ওয়েব সিরিজ বিতর্ক: গ্রামীণফোনের দাবি কনটেন্টের দায় নির্মাতাদের
৫ জুলাই ২০২০ ২০:৩৪
ঢাকা: গ্রামীণফোনের (জিপি) নেটওয়ার্ক ও প্ল্যাটফর্ম (বায়োস্কোপ) ব্যবহার করে ওয়েব সিরিজের নামে সেন্সরবিহীন ‘কুরুচিপূর্ণ’ বলে অভিহিত ভিডিও কনটেন্ট ওয়েবে আপলোড ও প্রচারের বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এরইমধ্যে তথ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠিও পাঠিয়েছে তারা। আরেক অপারেটর রবি এখনো তথ্য মন্ত্রণালয়ে তাদের ব্যাখ্যা পাঠায়নি। তবে ব্যাখ্যা দিতে তাদের চিঠির খসড়া এরইমধ্যে প্রস্তুত হয়েছে।
চিঠিতে গ্রামীণফোন জানিয়েছে, প্রচারিত কনটেন্টের দায় তাদের নয়। কনটেন্টের জন্য নির্মাতারা দায়ী। রবি যে প্রতিউত্তর দিতে যাচ্ছে তাও প্রায় অভিন্ন। তাদের প্ল্যাটফর্ম বিঞ্জ অন্য একটি প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে বলে চিঠিতে উল্লেখ আছে। তথ্য অধিদফতর ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
ওয়েব সিরিজ: জিপি ও রবি’র কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছে তথ্য মন্ত্রণালয়
জানতে চাইলে সদ্য অবসরে যাওয়া তথ্য অধিদফতরের (পিআইডি) প্রধান তথ্য অফিসার সুরথ কুমার সরকার সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, ওয়েব সিরিজ নিয়ে গ্রামীণফোন ব্যাখ্যা দিয়েছে। তবে রবির উত্তর এখনো পাওয়া যায়নি। আমরা তাদের কাছে জানতে চেয়েছিলাম তারা কিভাবে এমন কন্টেন্ট আপলোড করছে? তাদের ইন্টারনেট ও প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে কেন এমন কনটেন্ট প্রচারিত হয়েছে? তাদের কী কোনো লাইসেন্স আছে কি না? এর উত্তরে গ্রামীণফোন জানিয়েছে, এসব কনটেন্টের জন্য তারা কোনভাবেই দায়ী নয়। কন্টেন্টের জন্য নির্মাতারা দায়ী।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রে জানা গেছে, গ্রামীণফোনের প্ল্যাটফর্ম বায়োস্কোপে কন্টেন্ট আপলোডের দায়িত্ব বঙ্গবিডির। চিঠিতে গ্রামীণফোন তা উল্লেখ করেছে। গ্রামীণফোনের দাবি, বায়োস্কোপে কনটেন্ট আপলোডের দায়িত্ব বঙ্গবিডির। কনটেন্ট প্রকাশ নিয়ে তাদের নিজস্ব একটি নীতিমালাও রয়েছে। ১৭ পৃষ্ঠার ওই নীতিমালাটি তথ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো চিঠিতে সংযুক্ত করা হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে এসব বিষয়ে গ্রামীণফোনের পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
রুচির প্রশ্নে দায় কি শুধু দেশি প্ল্যাটফর্মের?
এর আগে, ‘কুরুচিপূর্ণ’ কনটেন্ট প্রচার নিয়ে তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে ব্যাখ্যা চাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে গ্রামীণফোনের হেড অব এক্সটার্নাল কমিউনিকেশন্স অফিসার মোহাম্মদ হাসান সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের কোনো ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম থেকে এ ধরনের কোনো কনটেন্ট প্রচারিত বা প্রকাশিত না করার ব্যাপারে আমরা সবসময় সতর্ক থাকি। এ ব্যাপারে আমাদের পার্টনারদেরও নিয়মিতভাবে সতর্ক করা হয়। দেশের সংস্কৃতির প্রচার ও প্রসারে গ্রামীণফোন সবসময়ই সচেতন ও শ্রদ্ধাশীল। অশ্লীল ও নীতিবিরুদ্ধ কোনো কনটেন্টের ক্ষেত্রে আমরা সবসময়ই কঠোর।’
এদিকে রবির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে ওয়েব সিরিজ নিয়ে ব্যাখ্যা দিতে এরই মধ্যে একটি চিঠি প্রস্তুত করেছে প্রতিষ্ঠানটি। তবে সংশ্লিষ্ট অন্য একটি সূত্রে জানা গেছে, রবি আজিয়াটার খসড়া চিঠিতে তাদের সঙ্গে ওয়েব সিরিজের কোনো সম্পৃক্ততা নেই বলে উল্লেখ করেছে। তাদের প্ল্যাটফর্ম বিঞ্জ অন্য একটি প্রতিষ্ঠান দেখে থাকে বলেও চিঠিতে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।
ওয়েব সিরিজ নিয়ে গ্রামীণফোন ও রবি কোনো ব্যাখ্যা দিয়েছে কি-না জানতে চাইলে রোববার দুপুরে তথ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত প্রধান তথ্য অফিসার বিধান চন্দ্র কর্মকার কোনো উত্তর দিতে পারেননি। আর তথ্য সচিব কামরুন নাহার করোনা আক্রান্ত হয়ে আইসোলেশনে থাকায় তিনিও উত্তর দিতে পারেননি।
এদিকে, রোববার (৫ জুলাই) দুপুরে সচিবালয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ওয়েব সিরিজ নিয়ে অনুষ্ঠিত এক ভিডিও কনফারেন্সের শুরুতে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘গ্রামীণফোন যে উত্তর দিয়েছে সেখানে ঠিকভাবে ব্যাখ্যা নেই, আর ‘রবি’ উত্তর প্রস্তুত করছে বলে জানিয়েছে।’
ওই বৈঠকে তিনি আরও বলেন, ‘ওটিটি প্লাটফর্ম একটি ক্রমবর্ধমান ক্ষেত্র এবং এখানে হাজার হাজার কোটি টাকার ব্যবসার সুযোগ রয়েছে, যা অবশ্যই করযোগ্য। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও অন্যান্য প্লাটফর্ম যেমন নেটফ্লিক্স, ইউটিউব প্রভৃতির কাছে দেশের অনেক অর্থ চলে যাচ্ছে, কিন্তু সেখান থেকে সরকার যেভাবে ট্যাক্স পাওয়ার কথা তা পাচ্ছে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘ভারতে ওটিটি প্লাটফর্মে অন্য দেশের কনটেন্ট দেখানোর ক্ষেত্রে নানা আইন-কানুন, নিয়ম-নীতি প্রবর্তন হয়েছে। ভারতে চালু থাকার জন্য ফেইসবুক ভারতীয় কোম্পানি হিসেবে রেজিস্টার্ড হয়েছে। আমাদের দেশে এখনো রেজিস্টার্ড হয়নি, তবে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের ক্রমাগত প্রচেষ্টায় তারা একজন এজেন্ট নিয়োগ করেছে।’
এছাড়া কন্টেন্ট ও বিজ্ঞাপন প্রচারসহ সামগ্রিক বিষয়টিকে যুগোপযোগী নিয়ম-নীতি ও করের আওতায় আনার লক্ষ্যে তথ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবকে (সম্প্রচার) আহবায়ক করে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়, যার অপর চার সদস্য হিসেবে রয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বিটিআরসি এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন করে প্রতিনিধি ও একজন আইন বিশেষজ্ঞ।
এর আগে, গ্রামীণফোন (জিপি) ও রবি’র প্ল্যাটফর্ম ও নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে ওয়েব সিরিজের নামে সেন্সরবিহীন ‘কুরুচিপূর্ণ’ ভিডিও কনটেন্ট ওয়েবে আপলোড ও প্রচারের বিষয়ে টেলিকম অপারেটর দুইটির কাছে ব্যাখ্যা চায় তথ্য মন্ত্রণালয়। গেল ২৪ জুন তথ্য অধিদফতর থেকে কোম্পানি দুটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে আলাদা আলাদা চিঠি দেওয়া হয়। চিঠিতে অভিযোগ করা হয়, অপারেটর দুটির প্ল্যাটফর্ম (বায়োস্কোপ ও বিঞ্জ) ও নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে ওয়েব সিরিজের নামে সেন্সরবিহীন নগ্ন, অশালীন ও কুরুচিপূর্ণ দৃশ্য, কাহিনী ও সংলাপ সংবলিত ভিডিও কনটেন্ট প্রচার করা হয়েছে। তবে দেশীয় প্ল্যাটফর্মের উদ্যোক্তা ও নির্মাতারা বলছেন, নেটফ্লিক্স, অ্যামাজন, হইচই, হটস্টার, উলু বা জি ফাইভের মতো ওয়েব কনটেন্টের বিদেশি প্ল্যাটফর্মগুলোতেও একই ধরনের কনটেন্ট প্রচারিত হচ্ছে। সেক্ষেত্রে কেবল দেশীয় প্ল্যাটফর্মগুলো নিয়ে প্রশ্ন তোলাকে তারা দেখছেন বৈষম্য হিসেবে।
উদ্যোক্তারা আরও বলছেন, বিজ্ঞাপন, নাটক ও চলচ্চিত্রের জন্য ওয়েব কনটেন্টই ভবিষ্যৎ। এই প্ল্যাটফর্মেই তৈরি হতে পারে হাজার কোটি টাকার বাজার। আর কোনো কনটেন্টের জন্যে সমালোচনা হতে পারে, তবে তার জন্যে ব্যাখ্যা চাওয়া সমীচীন নয়। একইসঙ্গে রুচির প্রশ্নে কেবল দেশীয় প্ল্যাটফর্মেরই দায় রয়েছে কি না— এমন প্রশ্নও তাদের।