‘করোনামুক্ত না হওয়া পর্যন্ত আ.লীগ নেতাকর্মীরা জনগণের পাশে থাকবে’
৫ জুলাই ২০২০ ০৩:৫৪
ঢাকা: করোনাভাইরাস পরিস্থিতির শুরু থেকেই সারাদেশে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছে দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা। তারা বলছেন, নেতাকর্মীরা নিজেদের উদ্যোগে যেমন মানুষকে সহায়তা করেছে, তেমনি সরকারি বিভিন্ন উদ্যোগ বাস্তবায়নেও ভূমিকা রেখেছে। দলের হিসাব অনুযায়ী, দেশব্যাপী ১ কোটি ২০ লাখ মানুষের কাছে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দিয়েছেন তারা।
শনিবার (৪ জুলাই) রাতে করোনাকালীন সংকট নিয়ে আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিশেষ ওয়েবিনার ‘বিয়ন্ড দ্য প্যানডেমিক’-এর নবম পর্বে যুক্ত হয়ে আওয়ামী লীগ নেতারা এসব কথা বলেন। এবারের পর্বের আলোচনার বিষয় ছিল ‘করোনা সংকট মোকাবিলায় তৃণমূলের ভূমিকা’। এই সংকটে মানুষকে সচেতন করতে আওয়ামী লীগের পদক্ষেপ, করোনা চিকিৎসা নিয়ে গুজব মোকাবিলা, দলের জনপ্রতিনিধিদের জন্য আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় বার্তা, ঘূর্ণিঝড় আম্পান পূর্বাভাস পাওয়ার পর ক্ষয়ক্ষতি কমাতে নেওয়া পদক্ষেপ, এবং পরবর্তীতে কর্মহীনদের সহায়তা নিয়ে আলোচনা করা হয় এই পর্বে।
বরাবরের মতোই বিয়ন্ড দ্য প্যানডেমিকের এই পর্বটিও সরাসরি প্রচারিত হয় আওয়ামী লীগের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ এবং অফিশিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে। একইসঙ্গে দেখা যায় বিজয় টিভির পর্দায় এবং সারাবাংলা ডটনেট, বিডিনিউজ, সমকাল, ইত্তেফাক, ভোরের কাগজ, বাংলা নিউজ, যুগান্তর, জাগো নিউজ ২৪ ও বার্তা ২৪-এর ফেসবুক পেজে।
প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার শাহ আলী ফরহাদের সঞ্চালনায় আলোচক হিসেবে যুক্ত ছিলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন, ভোলা-৪ আসনের সংসদ সদস্য আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব, কক্সবাজার-২ আসনের সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক, খুলনা-৬ আসনের সংসদ সদস্য আক্তারুজ্জামান বাবু ও বাংলাদেশ কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক উম্মে কুলসুম স্মৃতি।
আলোচনায় আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরুর পর থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা ও তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সমন্বয় করে রিলিফ কার্যক্রম কমিটি গঠন ও রিলিফ বিতরণে সক্রিয়ভাবে অংশ নেয় আওয়ামী লীগ। সাধারণ মানুষকে সচেতন করা থেকে শুরু করে, অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা কার্পণ্য করেননি। আওয়ামী লীগের দুর্দিনের নেতাকর্মীরা মৃত্যুভয়কে উপেক্ষা করে রিলিফ কার্যক্রম এখন পর্যন্ত পরিচালনা করছেন।
তিনি আরও বলেন, দেশ ও দলের দুর্দিনে আওয়ামী লীগের তৃণমূল কর্মীরা বারবার ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছেন। সমগ্র আন্দোলন সংগ্রামে আমাদের এই দুর্দিনের নেতাকর্মীরাই সবার আগে এগিয়ে এসেছেন এবং আমাদের দলীয় জনপ্রতিনিধিরা তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সমন্বয় করে জনগণের পাশে থেকেছে, এখনো আছে। বাংলাদেশ করোনামুক্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত তৃণমূলের নেতাকর্মী ও জনপ্রতিনিধিরা যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় জনগণের পাশে আছে এবং থাকবে।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন বলেন, একজন সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে আমার সাংগঠনিক এলাকার উপজেলা ইউনিয়নের নেতাকর্মীদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি। আমাদের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা ব্যক্তিগত উদ্যোগে মানুষের ঘরে ঘরে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দিয়েছে এবং এখনো দিচ্ছে। এছাড়া আমাদের সব স্তরের জনপ্রতিনিধিরা নিজস্ব এলাকায় সরকারি ও ব্যক্তিগর উদ্যোগ মিলিয়ে মানুষের পাশে থেকেছে। আমরা কেন্দ্র থেকে সবকিছু সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছি।
তিনি আরও বলেন, আমাদের দফতরের হিসাব অনুযায়ী সারাদেশের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা এখন পর্যন্ত প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ মানুষের কাছে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দিয়েছে। আওয়ামী লীগের রাজনীতিই হলো অসহায় মানুষের পাশে থাকা, পাশে দাঁড়ানো, মানুষকে সহায়তা করা। আওয়ামী লীগের জন্মলগ্ন থেকে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা সবসময় অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে।
আলোচনায় যুক্ত হয়ে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন বলেন, চট্টগ্রামে আমরা চিকিৎসা ক্ষেত্রে প্রচুর চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছি। প্রথম দিকে মানুষের ধারণা ছিল, একই হাসপাতালে কোভিড ও নন-কোভিড চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব না। সেই ধারণা চট্টগ্রামে খুব কাজ করেছিল। শুরু দিকে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ৫০ শয্যা নিয়ে আমরা করোনার চিকিৎসা শুরু করেছিলাম। ধীরে ধীরে শয্যা সংখ্যা বাড়তে বাড়তে সেখানে এখন ১৬০টি শয্যা রয়েছে। সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ১০ শয্যার আইসিউ সেবা। চট্টগ্রাম মেডিকেলেও প্রথমে স্বল্পসংখ্যাক বেড নিয়ে শুরু করলেও এখন সেখানে ১৫০টি আইসোলেশন সেবাসহ আইসিইউ সেবা চালু হয়েছে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আরও একাধিক হাসপাতালকে করোনাভাইরাস চিকিৎসায় যুক্ত করা হয়েছে। বেসরকারি হাসপাতালগুলো সরকারের নির্দেশে এখন সেবা দিচ্ছেন।
‘আমি যেহেতু চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ও চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি, স্বাভাবিকভাবেই আমার ওপর নির্ভর করে দলের ভাবমূর্তি, গ্রহণযোগ্যতা এবং পাশাপাশি সরকারের ভাবমূর্তি। সে কারণে আমি প্রথম থেকেই গুরুত্ব দিয়ে, অগ্রাধিকার দিয়ে, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে একদম শুরু থেকে চট্টগ্রামের রাজপথে, চট্টগ্রামে ৪১টি ওয়ার্ডের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে ছুটে গিয়েছি।’
ভোলা-৪ আসনের সংসদ সদস্য আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব বলেন, এই দুর্যোগে যেভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্বীপ জেলা ভোলাবাসীর খোঁজ নিয়মিত নিয়েছেন, আমি কাছে ভোলা-৪ আসনের জনগণের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা জানাই। করোনা সংকটের এই মহামারিতে ডাক্তাররা কাজ করে যাচ্ছেন, আমি তাদের প্রতি শ্রদ্ধা রাখছি। আমরা অনেক দুর্যোগ দেখেছি। কিন্তু করোনার মতো দুর্যোগ এই প্রথম। নতুন এই দুর্যোগ মোকাবিলায় আমরা একেবারে প্রস্তুত ছিলাম না, কিন্তু শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা কাজ করছি এই সংকট মোকাবিলায়।
তিনি বলেন, করোনা সংকটের এই সময়ে আমরা আমাদের নির্বাচনি এলাকায় সরকারের পাশাপাশি দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে সাহায্য কার্যক্রম চালিয়েছি কর্মহীন মানুষের জন্য। আমার নির্বাচনি এলাকায় কর্মহীন মানুষসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার হাজার হাজার মানুষদের প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে খাদ্য ও আর্থিক সহয়তা দিয়েছি। ঘূর্ণিঝড় আম্পানে আমরা মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি, বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হয়। ঈদ সামনে রেখে আমরা কর্মহীন মানুষের বাড়ি বাড়ি খাদ্য ও ঈদ উপহার পৌঁছে দিয়েছি। আমি মনে করি, দুর্যোগে আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা মানুষের পাশে সবসময় ছিল, থাকবে।
খুলনা-৬ আসনের সংসদ সদস্য আক্তারুজ্জামান বাবু বলেন, বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণের জনপদ পাইকগাছা কয়রায় করোনা শনাক্ত হওয়ার পর থেকে আমরা কাজ করেছি। আজ এই করোনার সময়ে আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে আমরা কাজ করে যাচ্ছি আমার দুই উপজেলার নেতাদের নিয়ে। আমরা মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিনসহ মন্দিরে আমরা সহায়তা পৌঁছে দিয়েছি।
কক্সবাজার-২ আসনের সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক এমপি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে আমরা সবাই মিলে তৃণমূলের মানুষদের পাশে ছিলাম। রোহিঙ্গা সংকটের সময় কক্সবাজারে ছুটে আসেন আমাদের মমতাময়ী নেত্রী তাদের দেখার জন্য। সেখানে এখন পর্যন্ত ৫২ জন কোভিড-১৯-এ জন আক্রান্ত। সরকারের পক্ষ থেকে সেখানে ফিল্ড হাসপাতাল স্থাপন করা হয়েছে। সেখানে আমাদের সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন সংস্থা কাজ করছে।
বাংলাদেশ কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক উম্মে কুলসুম স্মৃতি বলেন, কৃষকদের পাশে আমরা সবসময় আছি এবং থাকব। ১৯৮৪ সালের পর থেকে এখন পর্যন্ত বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি চলমান রেখেছে বাংলাদেশ কৃষক লীগসহ অন্যান্য সহযোগী সংগঠন। সারাদেশে মুজিববর্ষে এক কোটি গাছ লাগাবে বাংলাদেশ কৃষক লীগ। কোভিড মহামারির এই সময়ে ২৫ হাজার ৫৩৩ শতক জমির ধান আমাদের কৃষক লীগের নেতাকর্মীদের সাহায্যে কাটা হয় এবং ধানকাটা থেকে শুরু করে ধান কেনা পর্যন্ত সাহায্য করেছে আমাদের নেতাকর্মীরা। আমার নির্বাচনি এলাকা গাইবান্ধার পলাশবাড়ী ও সাদুল্লাপুরে আমি নিয়মিত ভিজিট করেছি, যেন জনগণ তাদের ত্রাণ এবং প্রধানমন্ত্রীর উপহার সঠিকভাবে পায়। আমি আমার নির্বাচনি এলাকায় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে ঘরে ঘরে ত্রাণ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি।
এর আগে, বিয়ন্ড দ্য প্যানডেমিকের আটটি পর্ব অনুষ্ঠিত হয়েছে। সবশেষ পর্বটি প্রচারিত হয়েছে গত ৩০ জুন। ওই পর্বে আলোচকরা করোনা পরবর্তী বাংলাদেশের তরুণদের মধ্যে শিক্ষা ও দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য নতুন ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছেন। শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ও শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী ছিলেন অনুষ্ঠানের অন্যতম আলোচক।
আ জ ম নাছির উদ্দিন আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম এমপি আক্তারুজ্জামান বাবু এমপি আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব এমপি আশেক উল্লাহ রফিক করোনা মহামারি করোনাভাইরাস কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক উম্মে কুলসুম স্মৃতি কোভিড-১৯ জনগণের পাশে দাঁড়ানো তৃণমূল নেতাকর্মী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বিয়ন্ড দ্য প্যানডেমিক সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন