করোনা পরীক্ষা নিয়ে জেকেজি হেলথকেয়ারের প্রতারণার জাল
১৬ জুন ২০২০ ২৩:০৯
ঢাকা: রাজধানী মিরপুর এলাকার বাসিন্দা পারভেজ আহমেদ (ছদ্মনাম)। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। তার বৃদ্ধ মায়ের পর সহধর্মিনীরও জ্বর আসে। একইসঙ্গে ঘ্রাণশক্তি লোপ পায়। নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণের আশঙ্কায় তিনি নমুনা পরীক্ষা করাতে চান। বৃদ্ধ মা’কে নিয়ে বুথে যাওয়া সম্ভব হবে না বলে বাসা থেকে নমুনা সংগ্রহ করানোর বিষয়ে খোঁজখবর করেন। জানতে পারেন, জোবেদা খাতুন সার্বজনীন স্বাস্থ্য সেবা (জেকেজি হেলথকেয়ার) নামের একটি সংগঠন সরকারের অনুমতি নিয়ে করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা করে দিচ্ছে।
পারভেজ যোগাযোগ করে জেকেজি হেলথকেয়ারের সঙ্গে। গত ৭ জুন তাদের পক্ষ থেকে পারভেজের বাসায় নমুনা সংগ্রহের জন্য লোক যায়। দু’জনের নমুনা সংগ্রহ করে ১০ হাজার টাকা বিল নেন তারা। তবে এর জন্য কোনো রশিদ দেননি। তারা জানান, তাদের ওয়েবসাইটে তিন দিনের মধ্যে ফল দেওয়া হবে। এসএমএস দিয়েও সিরিয়াল নম্বর ও কিট নম্বর জানিয়ে ফল জানার জন্য ওয়েবসাইটের ঠিকানা দেওয়া হয় সেই এসএমএসে। তবে তিন দিন নয়, পরীক্ষার ফল পাওয়া যায় ১৫ জুন। তারা দু’জনই পজিটিভ আসেন। তবে ফল পাওয়ার আগেই পারভেজ আহমেদের মা প্রায় সুস্থ, স্ত্রীও সুস্থও হয়ে উঠছেন।
পারভেজ আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, জেকেজি তো সরকারের অনুমতি নিয়ে বুথে নমুনা পরীক্ষা করিয়ে থাকে। কিন্তু তাও যখন তারা বাসায় এসে নমুনা নেবেন বলে জানায়, কিছুটা অবাক হয়েছি। ভেবেছিলাম বিনামূল্যেই পরীক্ষা হবে। পরে টাকা চাইলেও পরীক্ষা করানো দরকার বলে সেটা নিয়ে কোনো প্রশ্ন করিনি। কিন্তু রিপোর্ট পেতে এত সময় লাগলে সেটা মেনে নেওয়া যায় না। যদি এই সময়ের মধ্যে আম্মা বা আমার স্ত্রীকে যদি হাসপাতালে ভর্তি করার প্রয়োজন হতো, তাহলে কী করতাম?
কেবল পারভেজ নয়, এমন আরও কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয়েছে সারাবাংলার, যারা জেকেজি হেলথকেয়ারে করোনা পরীক্ষা করানো নিয়ে নানা অভিযোগ করেছেন। কেউ কেউ অভিযোগ করেছেন, পরীক্ষার ফল জানার জন্যও তাদের কাছ থেকে বিকাশে ৫০০ টাকা করে চাওয়া হয়েছে!
এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সারাবাংলার পক্ষ থেকে অনুসন্ধানে যাওয়া হয় খিলগাঁও গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজে। সেখানে বুথ স্থাপন করে নমুনা সংগ্রহ করছে জেকেজি। সোমবার (১৫ জুন) সকাল ১১টার দিকে গিয়ে দেখা যায়, নমুনা দেওয়ার জন্য লাইনে দাঁড়ানো অনেক মানুষ। নমুনা সংগ্রহের গতিও বেশ ধীর। যারা নমুনা দিতে এসেছেন, তাদের কাছ থেকে জানা যায় নানা ধরনের অনিয়ম-অব্যবস্থাপনার কথা।
অভিযোগের ফিরিস্তি
খিলগাঁও গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের বাইরে রাস্তায় সকাল ১১টার দিকে কথা হয় মঞ্জুর ইসলামের (ছদ্মনাম) সঙ্গে। বলেন, ভোর ৪টায় এসে সিরিয়াল দিয়েছেন। ১ নম্বর সিরিয়ালও পেয়েছেন। কিন্তু নমুনা দিতে পারছেন না। তিনি বলেন, গতকাল নাকি অনেকের নমুনা সংগ্রহ করতে পারেনি। তারা ভেতরে আছে। আমাদের রাস্তাতেই দাঁড় করিয়ে রেখেছে।
আগের নমুনায় পজিটিভ আসা দু’জনকেও দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেল একই এলাকায়। দ্বিতীয়বার নমুনা পরীক্ষা করাতে এসেছেন তারা। তবে তাদেরও অন্যদের সঙ্গেই দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হচ্ছে। সেখানেই নাম-পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে একজন অভিযোগ করে বললেন, নমুনা পরীক্ষার ফল জানতে ফোন দিলে বিকাশ নম্বর দিয়ে ৫০০ টাকা পাঠাতে বলা হয়। সেই টাকা বিকাশ করে তবেই ফল পেয়েছেন তিনি। আরও দু’জন জানালেন, ৬ জুন নমুনা পরীক্ষা করালেও ১৫ জুন পর্যন্ত ফল জানতে পারেননি।
বাসায় নমুনা সংগ্রহে আগ্রহ বেশি
সোমবার জেকেজি’র নমুনা সংগ্রহ বুথে গিয়ে পরিচয় গোপন করে বাসায় গিয়ে নমুনা পরীক্ষা করানোর কথা বলতেই তৎপর হয়ে ওঠেন বুথে থাকা জেকেজি’র দায়িত্বপ্রাপ্তরা। অগ্রাধিকার দিয়ে নিয়ে যান নমুনা সংগ্রহ বুথে। এই প্রতিবেদক জানান, তার বাসার পাঁচ জনের নমুনা পরীক্ষা করাতে হবে। তারা জানায়, জনপ্রতি পাঁচ হাজার টাকা করে খরচ পড়বে। প্রতিবেদক রাজি হলে মোবাইল নম্বর ও নাম লিখে রাখা হয়। বলা হয়, আজকের মধ্যেই আপনার নমুনা পরীক্ষা করানো হবে। আমাদের অফিস থেকে ফোন দেওয়া হবে। প্রতিবেদক এই ব্যক্তির নম্বর নিয়ে রাখেন ও সব কথাবার্তা রেকর্ড করে রাখেন।
দুপুর ৩টা ৩৩ মিনিটে ফোন করেন মৌ নামে একজন। তিনি বলেন, ‘আপনার বাসা থেকে নমুনা সংগ্রহের কথা ছিল। আজকেই কি নমুনা দেবেন?’ প্রতিবেদক হ্যাঁ বলার পরে তিনি জানান, প্রতি নমুনা পরীক্ষায় পাঁচ হাজার টাকা করে খরচ হবে। নমুনা পরীক্ষার ফল প্রকাশ করতে তিন থেকে ছয় কর্মদিবস সময় লাগতে পারে। নমুনা পরীক্ষা নেওয়ার পর ফোন নম্বর ও জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) নম্বর প্রয়োজন হবে।
এনআইডি কেন লাগবে— এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমাদের অ্যাপের জন্য এনআইডি দিতে হয়। কারণ আমাদের ল্যাবে তো আপনাদের ডিটেইলসটা থাকে। যদি কোনো কারণে কোনো সমস্যা দেখা দেয়, সে পরিস্থিতির জন্য এনআইডি রাখা হয়। সরকারের পক্ষ থেকে ওটা দেখা হয়। তিনি জানান, তাদের টিম নমুনা সংগ্রহের জন্য রেডি হয়ে গেছে। এ-ও জানান, নমুনা সংগ্রহের পর টাকা নিলেও তার জন্য কোনো রশিদ দেওয়া হয় না।
পরীক্ষার ফল ‘ভিন্ন’ পদ্ধতিতে
টাকা দিয়ে নমুনা পরীক্ষা করালেও জেকেজি হেলথকেয়ার থেকে ফল পেতে দীর্ঘ সময় লাগে। ফল প্রকাশেও তাদের পদ্ধতি ভিন্ন। সাধারণত সরকারিভাবে যেসব নমুনা পরীক্ষা করা হয়, সেগুলোর ফল জানানো হয় স্বাস্থ্য অধিদফতরের ম্যানজমেন্ট ইনফরমেশন সেন্টারের (এমআইএস) মাধ্যমে। সেখান থেকেই এসএমএসের মাধ্যমে নমুনা পরীক্ষার ফল চলে যায় একেকজনের কাছে। সরকারি বা বেসরকারি হাসপাতাল বা প্রতিষ্ঠানেও এই ফল চলে যায়। কিন্তু জেকেজির নমুনাগুলো এমআইএস বিভাগে যায় না। তাই অধিদফতর নয়, জেকেজি নিজে তাদের সংগ্রহ করা নমুনার ফল জানিয়ে থাকে। সেই সুযোগেই তারা ফলপ্রকাশের জন্যও কখনো কখনো বাড়তি টাকা দাবি করে। আর ফল জানাতে দেরি হলেও কোনো জবাবদিহিতা নেই তাদের।
এপ্রিলে নমুনা সংগ্রহ শুরু
জানা যায়, এপ্রিল মাসে বাংলাদেশে নভেল করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) নমুনা পরীক্ষার জন্য অনুমতি পায় জোবেদা খাতুন সার্বজনীন স্বাস্থ্য সেবা বা জেকেজি হেলথকেয়ার। নমুনা পরীক্ষায় টেকনোলজিস্ট ও স্বেচ্ছাসেবকদের প্রশিক্ষণের জন্য তাদের রাজধানীর তিতুমীর কলেজে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপনের জায়গা করে দেওয়া হয়। ১২ এপ্রিল স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ জেকেজির প্রস্তুতি দেখতেও যান তিতুমীর কলেজে।
ওই সময় জেকেজি হেলথকেয়ারের স্টাফ প্রজেক্ট ডেভেলপমেন্ট উইংয়ের প্রধান সাঈদ চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, দেশের আটটি বিভাগে মোট ৩২০টি নমুনা সংগ্রহ বুথ স্থাপন করার উদ্যোগ নিয়েছে তারা। পরে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, ৪৪টি নমুনা সংগ্রহ কেন্দ্র স্থাপন করতে তারা। তবে ১৫ জুন পর্যন্ত তাদের ওয়েবসাইটে সাতটি স্থানে বুথ থাকার কথা উল্লেখ আছে।
অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা
স্বাস্থ্য অধিদফতরের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জেকেজি হেলথকেয়ার করোনা পরীক্ষার জন্য যেসব নমুনা সংগ্রহ করে, সেগুলো সরকারি একটি ল্যাবে পরীক্ষা করানো হয়। সরকারি ব্যবস্থাপনার কারণে ল্যাব থেকে কোনো খরচ নেওয়া হয় না। জেকেজি’র বুথগুলোতে যারা কাজ করেন, তাদের সুরক্ষা সামগ্রীও দেওয়া হয় স্বাস্থ্য অধিদফতরের পক্ষ থেকেই। তবে অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্য বলছে, জেকেজি হেলথকেয়ারের কর্মীরা বাসায় গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করছে, যার জন্য বড় অঙ্কের টাকাও নিচ্ছে। অথচ তাদের বাসায় গিয়ে নমুনা সংগ্রহের কোনো অনুমতিই নেই।
এদিকে, এপ্রিল মাসে দিকে সারাদেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতে পিপিই’র ব্যাপক সংকট ছিল। ওই সময়ও জেকেজি’র কয়েকটি বুথের টেকনোলজিস্ট ও সংশ্লিষ্টদের জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে দেওয়া হয়েছে কয়েক হাজার পিপিই! ওই সময় সরকারি হাসপাতালগুলোও পিপিই চেয়ে তালিকা পাঠালে সংকটের কারণে তাদের কাটছাঁট করে সরবরাহ করা হতো। অথচ কোনো যাচাই-বাছাই ছাড়াই জেকেজি হেলথকেয়ারকে একাধিকবার চাহিদামতো পিপিই ও অন্যান্য সুরক্ষা সরঘঞ্জাম সরবরাহ করা হয়েছে।
নমুনা পরীক্ষার ফলেও জালিয়াতির অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। দেরি করে রিপোর্ট দেওয়ার অভিযোগের পাশাপাশি টাকার বিনিময়ে নমুনা পরীক্ষার ফল দেওয়ার অভিযোগের প্রমাণও আছে এই প্রতিবেদকের কাছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, কেবল টাকা নিয়ে নমুনা পরীক্ষা করানোই নয়, বরং এই নমুনা পরীক্ষার জন্য প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে ল্যাব কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও বচসা হয়। সাতটি বুথ থেকে যে পরিমাণ নমুনা দেওয়ার কথা, তার বেশিই দেওয়া হয়ে থাকে ল্যাবে। এসব বিষয় নিয়ে ল্যাবসহ স্বাস্থ্য অধিদফতরেও একাধিকবার আলোচনা হয়েছে। জানা গেছে, জেকেজি হেলথকেয়ারের নমুনা পরীক্ষাসহ তাদের জন্য পিপিই বিতরণের পক্ষে সুপারিশ রয়েছে খোদ খোদ স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকের।
যা বলছেন জেকেজি হেলথকেয়ারের কর্তাব্যক্তিরা
করোনা পরীক্ষার নমুনা সংগ্রহ থেকে রিপোর্ট জানানো পর্যন্ত বিভিন্ন অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা সম্পর্কে জানতে জেকেজি হেলথকেয়ারের চেয়ারম্যান সাবরিনা আরিফ চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় সারাবাংলার পক্ষ থেকে। বাসায় গিয়ে নমুনা সংগ্রহের অনুমতি আছে কি না— জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। আপনি হটলাইনে যোগাযোগ করুন।’ বলেই ফোন কেটে দেন তিনি। এরপর একাধিকবার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
জেকেজি’র হটলাইন নম্বরে (০১৮৪৪৪৫৪৫৫৫) ফোন করেও এ বিষয়ে কিছু জানা সম্ভব হয়নি। সোমবার দিনের বিভিন্ন সময় একাধিকবার ফোন দেওয়া হয় জেকেজি কোভিড টেস্টিং প্রজেক্ট কর্মকর্তা সাঈদ চৌধুরীর সঙ্গে। তিনি ফোন ধরেননি। এসএমএস দিয়েও উত্তর মেলেনি। মঙ্গলবার ফোন ধরেন তিনি। শুরুতে সরাসরি বাসায় থেকে নমুনা সংগ্রহের কথা অস্বীকার করেন। বলেন, ‘আমরা বাসায় গিয়ে নমুনা পরীক্ষা করাই না।’
এরকম অভিযোগের তথ্য-প্রমাণ রয়েছে এবং এ প্রতিবেদক নিজেও আগ্রহ জানালে তার সঙ্গেও যোগাযোগ করে বাসায় গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করা হবে বলে জানানো হয়েছে— এ তথ্য দিলে সাঈদ চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের কাছে অভিযোগ এসেছে এ বিষয়ে। আমরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি।’ নমুনা পরীক্ষার জন্য জনপ্রতি পাঁচ হাজার টাকা নেওয়ার অভিযোগ সম্পর্কেও কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি।
নমুনা পরীক্ষার ফল পেতে টাকা দিতে হয়— এমন অভিযোগের জবাবে তিনি বলেন, ‘না, এটা আমাদের সফটওয়ারের মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হয়।’ এ অভিযোগেরও প্রমাণ আছে জানালে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়েও আমাদের কাছে অভিযোগ এসেছে। আমরা এটাও তদন্ত করে দেখছি।’
সরকারিভাবে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মাধ্যমে নমুনা পরীক্ষার ফল না পাঠিয়ে নিজেদের তত্ত্বাবধানে পাঠানো হয় কেন— এমন প্রশ্নের জবাবে সাঈদ চৌধুরী বলেন, ‘এটা আসলে আমাদের সফটওয়ারের একটা বিষয়। তাও ফলাফল সরকারিভাবেই পাঠানো হয়ে থাকে।’ ল্যাবে চাপ প্রয়োগ করে এমআইএসে না দিয়ে ফল সরাসরি জেকেজি’তে পাঠাতে বাধ্য করা হয়েছে কি না— এমন প্রশ্নের কোনো উত্তর দেননি তিনি।
সাঈদ চৌধুরী জানান, তাদের ৪৪টি বুথে নমুনা সংগ্রহ চলছে। এই প্রতিবেদক সাতটির বেশি বুথ পাননি জানালে তিনি বলেন, এলাকাভিত্তিক আরও বুথ আছে আমাদের। আমরা দ্রুতই এ বিষয়ে জানাব।
কী বলছে স্বাস্থ্য অধিদফতর
নিজস্ব পিসিআর মেশিন না থাকায় সরকারি ল্যাবে নমুনা পরীক্ষা করানো সত্ত্বেও টাকা নেওয়া, অনুমতি না থাকলেও বাসায় গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করা, ফল জানানোর জন্য টাকা নেওয়া— জেকেজি’র বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হয় স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানার কাছে। সোমবার তার কার্যালয়ে গিয়ে দেখা করতে চাইলেও তিনি দেখা করেননি। সোমবার ও মঙ্গলবার বিভিন্ন সময় তাকে ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (এমআইএস) ডা. হাবিবুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘এটা সম্পূর্ণ অবৈধ। বাসায় গিয়েও তাদের নমুনা পরীক্ষা করানোর কোনো অনুমতি নেই। যদি এটা করে থাকে, তবে সেটা অনৈতিক। নমুনা পরীক্ষার ফলাফল জানাতে ৫০০ টাকা নেওয়াটাও অবৈধ। যদি এটার কোনো প্রমাণপত্র থাকে, তবে এটা আমাকে দেওয়া হলে আমি ডিজি মহোদয়কে জানাব।’
এপ্রিলে কোনো হাসপাতাল বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের প্রস্তুতি দেখতে না গেলেও জেকেজি হেলথ কেয়ারের প্রস্তুতি দেখতে যাওয়া এবং তাদের বাড়তি নমুনা পরীক্ষা ও চাহিদা মোতাবেক পিপিই সরবরাহ করার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকের সুপারিশ রয়েছে— এ বিষয়ে জানতে মহাপরিচালকের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। সোমবার তার কার্যালয়ে গেলে জনসংযোগ কর্মকর্তা আক্কাস আলী শেখ জানান, তিনি মিটিংয়ে ব্যস্ত রয়েছেন। তার কার্যালয়ে প্রায় ৪ ঘণ্টা অপেক্ষা করেও তার সঙ্গে দেখা করা যায়নি। পরে সোমবার তাকে একাধিকবার ফোন দিলেও ফোন রিসিভ করেননি। মঙ্গলবার ফোন করলে তিনি ব্যস্ত আছেন জানিয়ে এসএমএস দেন। পরে তার মোবাইল থেকে একটি কল এলেও রিসিভ করার পর তিনি কোনো কথা বলেননি। ফোনকল চালু অবস্থাতেই তিনি অন্য কারও সঙ্গে কথা বলছিলেন।
মঙ্গলবার বিকেলে এ প্রতিবেদন লেখার সময়ও প্রতিবেদকের ফোন আসে জেকেজি হেলথকেয়ারের পক্ষ থেকে। বলা হয়, ‘স্যার, আপনার বাসার ঠিকানাটা একটু বলুন। আমরা নমুনা সংগ্রহ করতে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত।’
দেশে করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার পর থেকেই নমুনা পরীক্ষা বাড়ানোর কথা বলে আসছেন বিশেষজ্ঞরা। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় বেসরকারি দুই প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয় নমুনা সংগ্রহের অনুমতি। তার মধ্যে একটি প্রতিষ্ঠান ওভাল গ্রুপের প্রতিষ্ঠান জোবেদা খাতুন সার্বজনীন স্বাস্থ্য সেবা তথা ‘জেকেজি হেলথকেয়ার’। প্রতিদিন নির্দিষ্ট পরিমাণ নমুনা সংগ্রহের অনুমতি রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির এবং সেটি করার কথা বিনামূল্যে। তবে সারাবাংলার অনুসন্ধানে উঠে এসেছে— প্রতিষ্ঠানটি নমুনা সংগ্রহ নিয়ে নানা ধরনের জালিয়াতিতে যুক্ত। জেকেজি হেলকেয়ারের এমন সব অনিয়ম-জালিয়াতি নিয়ে সারাবাংলার ধারাবাহিক প্রতিবেদনের এটি প্রথম পর্ব।
করোনা পরীক্ষা করোনা পরীক্ষায় প্রতারণা জেকেজি হেলথকেয়ার নমুনা সংগ্রহ নমুনা সংগ্রহ বুথ বাসায় গিয়ে নমুনা সংগ্রহ রিপোর্ট পেতে টাকা স্বাস্থ্য অধিদফতর