প্রাথমিকে আসছে ২ বছর মেয়াদি ‘শিশু শ্রেণি’
২৮ জুন ২০২০ ০৮:৩৮
ঢাকা: সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কিন্ডারগার্টেনের ‘প্লে গ্রুপ’ ও ‘নার্সারি’র আদলে ‘শিশু শ্রেণি’ নামে নতুন একটি ক্লাস যুক্ত হচ্ছে। এই ক্লাসে দুবছর পড়েই প্রথম শ্রেণিতে উঠতে হবে শিক্ষার্থীদের। আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে সারাদেশের দুই হাজার ৫৮৩ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এই শিশু শ্রেণি চালু হবে।
এদিকে শিশু শ্রেণির চালু করার এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন দেশের অভিভাবক ও শিক্ষাবিদরা। ঢাকার বেশ কয়েকজন অভিভাবক সারাবাংলাকে বলেছেন, সরকারি প্রাথমিকে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ভিত্তি শক্তিশালী করে তুলতে শিশু শ্রেণির বিকল্প ছিল না। সরকারের এই সিদ্ধান্তটি যুগোপযোগী হয়েছে।
শহীদ বুদ্ধিজীবী ড. আমিন উদ্দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অভিভাবক মিল্টন চৌধুরী বলেন, ‘কিন্ডারগার্টেন গুলোতে প্লে ও নার্সারি নামে দুটো ক্লাস রয়েছে। যেটি সরকারিতে এতদিন ছিল না। আমাদের শিশুরা তাদের চেয়ে কিছুটা পিছিয়ে ছিল। এখন অন্তত সেই ঘাটতি পূরণ হবে।’
সুরাইয়া নাজনীন বলেন, ‘কিন্ডারগার্ডেন বা ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে সন্তানদের পড়ানোর মতো সামর্থ্য নেই। সরকার চাইলে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোকেই সেভাবে গড়ে তুলতে পারে। এতে আমাদের সন্তানদের পড়াশোনার ভিত্তি মজবুত হয়। শিশু শ্রেণির চালুর সিদ্ধান্তটি আমাদের সন্তানদের জন্য ভালো হয়েছে।’
এদিকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, শিশু শ্রেণি নামে পরীক্ষামূলক এই কার্যক্রমে সফলতা এলে ২০২৩ সাল থেকে সব বিদ্যালয়েই শিশু শ্রেণি চালু করা হবে। এজন্য ৬৫ হাজার ৬২০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একজন করে শিক্ষক ও একজন করে আয়া নিয়োগ দেওয়া হবে।
গত মঙ্গলবার (২৩ জুন) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই সিদ্ধান্তে অনুমোদন দিয়েছেন বলে জানা গেছে। এ ব্যাপারে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব মো. আকরাম-আল-হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষাকে যুগোপযোগী করে তুলতে দুবছর মেয়াদি প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার প্রয়োজন ছিল। প্রধানমন্ত্রী এটি অনুমোদন দিয়েছেন।’
জানা গেছে, প্রাক-প্রাথমিকের শিশু শ্রেণির জন্য পাঠ্যক্রম প্রণয়ন করা হচ্ছে। বর্তমানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণির আগে সীমিত পরিসরে এক বছরের প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা চালু আছে। তবে আগামী বছর থেকে দুই বছর মেয়াদি প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা চালু হবে। এ জন্য প্রতিটি বিদ্যালয়ে একটি করে নতুন শ্রেণিকক্ষ নির্মাণ হবে। এই ক্লাসে ভর্তি হতে শিশুদের সর্বনিম্ন বয়স চার বছর হতে হবে।
এ ব্যাপারে শিক্ষাবিদ রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, ‘শিক্ষার প্রসারের জন্য এর আধুনিকায়নের কোনো বিকল্প নেই। পুরো পৃথিবী এভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। দেশীয় শিক্ষা ব্যবস্থাকে এগিয়ে নিতে এই সিদ্ধান্তগুলো সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। এটি শিশুদের শিক্ষা জীবন শুরুর দিনগুলোকে অধিক আনন্দময় করে তুলবে।’
উল্লেখ্য, পৃথিবীর ৮৫ শতাংশ দেশে সরকারিভাবে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা চালু রয়েছে। এর ৫২ শতাংশ দেশে তিন বছর মেয়াদি এবং ৩৩ শতাংশ দেশে দুই বছর মেয়াদে শিশুদের বিদ্যালয়ে প্রবেশের পাঠ দেওয়া হয়। আগামী বছর থেকে বাংলাদেশও এই তালিকায় যুক্ত হবে।