Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পাহাড় থেকে বসতি উচ্ছেদে বাধা, ১০ জনকে আটকের পর কারাদণ্ড


২৪ জুন ২০২০ ১৯:৫৮

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম নগরীতে পাহাড় থেকে ঝুঁকিপূর্ণ বসতি উচ্ছেদে গিয়ে দখলদারদের বাধার মুখে পড়ে ম্যাজিস্ট্রেট-পুলিশসহ প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এসময় তাদের ওপর হামলার ঘটনাও ঘটে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ১০ জনকে আটক করে। জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেট তাৎক্ষণিকভাবে তাদের সাতদিনের কারাদণ্ড দিয়ে জেলে পাঠিয়েছেন।

বুধবার (২৪ জুন) সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত নগরীর বায়েজিদ-ফৌজদারহাট লিংক রোডের দুপাশে প্রায় সাত কিলোমিটার এলাকায় ১৬টি পাহাড়ে উচ্ছেদ অভিযান চালান জেলা প্রশাসনের পাঁচ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।

অভিযানে ছিলেন সীতাকুণ্ডের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিল্টন রায়, জেলা প্রশাসনের কাট্টলী সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. তৌহিদুল ইসলাম, আগ্রাবাদ সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবদুস সামাস শিকদার, চাঁন্দগাও সার্কেলের সহকারী কমিশনার মামনুন আহমেদ অনীক এবং হাটহাজারী উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. শরীফ হোসেন। তাদের সঙ্গে নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (বায়েজিদ বোস্তামি জোন) পরিত্রাণ তালুকদার এবং ফায়ার সার্ভিস, রেলওয়ে, পরিবেশ অধিদফতরসহ প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ছিলেন।

সহকারী কমিশনার তৌহিদুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘ভারি বৃষ্টিতে পাহাড় ধসের ঝুঁকি এড়াতে আমরা উচ্ছেদ অভিযান চালিয়েছি। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতিতে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে বিভিন্ন সংস্থা এবং ব্যক্তি উদ্যোগে সাইনবোর্ড লাগিয়ে পাহাড়ের জায়গা দখল করে নতুন বসতি স্থাপন করেছে। গত এপ্রিল-মে মাসে রেলওয়ের জমি ও সরকারি খাস জমিতে পাহাড় কেটে গড়ে তোলা হয়েছে বসতি, যেগুলো খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। ১৬টি পাহাড় থেকে ৩৫০টি স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে।‘

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ‘অভিযানের সময় একটি সাংবাদিক সংগঠনের নামে দখল করা জায়গা উদ্ধার করা হয়। ওই সংগঠনের সাইনবোর্ডসহ বিভিন্ন সংগঠনের নামে লাগানো ব্যানার-সাইনবোর্ড উচ্ছেদ করা হয়। পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের সদস্যদের বিরুদ্ধেও পাহাড় কেটে বসতি নির্মাণের অভিযোগ পায় প্রশাসন। তবে সরাসরি কোনো সাইনবোর্ড দেখতে পাননি প্রশাসনের কর্মকর্তারা।’

এদিকে অভিযানের শুরু থেকেই প্রশাসনের বহরকে পড়তে হয়েছে নানামুখী বাধার মুখে। রাজনৈতিক ব্যানার দিয়ে বাঁশের ব্যারিকেডের মাধ্যমে আটকানোর চেষ্টা হয়েছে একাধিকবার। এমনকি অবৈধ বসতি স্থাপন করা একদল লোক ভূমি অফিসের দুই কর্মচারীকে মারধর করে। বাধা পেয়ে বিভিন্ন পাহাড় থেকে প্রথমে অভিযানকারীদের সরেও আসতে হয়। ব্যাপক উত্তেজনার মুখে অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে লাঠিচার্জ করে তাদের ছত্রভঙ্গ দেয়।

নগর পুলিশের বায়েজিদ বোস্তামি জোনের সহকারী কমিশনার পরিত্রাণ তালুকদার সারাবাংলাকে বলেন, ‘কিছুটা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পর আমরা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি। এসময় ১০ জনকে আটক করা হয়েছে। পরে তাদের ভ্রাম্যমাণ আদালতের কাছে হাজির করা হয়।’

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল জানান, দায়িত্ব পালনের সময় সরকারি কর্মকর্তাদের শারীরিকভাবে আক্রমণ করায় ১০ জনকে সাতদিন করে কারাদণ্ড দিয়ে জেলে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া অবৈধ বসতি থেকে ৩০টি বিদ্যুতের মিটার জব্দ করা হয়েছে। মালিকানাবিহীন জমিতে কিভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হল সেটা তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এদিকে পাহাড় ও পরিবেশ রক্ষায় সোচ্চার সংগঠন পিপলস ভয়েসের সভাপতি শরীফ চৌহান এক বিবৃতিতে বলেছেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণের মধ্যে এপ্রিল ও মে মাসে চট্টগ্রাম নগরীর ফৌজদারহাট-বায়েজিদ লিংক রোড এলাকার ১৫টির বেশি পাহাড় কেটে কয়েক’শ স্থাপনা গড়ে তোলা হয়েছে। লিংক রোডের দুই পাশে জঙ্গল সলিমপুর, সলিমপুর, জালালাবাদ, উত্তর পাহাড়তলি, আরেফিন নগর এলাকায় নির্বিচারে পাহাড় কাটা হয়েছে। বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে পাহাড় কেটে সেখানে স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। এমনকি দুই পাহাড়ের মাঝের অংশ কেটে সুড়ঙ্গ পথও তৈরি করেছে পাহাড়খেকোরা।

উচ্ছেদ অভিযানকে স্বাগত জানানোর পাশাপাশি পাহাড় রক্ষায় পাঁচ দফা দাবি দিয়েছে সংগঠনটি। এসব দাবির মধ্যে আছে- লিংক রোডের উভয় পাশের পাহাড়ে টানা উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা, অবৈধ দখলকারীদের তালিকা তৈরি করে প্রত্যেকের বিরুদ্ধে মামলা করা, পাহাড়ের জমি অবৈধভাবে বিক্রি, হস্তান্তর ও নামজারির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি, ভবিষ্যতে পাহাড় কাটা বন্ধে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি করা এবং পাহাড় রক্ষায় স্থায়ী পরিদর্শন ব্যবস্থা কার্যকর করা।

অভিযোগ আটক করোনা গ্রেফতার পাহাড়


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর