করোনা আক্রান্ত অর্ধশতাধিক, থমকে গেছে মেট্রোরেলের কাজ
২৭ জুন ২০২০ ১৩:১১
ঢাকা: থমকে গেছে ঢাকাবাসীর স্বপ্নের মেট্রোরেলের কাজ। মেট্রোরেলের কাজের সঙ্গে যুক্ত অর্ধশতাধিক কর্মকর্তা, প্রকৌশলী ও শ্রমিক করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। করোনার ঝুঁকি এড়াতে বিদেশি শ্রমিক ও প্রকৌশলীরাও দেশে ফেরেননি। এ অবস্থায় কাজের গতি থেমে গেছে।
চলতি মাসের শুরুর দিকে মেট্রোরেলসহ সব প্রকল্পের কাজ পুনরায় শুরুর তাগিদ দিয়েছিলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। কিন্তু মাস প্রায় শেষ হলেও অনেকেই করোনা আক্রান্ত হওয়ায় কাজে গতি আনা সম্ভব হয়নি।
মেট্রোরেল প্রকল্প সূত্র জানিয়েছে, মেট্রোরেলের কাজে যুক্ত ৫৫ কর্মকর্তা ও শ্রমিক করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছেন। যাদের মধ্যে ৩১ জন ইতোমধ্যেই সুস্থ হয়ে উঠেছেন।
সম্প্রতি মেট্রোরেল স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর এম এন এ ছিদ্দিক ।
মেট্রোরেল ম্যানেজিং ডিরেক্টর এম এন এ ছিদ্দিক বলেন, ‘ট্রেন সেট জাপানে পুরোপুরি প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে। করোনার কারণে দেশে আনা যাচ্ছে না। পরিস্থিতি ঠিক হলেই দেশে আসবে। এছাড়া দ্বিতীয়, তৃতীয় ট্রেনের কাজও শুরু হয়েছে জাপানের মিতসুবিসি কারখানায়।’
তিনি জানান, গত ৪ জুন থেকে উত্তরায় মেট্রোরেলের ‘সিপি-৩, সিপি-৪ এই দুই প্যাকেজের কাজ আবার শুরু হয়। এছাড়া উত্তরা থেকে মতিঝিল রুটের বিভিন্ন অংশে কাজ শুরু হয়েছে। মেট্রেরেলের প্রথম অংশ উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত সবগুলো সেগমেন্ট প্রস্তুত হয়েছে।
তবে মেট্রোরেল সিপি-৩ ও সিপি-৪ অংশে গিয়ে প্রতিবেদক কাজের তেমন তৎপরতা দেখতে পাননি।
মেট্রোরেল প্রকল্পে দেশি-বিদেশি কনসালটেন্ট, ঠিকাদার, কর্মকর্তাসহ প্রায় ৯ হাজার শ্রমিক কাজ করেন। দেশের বাইরে থেকে এ প্রকল্পে কাজ করছেন জাপান, থাইল্যান্ড এবং ভারতের প্রকৌশলীরা। করোনা সংক্রমণ রোধে এর আগে ঢাকায় মেট্রোরেল রুটের কাজ বন্ধ ছিল প্রায় দুই মাস।
এমআরটি লাইন-৬ এর একজন কর্মকর্তা জানান, প্রকল্পে এখন চীনের ৭/৮ জন কর্মকর্তা রয়েছেন এবং উত্তরায় মেট্রোরেলের ভবন অবকাঠামো কাজে ৩০ থেকে ৪০ জন দেশীয় শ্রমিক কাজ করছেন। বাকিরা কেউ এখনও কাজে যোগ দেয়নি।
ডিএমটিসিএল সচিব হারুনুর রশিদ জানান, ‘উত্তরা থেকে কমলাপুর পর্যন্ত মেট্রোরেলের ৮ টি প্যাকেজের সকল কর্মীর করোনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। আর করোনা পরিস্থিতি বুঝে কাজে গতি আনার চেষ্টা করা হচ্ছে।’
ডিএমটিসিএল এর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, করোনার কারণে ফার্মগেট থেকে কারওয়ান বাজার পেরিয়ে শাহবাগ মতিঝিলের দিকে যে যে ভায়াডাক্ট বসানোর কাজ শুরু হয়েছিল তা এতোদিন বন্ধ ছিল। তবে উত্তরায় ডিপোর ভেতরে করোনার মধ্যে কাজ হয়েছে।
সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী, আগমী বছর বিজয় দিবসে মেট্রোরেল চালু হবে। প্রতিটি ট্রেনে ৬ টি কোচের মধ্যে একটি কোচ শুধুমাত্র নারীদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে। বাকি সবগুলো নারী-পুরুষ ব্যবহার করতে পারবেন।
বাংলাদেশের মেট্রোরেলগুলো হবে চালকবিহীন। এগুলো রিয়েলটাইমের সঙ্গে চলবে। তবে প্রথমদিকে কিছুদিন একজন করে চালক রাখা হবে। প্রতি ৪ মিনিট অন্তর উত্তরা থেকে কমলাপুর ট্রেন চলতে থাকবে।
ডিমএটিসিএল জানিয়েছে, বাংলাদেশে প্রথম মেট্রোরেল উত্তরা থেকে কমলাপুর পর্যন্ত সাড়ে ২১ কিলোমিটার হবে। উত্তরা ও কমলাপুরসহ মোট ১৭টি স্টেশন থাকবে। এর মধ্যে উত্তরা সেন্টার, বিজয় স্বরনী ও মতিঝিল স্টেশন হবে আইকনিক স্টেশন। বাকিগুলো হবে সাধারণ স্টেশন। জাপানের সহযোগিতায় বাস্তবায়ন হচ্ছে ঢাকার প্রথম মেট্রোরেল। ব্যয় হচ্ছে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা।