করোনায় অনলাইনে জমে উঠবে পশুর হাট
৩০ জুন ২০২০ ১১:০০
ঢাকা: করোনাভাইরাসের প্রকোপ এখনো কমেনি মোটেও। জনজীবন এখনো প্রায় স্থবির। এরই মধ্যে আসছে ঈদুল আজহা। রুদ্ধ পরিস্থিতিতেও তাই ঈদুল আজহার অন্যতম অনুষঙ্গ কোরবানির পশু নিয়ে শুরু হয়েছে প্রস্তুতি। খামারি থেকে শুরু করে কর্তৃপক্ষ— প্রস্তুতিতে পিছিয়ে থাকতে রাজি নয় কেউই। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এরই মধ্যে জানিয়েছে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে বসবে হাট। তবে পশুর হাটে গিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মানার হ্যাপা ক’জন নেবেন— তা নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন। আর সে কারণেই সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এবারে ‘অফলাইনে’ নয়, অনলাইনেই জমে উঠবে পশুর হাট।
ই-কমার্স উদ্যোক্তারা বলছেন, দেশে অনলাইনে পশুর হাটের যাত্রা শুরু প্রায় এক দশক হলো। এর মধ্যে গত কয়েক বছরে অনলাইনে পশুর হাটের জনপ্রিয়তার গ্রাফটা বেশ সোজা ঊর্ধ্বমুখী। করোনা পরিস্থিতির কারণেই এ বছর পশুর এই ভার্চুয়াল হাট নিয়ে অ্যাগ্রো ফার্মের স্বত্বাধিকারী থেকে শুরু করে প্রান্তিক খামারিদের আশাবাদ যেন আরেকটু বেশি। তাদের ধারণা, অনলাইনে পশুর হাটের কেনাকাটা এ বছর আগের সব ইতিহাসকে ছাপিয়ে যাবে।
ঈদুল আজহা সামনে রেখে এরই মধ্যে অনলাইনে গরুর বুকিং দিয়েছেন গণমাধ্যমকর্মী আল-আমিন দেওয়ান। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, একেবারে প্রান্তিক খামারিদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা গরু কোরবানি দেওয়ার লক্ষ্য রয়েছে। ওয়েল অ্যান্ড সিড নামের একটি অর্গানিক প্রতিষ্ঠান এবারই অনলাইন প্ল্যাটফর্মে কোরবানির গরুর বুকিং নিচ্ছে। সেখানে ৩০০ থেকে ৪০০ কেজি ওজনের একটি গরুর জন্য বুকিং দিয়েছি।
ফেসবুকে পশু কেনাবেচার জন্য বেশ কিছু গ্রুপ রয়েছে। সেখানে অনেক উদ্যোক্তারা এরই মধ্যে কোরবানির পশুর বিজ্ঞাপন দিচ্ছেন। অনেক অ্যাগ্রো ফার্মও বিভিন্ন অনলাইনে প্ল্যাটফর্মে তাদের গরুর বিজ্ঞাপন দিতে শুরু করেছে। কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপ ও পেজের মাধ্যমে গরুর বুকিং নিচ্ছে।
এমন একটি প্রতিষ্ঠান ওয়েল অ্যান্ড সিড। এবারই তারা প্রথম অনলাইনে গরু বিক্রি করছে। প্রতিষ্ঠানটির সহউদ্যোক্ত কুহেলী পারভীন এলি সারাবাংলাকে বলেন, আমরা কোরবানির গরুর জন্য বুকিং নিতে শুরু করেছি। বেশকিছু বুকিং পেয়েছিও। করোনার কারণেই সম্ভবত এবার রেসপন্স ভালো। সামনে আরও বাড়বে বলে আশা করছি।
অনলাইনে একশ গরু বিক্রির লক্ষ্যের কথা জানালেন কুহেলী। তিনি বলেন, দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে সম্পূর্ণ অর্গানিক গরু আমরা সংগ্রহ করব। কোনো ধরনের কৃত্রিম উপায়ে মোটাতাজা করা হয়নি— এমন গরুই কেবল সংগ্রহ করব আমরা। আর যারা বুকিং দিচ্ছেন, ঈদের দু’দিন আগে তাদের বাসায় গরু পৌঁছে দেওয়া হবে।
ওয়েল অ্যান্ড সিডের এই উদ্যোক্তা জানালেন, গরুর ওজন অনুযায়ী কেজিপ্রতি দামের ভিত্তিতে ‘ফিক্সড প্রাইসে’ যেমন গরু বিক্রি করবেন, তেমনি ক্রেতাদের গরু দেখিয়ে দরদাম করেও বিক্রি করবেন গরু। তবে ওজনের ক্ষেত্রে প্রতি কেজির দাম কত হবে, সেটা এখনো নির্ধারণ করেনি ওয়েল অ্যান্ড সিড।
অনলাইনে গরু বিক্রির প্রস্তুতি প্রায় চুড়ান্ত ই-কমার্স সাইট বিক্রয় ডটকমের। প্রতিষ্ঠানটির কো-ম্যানেজিং ডিরেক্টর ঈশিতা শারমিন সারাবাংলাকে বলেন, অমরা গত ছয় বছর ধরে অনলাইনে গরুর হাট আয়োজন করে আসছি। এবারও অনলাইনে গরুর হাট বসবে। আমরা আমাদের সদস্যদের কিছু ডিসকাউন্ট অফার দিয়ে থাকি, এবার অ্যাগ্রো ফার্মগুলোকে আমরা এবার আরও কম রেটে মেম্বারশিপ দিচ্ছি। কারণ করোনার কারণে অনলাইনে বিক্রি বেশি হবে বলে প্রত্যাশা সবার। তবে তাই বলে যাকে তাকে মেম্বারশিপ দেওয়া হচ্ছে না। আমাদের টিম ফার্মগুলো ভিজিট করার পরই কেবল কোনো ফার্মকে হাটে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। ফলে মানের প্রশ্নে কোনো আপস নেই।
ঈশিতা জানান, বরাবরের মতোই বিক্রয় ডটকমে থাকা গরুগুলো গ্রাহক চাইলে খামার বা ফার্মগুলোতে গিয়ে দেখেও আসতে পারবেন। আর সবার প্রত্যাশামতো বিক্রিও এ বছর বেশি হবে— বিক্রয় সেটিও মনে করছে বলে জানান তিনি।
প্রতিবছরই অনলাইনে কোরবানির পশু বিক্রি হয় দারাজ ডটকমে। তবে প্রতিষ্ঠানটির জনসংযোগ কর্মকর্তা ফয়েজ জানালেন, এ বছর এখন পর্যন্ত তারা এ নিয়ে কোনো পরিকল্পনা করেননি। তবে কার্যক্রম এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে অন্যতম প্রতিষ্ঠিত কোম্পানি বেঙ্গল মিট। তবে তারা এখনো চূড়ান্ত কোনো রূপরেখা দাঁড় করারেত পারেনি। এছাড়া সাদিক অ্যাগ্রো, খামার ই অনলাইন হাটসহ বেশকিছু প্রতিষ্ঠান অনলাইনে পশু কেনাবেচা নিয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছে।
জানতে চাইলে ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের সংগঠন ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াহেদ তমাল সারাবাংলাকে বলেন, অনলাইনে এবার পশু কেনাবেচার পরিমাণ অনেক বেশি হবে। অনলাইনে পশুর হাট জমে উঠবে। ই-ক্যাব থেকেও আমরা ক্রেতা-বিক্রেতা ও সরকারের সমন্বয়ে একটি ক্যাম্পেইন করব। ই-ক্যাবের ১২শ সদস্যকে সঙ্গে নিয়েই এই ক্যাম্পেইন হবে।
তিনি বলেন, সরকারকে আমরা অনলাইনে পশু কেনাবেচার একটি ইকো সিস্টেম তৈরির আহ্বান জানাব। কারণ এবার কোরবানির জন্য যে শুধু পশুই কেনা হবে, তা নয়। অনেকেই চাইবেন, এবার যেন তার কোরবানির মাংস ঘরে পৌঁছে দেওয়া হয়। এছাড়া অনেকে অনলাইন থেকে বরাবরের মতো তো কসাই খুঁজবেনই। এছাড়া হাটের মধ্যেই যেন কোরবানি করা যায়, সে ব্যবস্থা নিতে সিটি করপোরেশনকেও আহ্বান জানাব। সবমিলিয়ে অনলাইনে যেন আরও ব্যাপক আকারে পশুর হাট জমিয়ে তোলা যায়, তা নিয়ে আমাদের সার্বিক কার্যক্রম চলছে।
বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মাস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শাহ ইমরান সারাবাংলাকে বলেন, এ বছর বেশ কয়েকটি কোম্পানি প্রফেশনালি ভার্চুয়াল গরুর হাট নিয়ে আসবে। এছাড়া শহরে যারা স্মার্টফোন ব্যবহার করে— এমন খামারি বা অ্যাগ্রো ফার্মের স্বত্বাধিকারীরা তো এরই মধ্যে ফেসবুক বা বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে বিজ্ঞাপন দিতে শুরু করেছেন। গ্রামের খামারিরাও বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে যোগাযোগ করছেন। করোনায় অনেকেই হয়তো বাজারে গিয়ে বা হাট থেকে গরু কিনতে চাইবেন না। তাদের অনলাইন হাটের ওপরই নির্ভর করতে হবে। সে কারণে এবার অনলাইনে গরুর হাট বেশ জমে উঠবে বলেই মনে করছি।