দেশে ঝুঁপড়ি ঘর আড়াই লাখ, করোনায় বাড়ার আশঙ্কা
২০ জুন ২০২০ ২৩:৪৬
ঢাকা: পৃথিবীতে কোভিড-১৯ পরিস্থিতি ব্যাপক মহামারি আকার ধারণ করেছে। এতে বিশ্বের প্রায় সব দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি তলানিতে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে এই অবস্থায়র মধ্যেও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) বলছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশের সাড়ে ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হতে পারে। আবার প্রস্তাবিত বাজেটে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যই নির্ধারণ করেছেন ৮ দশমিক ২ শতাংশ। এদিকে গত ১০ বছরে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তনের কথা বলা হলেও মানুষের আবাসনে রয়েছে ব্যাপক বৈষম্য। বলতে গেলে এখনও অনেক পরিবার নাজুক আবাসন ব্যবস্থার মধ্যে কোন রকমে দিনাতিপাত করছে। এখনও দেশে প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার ঝুঁপড়ি ঘরই রয়েছে, যা মোট আবাসিক বাড়ির শূন্য দশমিক ৬৭ শতাংশ। আর করোনা দীর্ঘায়িত হলে এই ধরণের ঘরের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
সম্প্রতি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ‘সার্ভে অন অকুপেইড রেসিডেনসিয়াল হাউজেজ অ্যান্ড রিয়েল স্টেট সার্ভিসেস’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে দেখা গেছে, দেশে ঝুঁপড়ি ঘর রয়েছে দুই লাখ ৫৩ হাজার ৩৫টি। এর মধ্যে গ্রামে যেসব বাড়ি রয়েছে তার মধ্যে শূন্য দশমিক ৬০ শতাংশ ঝুঁপড়ি ঘর। আর সিটি করপোরেশন এলাকায় ঝুঁপড়ি ঘরে সংখ্যা শূন্য দশমিক ৭১ শতাংশ। এছাড়া পৌর এলাকায় শূন্য দশমিক ৪২ শতাংশ ও উপজেলা পর্যায়ে তিন দশমিক ৩৯ শতাংশ। সংখ্যার হিসেবে গ্রামে ঝুঁপড়ি ঘর রয়েছে এক লাখ ৭৩ হাজার ৪৯টি, সিটি করপোরেশন এলাকায় ২১ হাজার ৩৭৭টি, পৌরসভায় ১৯ হাজার ৫৩৬টি এবং উপজেলায় ৩৯ হাজার ৭৩টি।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর উপ-মহাপরিচালক সুব্রদ ঘোষ সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা যেসব জরিপ করি সেগুলোর প্রাথমিক তথ্য মাঠ পর্যায় থেকে সংগ্রহ করা হয়। সুতরাং এসব জরিপ অথেনটিক ও বাস্তবতসম্মত।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘হঠাৎ করে করোনা সব কিছুই এলোমেলো করে দিয়েছে। এর প্রভাবে ধনীরা উচ্চ মধ্যবিত্ত হচ্ছে, উচ্চ মধ্যবিত্তরা নিম্ম মধ্যবিত্ত ও গরিবে পরিণত হচ্ছে। আর গরিবরা নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে। সুতরাং করোনা দীর্ঘায়িত হলে নতুন জরিপে দেশে ঝঁপড়ি ঘরের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
বিবিএস’র প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, দেশে মোট বাড়ির সংখ্যা তিন কোটি ৭৮ লাখ ৪০ হাজার। এর মধ্যে পাঁচতলার উপরে বহুতল ভবনের সংখ্যা ১৮ লাখ ৫০ হাজার। পাঁচতলার নিচে বাড়ি রয়েছে ৩৭ লাখ ৯০ হাজার। সেমি পাকা বাড়ি রয়েছে এক কোটি ১৮ লাখ ৬০ হাজার। আর কাঁচা বাড়ি দুই কোটি নয় হাজার।
পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম সারাবাংলাকে বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হলে নতুন করে কিছু মানুষ দরিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যেতে পারে। ফলে দেশে ঝুঁপড়ি ঘরের সংখ্যা বেড়ে যাওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। এখনও আমাদের দেশে প্রায় দুই কোটি মানুষ হতদরিদ্র। সেক্ষেত্রে এরকম আড়াইলাখের মতো ঝুঁপড়ি ঘর থাকাটা স্বাভাবিক। তবে করোনা মোকাবিলায় ইতোমধ্যেই সরকার নানা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় নতুন করে করোনার অভিঘাতের বিষয়টি যোগ হচ্ছে। তাছাড়া আগে থেকেই দারিদ্র্য নিরসনকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। দরিদ্র মানুষের সংখ্যা কমে আসলে তখন তাদের আবাসিক অবস্থাও বদলে যাবে।’
প্রতিবেদনে দেখা যায়, দেশে নিজের বাড়ি আছে (বাড়ির মালিক) তিন কোটি ২৪ লাখ ৬৯ হাজার পরিবারের, যা মোট বাড়ির ৮৫ দশমিক ৮২ শতাংশ। এছাড়া ভাড়া বাড়িতে থাকেন ৪৬ লাখ ২০ হাজার পরিবার, যা মোট বাড়ির ১২ দশমিক ২১ শতাংশ। ভাড়া ছাড়াই বাড়িতে বসবাস করেন সাড়ে ছয় লাখ বা এক দশমিক ৭১ শতাংশ পরিবার। এছাড়া অন্যান্যভাবে (নিজের নয়, ভাড়াও নয়) বাড়িতে থাকে এক লাখ পরিবার।
বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকনোমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘এখনও দেশে প্রায় চার কোটি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। যতক্ষণ না তাদের সঞ্চয় সৃষ্টি হবে তারা নিজের অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে পারবে না। আবার তারা আবাসিক অবস্থার উন্নতির জন্য ঋণও পাবে কি না তাও নিশ্চিত নয়। তাই জনসংখ্যার একটা অংশ মানবেতর জীবনের দিকেই যাবে। চলমান করোনা মহামারিতে অবশ্যই দরিদ্র্য লোকের সংখ্যা বাড়বে। এ কারণে ঝুঁপড়ি ঘরের সংখ্যাও বাড়তে পারে।’