‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত দু’জন সিএনজির যাত্রী ছিনতাই-খুন চক্রের সদস্য
৬ জুলাই ২০২০ ২২:২৫
ঢাকা: সিএনজি অটোরিকশায় যাত্রী তুলে কয়েকজন মিলে ওই যাত্রীর গলায় গামছা পেঁচিয়ে চোখে মলম লাগিয়ে সবকিছু ছিনিয়ে নেওয়া চক্রের দুই সদস্য গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছেন। এসময় চক্রের আরও দুই সদস্য আটক হয়েছেন। আটক দু’জন তিনশ ফিট সড়কে এর আগেও একাধিক ছিনতাই ও হত্যায় অংশ নিয়েছে বলে স্বীকার করেছেন।
পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত দু’জন হলেন— নান্নু ও মোশারফ। আর আহত দু’জন হলেন— সফিক ও সিদ্দিক।
এর আগে, গত তিন মাসে রাজধানীর তিনশ ফিট এলাকা থেকে অন্তত ছয় জনের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। সবশেষ গত ১৭ জুন তিনশ ফিট এলাকা থেকে দক্ষিণ খান এলাকার বাসিন্দা সোনিয়া আকতারের স্বামী হারুন অর রশীদের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। হারুনকে হত্যার পর কে বা কারা সড়কের পাশে ফেলে রেখে যায়। খুন হওয়া প্রত্যেক ব্যক্তিকে প্রায় একই কায়দায় হত্যা করা হয় বলে জানায় পুলিশ। এর প্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ক্যান্টনমেন্ট জোনাল টিম) নজরদারি জোরদার করে।
রোববার (৫ জুলাই) গভীর রাতে তিনশ ফিট এলাকায় ডিবি পুলিশ নজরদারির সময় সন্দেহভাজন একটি সিএনজিকে থামানোর সংকেত দেয়। সিএনজিটি না থামিয়ে বরং অস্ত্র বের করে গুলি চালাতে শুরু করে। এক পর্যায়ে ডিবি পুলিশও পাল্টা গুলি চালায়। এসময় দু’জন গুলিবিদ্ধ হন এবং আরও দু’জনকে আটক করা হয়। গুলিবিদ্ধ দু’জনকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।
আটক দু’জনের মধ্যে শফিকুল ইসলাম সফিক ডিবি পুলিশকে জানান, তারা সবাই ছিনতাইকারী চক্রের সদস্য। সিএনজি অটোরিকশা চালানোর আড়ালে মূলত তারা ছিনতাই করতেন। সিএনজিতে চার জন থাকতেন। একজন যাত্রী উঠলেই তাকে টার্গেট করতেন। এরপর ওই যাত্রীকে পেছন থেকে গামছা দিয়ে মুখমণ্ডল ও গলা পেঁচিয়ে মলম লাগিয়ে সর্বস্ব ছিনিয়ে নিতেন। কেউ বাড়াবাড়ি করলে তাকে গামছা দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে সড়কে পাশে ফেলে দিতেন। আবার কাউকে কাউকে ছুরিকাঘাত করে, কাউকে গুলি করে হত্যা করে ফেলে দিত চক্রটি।
আটক হওয়া আরেক ছিনতাইকারী সিদ্দিক ডিবিকে জানান, ১৭ জুন দক্ষিণ খানের হারুন অর রশীদকে খুন করার পর তিনশ ফিট সড়কের পাশে ফেলে দিয়েছিলেন। এরপর কয়েকদিন তারা বের হননি। কয়েকদিন হলো থেকে ফের ছিনতাইয়ের জন্য মাঠে নেমেছিলেন।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি উত্তর) উপকমিশনার মশিউর রহমান সোমবার (৬ জুলাই) সারাবাংলাকে বলেন, অনেকদিন ধরেই এই চক্রটিকে খুঁজছিল পুলিশ। এই চক্রটি সিএনজিতে যাত্রী তোলার পর গলায় গামছা পেঁচিয়ে চোখে মলম লাগিয়ে সবকিছু কেড়ে নিত। না দিতে চাইলে হত্যা করে রাস্তায় ফেলে দিত। পরদিন পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করত। গত রাতে ওই চক্রটি আবারও ছিনতাইয়ে নামে। পুলিশ সন্দেহজনকভাবে সিএনজিটিকে থামতে বলে। না থেমে পাল্টা গুলি চালালে পুলিশও গুলি চালায়। এতে দুই ছিনতাইকারী নান্নু ও মোশারফ মারা যায়। বাকি দু’জন সফিক ও সিদ্দিককে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে, ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ঢামেক) মর্গে মোশারফ হোসেনের (৪৫) মরদেহ শনাক্ত করেন তার ছেলে সাব্বির হোসেন। তিনি বলেন, তারা এক ভাই এক বোন। মায়ের সঙ্গে বাবার অনেক আগেই তালাক হয়েছে। তাদের বাড়ি নারায়ণগঞ্জের সোঁনারগাও থানার পাকুন্দিয়া গ্রামে। পরিবারের সঙ্গে তেমন যোগাযোগ ছিল না মোশারফের।
সাব্বির জানান, তার বাবা নির্দিষ্ট কোনো কাজ করতেন না। যখন যে কাজ পেতেন, তাই করতেন। তিনি শুনেছেন এক সপ্তাহ আগে ডিবি পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে গেছে। আজ তার মরদেহ পাওয়া গেল।
কথিত বন্দুকযুদ্ধ ছিনতাই-খুন ছিনতাইকারী চক্র বন্দুকযুদ্ধ বন্দুকযুদ্ধে নিহত সিএনজিতে ছিনতাই চক্র