করোনা মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী সফল হবেন— বিদিশা
২০ জুন ২০২০ ১৯:১৭
ঢাকা: বিদিশা। জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রতিষ্ঠাতা, প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের সাবেক স্ত্রী। এ পরিচয়টাই তার শেষ কথা নয়। তিনি আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন একজন ফ্যাশন ডিজাইনার। প্রখ্যাত কবি আবু বকর সিদ্দিকের তনায়া। সর্বোপরি বিদিশা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এবং একজন সফল উদ্যোক্তা।
শনিবার (২০ জুন) বিকেলে ‘সারাবাংলা ফোকাস’ অনুষ্ঠানে অনলাইনে যুক্ত হয়েছিলেন বিদিশা। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী কথা বলেছেন বিভিন্ন বিষয় নিয়ে। সেখানে যেমন ছিল তার শৈশব, কৈশোর, বেড়ে ওঠা, শিক্ষাজীবন, কর্মজীবন, প্রেম, বিয়ে, সংসার জীবন; তেমনি ছিল বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিশেষ করে প্রয়াত সাবেক স্বামী হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের হাতে গড়া দল জাতীয় পার্টির রাজনীতিতে তার অবস্থান, ভূমিকা এবং এ দলটি নিয়ে তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা। সর্বোপরি জাতীয় রাজনীতি এবং বর্তমান করোনা পরিস্থিতি নিয়ে তার ব্যক্তিগত মূল্যায়ন।
সারাবাংলা ডটনেটের স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট এমএকে জিলানীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সারাবাংলা ফোকাসে বিদিশা এরশাদ করোনাকালে নেওয়া সকরকারের উদ্যোগে সন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের সরকার প্রধান যেভাবে করোনা সংকট মোকাবিলা করছেন তাতে আমি আশাবাদী। এ সংকট মোকাবিলায় তিনি সফল হবেন। তিনি হাল ছেড়ে দেওয়ার মতো নেতা নন। বিশ্বের অন্যান্য সফল নেতার মতোই তিনি সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।’
তিনি বলেন, ‘জার্মানির চ্যান্সেলর, নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী যেমনভাবে সফল হয়েছেন। তাদের দেশকে যেমনভাবে করোনামুক্ত করেছেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রীও তেমনভাবে সফল হবে— এ ব্যাপারে আমি আশাবাদি। কারণ, তিনি অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে এবং সাফল্যের সঙ্গে বিষয়টি হ্যান্ডেল করছেন। তার ওপর আমাদের আস্থা আছে।’
‘তবে শুধু প্রসংশা করব না। সমালোচনারও জায়গা আছে। এবারের বাজেটে স্বাস্থ্যখাতে যে বরাদ্দ, সেটা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল মনে হচ্ছে। তাছাড়া করোনা ক্রাইসিসে প্রমাণ হয়েছে আমাদের স্বাস্থ্যখাত কতটা ভঙ্গুর। এদিকে আমাদের নজর দিতে হবে’— বলেন বিদিশা।
গোটা পৃথিবীর রাজনীতিতে এখন মন্দা চলছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘শুধু জাতীয় পার্টি নয়, সারা পৃথিবীতে রাজনীতির অবস্থা খুব খারাপ। তারপরও জাতীয় পার্টি, বিএনপি, আওয়ামী লীগ তাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করছে এই করোনাকালে রাজনৈতিক কাঠামোর মধ্যে থেকে দেশ-জাতি মানুষের জন্য কিছু করার। তাছাড়া করোনা এমন একটি রোগ, যেটা বয়স্ক মানুষের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকির, তাই হয়তো রাজনৈতিক দলের সিনিয়র নেতারা মাঠে নেমে কাজ করতে পারছেন না। তবে দূর থেকে দলের নেতাকর্মীদের প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দিচ্ছেন। আমাদের দলের চেয়ারম্যান নিজেও সেদিন মাস্ক বিতরণ করেছেন।’
হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের মৃত্যুর এক বছরের মাথায় জাপার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে বিদিশা বলেন, ‘তিনি (এরশাদ) তো কেবল এক বছর হলো প্রয়াত হয়েছেন। এই এক বছর আমাদের ওপর দিয়ে অনেক ঝড়-ঝাপটা বয়ে গেছে। সুতরাং দল যে খুব ভালো মতো চালানো সম্ভব হয়েছে সেটা নয়, আবার খুব খারাপ চলেছে সেটাও নয়। সব মিলে মোটামুটি আছে বলা যায়।’
‘তাছাড়া জাতীয় পার্টি তো রংপুর বেজড। রংপুরের মানুষ অত্যন্ত সহজ-সরল। তারা এরশাদ সাহেবকে খুব ভালোবাসতেন। এখনও তারা এরশাদ সাহেবকে ভালোবাসেন। যাকে বলে নিঃস্বার্থ ভালোবাসা। একজন মা যেমন তার সন্তানকে ভালোবাসে, রংপুরের মানুষও তেমনিভাবে এরশাদ সাহেবকে নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসে। মৃত্যুর পরও তাদের সেই ভালোবাসা এতটুকু কমেনি। রংপুরের অনেক মানুষ এখনও আমাকে ফোন দেয়। এরিকের (বিদিশি-এরশাদের পুত্র) খোঁজ-খবর নেয়’— জানান বিদিশা।
তিনি বলেন, ‘আবার বিপরীত চরিত্রের লোকও আছে। এরিকের বাবা যাদেরকে এমপি-মন্ত্রী বানিয়েছেন তারা কেউ এখন আর এরিকের খবর নেয় না। ওর জন্ম দিনেও একটা ফোন দেয়নি, উইশ করতে আসেনি। অথচ এরশাদ সাহেব বেঁচে থাকা অবস্থায় এরিকের জন্মদিনে তারা এসে ভিড় করত। সুতরাং সবরকমই আছে। এর মধ্য দিয়ে যেতে হবে।’
বিদিশা বলেন, ‘সবচেয়ে আশার জায়গা হলো- এরিক খুব ভালো করে বুঝতে পারছে বিষয়গুলো। আমাকে আর বোঝাতে হয় না বিষয়গুলো। তাছাড়া অনেক এক্স আর্মি অফিসার এরিকের খবর নেন। ওর জন্মদিনে দেশের অনেক বড় বড় শিল্পী এসেছিল। কাউকে দাওয়াত করতে হয়নি, ভালোবাসার টানেই তারা এসেছে। বিষয়টি দেখে আমার চোখ দিয়ে পানি এসেছে। এত লোক এরিককে ভালোবাসে।’
তিনি বলেন, ‘নোংরামি যেটা আছে, সেটা রাজনীতিতে। আর অবশ্যই সেটা জাতীয় পার্টিতে। কারণ, অন্য পার্টির কাছে তো আমরা কিছু আশা করি না। আশা করেছিলাম জাতীয় পার্টির কাছে। এরশাদ সাহেব এই পার্টির যাদের এমপি-মন্ত্রী বানিয়েছেন, তারা এরিকের খোঁজ-খবর নেবেন— এটা তো আমরা আশা করতেই পারি।’
নিজের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ সম্পর্কে বিদিশা বলেন, ‘জাতীয় পার্টি তো রংপুর কেন্দ্রিক। সুতরাং রংপুরের মানুষ যদি কখনও মনে করে আমাকে জাতীয় পার্টিতে প্রয়োজন আছে, তখন আমি দেখব। রাজনীতি তো হুট করে হয় না। প্রস্তুতির প্রয়োজন আছে। সাধারণ মানুষের সমর্থন-ভালোবাসার প্রয়োজন আছে। সুতরাং রাজনীতির ব্যাপারে সময় হলেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেব।’
হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের শেষ দিনগুলো সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘উনার সঙ্গে আমার বিচ্ছেদটা রাজনৈতিক কারণে হয়েছিল। মনের বিচ্ছেদ কখনও হয়নি। মৃত্যুর আগে হাসপাতালে ডেকে নিয়ে উনি চল্লিশ মিনিট আমার হাত ধরে বসেছিলেন। মাপ চেয়েছেন। সুতরাং আমি মনে করি তিনি আমাদের থেকে একেবারে চলে যাননি। এখনও আমাদের মাঝে আছেন।’
এরশাদের মৃত্যুর পরের মুহূর্তগুলোর কথা উল্লেখ করে বিদিশা বলেন, ‘অমন একজন মানুষের মৃত্যুর খবর অবশ্যই কষ্টের, বেদনার। মৃত্যুর খবরটা আমি আজমীর শরিফ থেকে শুনেছিলাম। তখন আমার প্রথম চিন্তা ছিল এরিক কেমন আছে, কোথায় আছে? ও তো বিশেষ শিশু। এরিকের কথা ভাবতে ভাবতেই কষ্টের সময়গুলো পার করতে হয়েছে।’
বিয়ের আইনি বিচ্ছেদের পরও এরশাদের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘অসুস্থতার সময় আমি তার কাছে যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমাকে যেতে দেওয়া হয়নি। আমাদের মানসিক বিচ্ছেদ কখনও হয়নি। উনার (এরশাদ) আবদারগুলো আমাকেই পূরণ করতে হতো। এরিক আমার কাছে আসত। যাওয়ার সময় বলত, ড্যাডির জন্য খাবার নিয়ে যাব। আমি খাবার রান্না করে দিতাম। ভাপা পিঠা, তালের পিঠা খুব পছন্দ করতেন, সেগুলো আমি নিজে হাতে বানিয়ে দিতাম।’
‘আমার কিন্তু আরেকটা মেয়ে আছে। ওর নাম মায়া। এক মাস বয়সে ওকে আমি দত্তক নিয়েছিলাম। ও এখন আমার সাথেই আছে। করোনা সংকট কেটে গেলে ও বৃটেনে গিয়ে ওর ভাই-বোনের কাছে থেকে লেখা-পড়া করবে’— বলেন বিদিশা এরশাদ।
বাবা আবু বকর সিদ্দিকের সঙ্গে ছোটবেলার স্মৃতি রোমন্থন করে তিনি বলেন, ‘আমার মানসপট গড়ে উঠেছে বাবার সংস্পর্শে। বাবার সঙ্গে আমি অনেক ঘুরেছি। বিশেষ করে ভারতের বিভিন্ন জায়াগায় বাবার সঙ্গে গিয়েছি। দেখেছি সেখানে বাবা কত জনপ্রিয়। কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়, বিষ্ণু দে, শিল্পী হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে আমাকে পরিচয় করে দিয়েছেন বাবা। আমার প্রথম হারমোনিয়াম কিনে দিয়েছেন হেমন্ত মুখার্জি।’
ক্যারিয়ার সম্পর্কে বিদিশা বলেন, ‘সিঙ্গাপুরের লাসাল ইন্টারন্যাশনাল ফ্যাশন ইনস্টিটিউশনে লেখাপড়া করেছি। এছাড়া ইতালি, ফ্যান্স, জার্মানসহ বিভিন্ন দেশে আমাকে যেতে হয়েছে লেখাপড়ার জন্য। কারণ, ফ্যাশন শুধু আঁকিবুকির জিনিস না। এটা নিয়ে রিসার্স করতে হয়।’
সবাইকে নিজের ওপর আস্থা রাখার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘সবাইকে তার নিজের হাত দুটির ওপর ভরসা রাখা উচিত। তাহলেই সে তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবে। নিজের একটা অবস্থান তৈরি করতে পারবে।’
করোনা মোকাবিলা জাতীয় পার্টি প্রধানমন্ত্রী বিদিশা সারাবাংলা ফোকাস হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ