ঢিমেতালে চলছে ঢাকায় ‘৩৯৮টি সরকারি ফ্ল্যাট নির্মাণ’ প্রকল্প
৪ জুলাই ২০২০ ১০:১৪
ঢাকা: গতি নেই ঢাকায় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ৩৯৮টি ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্পে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখন ভৌত কাজের অগ্রগতি মাত্র ৪৫ শতাংশ। আর্থিক অগ্রগতি ১৭.১৩ শতাংশ। কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য মোট ১১৯টি প্যাকেজের ১০৩টির দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। বাকি ১৬টি প্যাকেজের দরপত্র এখনও আহ্বান করা হয়নি। সব মিলিয়ে ঢিমেতালে চলছে ‘ঢাকা শহরে গুলশান, ধানমন্ডি, ধানমন্ডি ও মোহাম্মদপুরে ২০টি পরিত্যক্ত বাড়িতে ৩৯৮টি সরকারি আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ’ প্রকল্পের কাজ।
সরকারের অব্যবহৃত জমির যথাযথ ব্যবহার করে রাজস্ব আয় বৃদ্ধি এবং উপযুক্ত ও স্বাস্থ্যকর আবাসন সরবরাহের মাধ্যমে সরকারি কর্মকর্তাদের কাছ থেকে উন্নত সেবা প্রাপ্তির জন্য এ প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়। কিন্তু এখন যথাসময়ে প্রকল্প থেকে সুবিধা প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হতে যাচ্ছেন সরকারি চাকরিজীবীরা। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সমীক্ষায় এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
আইএমইডির প্রতিবেদনের খসড়ায় বলা হয়েছে, ঢাকা বাংলাদেশের রাজধানী হওয়ায় সরকারি কর্মকর্তা/কর্মচারীদের সংখ্যা এখানে দিন দিন বেড়েছে। কিন্তু আবাসনের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো বাড়েনি। বর্তমানে ঢাকায় যারা কর্মরত তাদের মাত্র ৮ শতাংশের আবাসিক চাহিদা পূরণ হচ্ছে। বাকি ৯২ শতাংশ কর্মকতা-কর্মচারী আবাসন সুবিধা বঞ্চিত। এ প্রেক্ষাপটে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়েছে। ২০১৬ সালের জুলাই থেকে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এটি বাস্তবায়নের লক্ষ্য ছিল। কিন্তু পরে এক বছর বাড়িয়ে ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়।
প্রকল্পের আওতায় গুলশান, ধানমন্ডি ও মোহাম্মদপুরের ২০টি পরিত্যক্ত বাড়িতে ১৮০০ বর্গফুটের ১৮টি, ১৫০০ বর্গফুটের ১৪৭টি, সাড়ে ১২০০ বর্গফুটের ২১৯টি এবং এক হাজার বর্গফুটের ১৪টিসহ মোট ৩৯৮টি ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৬৬ কোটি ৫৩ লাখ টাকা।
প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রকল্পটির উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) প্রণয়নে প্রথাগত পদ্ধতি অনুসরণ করা হলেও উদ্দেশ্য, লগফ্রেম, ঝুঁকি নির্ণয় এবং ফিনান্সিয়াল অ্যানালাইসিস না করা এবং বিস্তারিত আর্কিটেকচারাল ড্রইং না থাকাটা প্রকল্পের অন্যতম দুর্বল দিক। এছাড়া প্রকল্পের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় গণপূর্ত অধিদফতরের প্রচলিত কিছু পদ্ধতি সরকারের সার্বিক প্রকল্প বাস্তবায়ন নীতির সঙ্গে পরিপন্থী। গণপূর্ত গতানুগতিভাবে বহুদিন ধরে এটি করলেও এ ধরণের ব্যতিক্রমের জন্য কোনো সরকারি অনুমতি আছে বলে প্রমাণ দেখাতে পারেনি।
এছাড়া প্রকল্প কর্মকর্তার জনবল নিজ বিভাগের অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে প্রকল্পে নিয়োজিত থাকা, রাজস্ব খাতের খরচের মতো প্রকল্পের অর্থ খরচ করা, প্রকল্পের অধীনস্থ হয়েও ইএমই বিভাগের অনেকটা আলাদাভাবে কাজ করা এবং সার্বিক সমন্বয়ের জন্য একটি স্থায়ী প্রকল্প অফিস না থাকাকেও এই প্রকল্পের দুর্বলতা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, প্রকল্পটি মূল চ্যালেঞ্জের মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে পরিত্যক্ত বাড়িগুলো দখলে নিয়ে যথাসময়ে কাজ শুরু করা। এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ১৫টি বাড়ি দখলমুক্ত করে কাজ শুরু করা সম্ভব হয়েছে। এর মধ্যে ১২টি বাড়ির কাজ পুরোদমে অর্থাৎ ভিত্তিস্থাপন শেষে মূল অবকাঠামো নির্মাণ কাজ চলমান। বাকি তিনটা বাড়ির কাজ শুরুর দিকে। মোট দরপত্র আহ্বান করা ১০৩টি প্যাকেজের মধ্যে পাঁচটি প্যাকেজের ক্ষেত্রে প্রাক্কলতি মূল্য থেকে চুক্তি মূল্য বেশি দিয়ে কাজ শেষ করা হয়েছে। বাকি প্যাকেজের ক্ষেত্রে প্রাক্কলিত মূল্যেও চেয়ে চুক্তিমূল্য কম দিয়ে ক্রয় করা হয়েছে। দরপত্র আহ্বান থেকে শুরু করে চুক্তি সম্পাদন পর্যন্ত প্রায় সব ক্ষেত্রেই পিপিআর (সরকারি ক্রয় আইন) অনুযায়ী সম্পন্ন করা হলেও কিছু ক্ষেত্রে ব্যতয়ও লক্ষ্য করা গেছে। প্রায় সব ক্ষেত্রেই দরপত্র শেষ হওয়ায় একবছর বা তারও বেশি সময় পর ঠিকাদার কাজ শুরু করতে পেরেছে।
মূলত পরিত্যক্ত বাড়ি দখলে নেওয়া এবং কাজ শুরুর দেরি হওয়ার কারণে প্রকল্পটির ভৌত অগ্রগতি কম হয়েছে। অন্যদিকে, মন্ত্রণালয় থেকে পর্যন্ত বাজেট না পাওয়ায় ঠিকাদারদের কাজের বিল পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় কাজের গতিও মন্থর হয়েছে। এছাড়া কিছু ক্ষেত্রে স্ট্রাকচারাল ডিজাইনের ওপর ভিত্তি করে টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পর প্রকল্পের মাঝামাঝি সময়ে স্থাপত্য অধিদফতর আর্কিটেকচারাল ডিজাইনে ব্যাপক পরিবর্তন নিয়ে আসে। ফলে প্রকল্পটির ব্যয় মারাত্মক বেড়ে যাওয়ার মতো সমন্বয়হীতার ঘটনাও ঘটে। পরবর্তীতে ব্যয় পরিকল্পনাসহ সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (আরডিপি) তৈরি না করা পর্যন্ত কাজ বন্ধ রাখতে হয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে ঠিকাদারদের ইচ্ছেকৃত গাফিলতিও দৃশ্যমান ছিল।
আইএমইডির সচিব আবুল সনসুর মো. ফয়েজ উল্লাহ সারাবাংলাকে জানান, সমীক্ষা প্রতিবেদনের দ্বিতীয় খসড়া প্রতিবেতনের ওপর গত ৭ জুন জাতীয় কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের মো. শহীদ উল্লা খন্দকার। ইতিমধ্যেই প্রতিবেদনটি চূড়ান্ত করা হয়েছে। কেননা জুনের মধ্যেই প্রতিবেদন চূড়ান্ত করার একটা বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
তিনি আরও জানান, শিগগিরই এটি পাঠিয়ে দেওয়া হবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে। তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে প্রকল্পটি মূল্যায়ন করা হয়েছে। যাতে প্রকৃত চিত্র উঠে আসে। এখন সে অনুযায়ীই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।