রোববার বেলা ১১ টা পর্যন্ত র্যাব-১ এর একটি দল রাজধানীর মগবাজার, ডেমরা, কড়াইল বস্তি, সাভার এবং আশুলিয়ায় অভিযান চালিয়ে ডাকাতির মূলহোতাসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করে। এ সময় তাদের কাছ থেকে ডাকাতির নগদ ৩০ লাখ ৬৮ হাজার টাকা, ১ হাজার ১০০ ইউএস ডলার, ১টি প্রিমিও প্রাইভেট কার, ৩টি মোটরসাইকেল, ১টি বিদেশি রিভলবার, ১টি বিদেশি পিস্তল, ২১ রাউন্ড গোলাবারুদ, ২টি ম্যাগজিন, ৩টি পাসপোর্ট ও ৩৮টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।’
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘মনোরঞ্জন মন্ডল ওরফে বাবু ডাকাতির ঘটনার দিন বেলা সোয়া ১১টা থেকে সাড়ে ১১টার মধ্যে মোবাইলে জলিলকে জানায় পোশাক কারখানা থেকে টাকা আনতে মাইক্রোবাস ব্যাংকের উদ্দেশে যাত্রা করেছে। গাড়িটি সফিপুর পৌঁছালে সেখানে অপেক্ষমাণ তিনটি মোটরসাইকেল নিরাপদ দূরে থেকে অনুসরণ করতে থাকে। টাকা তোলা শেষে মাইক্রোবাসটি যখন রওনা দেয় তখন ফের অনুসরণ শুরু করতে থাকে তারা। গাড়িটি কালিয়াকৈর থানার খাড়াজোড়া এলাকায় নির্মাণাধীন উড়ালসড়কের দক্ষিণ পাশে পৌঁছা মাত্রই জলিল ও সাগর মোটরসাইকেল নিয়ে মাইক্রোবাসের সামনে যানবাহনটির গতি কমিয়ে দেয়। এ সময় মো. রিয়াজ আরেকটি মোটরসাইকেল দিয়ে মাইক্রোবাসের সামনে কৌশলে ব্যারিকেড দিয়ে ফেলে। ফলে কারখানার বেতন বহন করা মাইক্রোবাসটি সম্পূর্ণ থেমে যায়।’
সারওয়ার বিন কাশেম বলতে থাকেন, ‘পরে ডাকাত দলের সদস্যরা লোহার হাতুড়ি দিয়ে গাড়ির গ্লাস ভেঙে ফেলে এবং পিস্তল দিয়ে মাইক্রোবাসের সামনের গ্লাস লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়ে। এ সময় একটি গুলি ফ্যক্টরির সহকারী মার্চেন্ডাইজার রাজীব মজুমদার শুভর গলায় লাগে এবং সে গুরুতর আঘাত পায়। এই সুযোগে ডাকাত দলের সদস্যরা মাইক্রোবাসের ভেতরে থাকা কারখানার লোকদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ৮০ লাখ ২২ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়ে দ্রুত চলে যায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘ডাকাতির দিন এলোপাতারি গোলাগুলির এক পর্যায়ে তাদের দলের মূলহোতা জলিলের হাতে গুলিবিদ্ধ হয়। পরবর্তী সময়ে সে ঢাকার একটি প্রাইভেট হাসপাতালে দুদিন চিকিৎসাধীন ছিল। ঢাকায় আসার পথেই তারা ডাকাতির টাকা ভাগ করে নেয়। মূলত ৮ থেকে ১০ জনের একটি সিন্ডিকেট ডাকাতির এই ঘটনাটি ঘটিয়েছে। এরা সবাই পেশাদার অপরাধী। তাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। পলাতক অন্যদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। দ্রুতই তাদের গ্রেফতার করা হবে।’