সংগৃহীত ঘি নিজ নামে বিক্রি, নিউ বাঘাবাড়িকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা
১১ জুলাই ২০২০ ২০:৪১
ঢাকা: সারাদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে তৈরি করা ঘি সংগ্রহ করে চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে নিজেদের ব্রান্ড বলে বিক্রি ও রফতানির অভিযোগে রয়েছে ‘নিউ বাঘাবাড়ি’র বিরুদ্ধে। আর এ পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠানটিকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) ভ্রাম্যমাণ আদালত।
শনিবার (১১ জুলাই) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির মালিবাগ কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে নিরাপদ খাদ্য আইন ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনে ওই জরিমানা করা হয়। অভিযানে নেতৃত্ব দেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু। সহযোগিতা করে র্যাব-৩।
অভিযানে অংশ নেয়া সংশ্লিষ্টরা জানান, সংগৃহীত ঘি অননুমোদিতভাবে নিজের ব্র্যান্ডের বলে প্রচার, চটকদার বিজ্ঞাপন ব্যবহার এবং জাতীয় পতাকার সিল ব্যবহার করে অনুমোদন ছাড়া রফতানির অভিযোগে নিউ বাঘাবাড়ি ঘি’র মালিক সমির ঘোষকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানটির নাম নিউ বাঘাবাড়ি। এর মালিক সমির ঘোষ। প্রতিষ্ঠানটির ট্রেড লাইসেন্স রয়েছে প্যাকেজিং ও সরবরাহকারী হিসেবে। কিন্তু বিভিন্ন স্থান থেকে সংগ্রহ করা ঘি’ প্যাকেট ও সরবরাহ করে পণ্যের গায়ে লিখছেন তিনি নিজেই উৎপাদনকারী। আইনে এটার কোনো সুযোগ নেই। তিনি মূলত সিরাজগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থান থেকে এসব ঘি কিনে নিয়ে এসে নিজের উৎপাদিত বলে চালিয়েছেন। যা প্রতারণা।’
তিনি আরও বলেন, ‘ঘি’র প্যাকেটের গায়ে বেশকিছু পুষ্টিগুণের কথা উল্লেখ করেছেন, যা তিনি করতে পারেন না। কারণ তার ব্র্যান্ডের ঘি’র পুষ্টিগুণের ল্যাব টেস্ট বা ল্যাব সার্টিফায়েড না। তিনি ঘি’র মতো একটি রুচিশীল পণ্যের প্যাকেজিংটা করছিলেন অস্বাস্থ্যকর ও অত্যন্ত নোংরা পরিবেশে।’
পলাশ বসু জানান, নিরাপদ খাদ্য আইনে স্পষ্ট বলা আছে যে, কোনো প্রোডাক্টের কাঁচামাল যেখান থেকে কিনে নিয়ে আসবেন সেখানকার চালান সংরক্ষণ করতে হবে। তার গোডাউনে প্রচুর কাঁচামাল রয়েছে। কিন্তু তিনি একটি মাত্র চালানের কপি দেখাতে পেরেছেন। তার অফিস থেকে বেশ কিছু স্টিকার উদ্ধার করা হয়েছে। যেখানে লেখা তিনি সিডনিতে ঘি রফতানি করেন। অথচ তার এক্সপোর্ট লাইসেন্স নেই। অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশে যদি ঘি রফতানি করেন তাহলে ল্যাব টেস্ট সার্টিফায়েড হতে হবে, কাস্টমসের ছাড়পত্র লাগবে। অননুমোদিত ঘি রফতানি করলে দেশের বদনাম হবে। যদিও তিনি সেটা করে আসছিলেন।
তিনি বলেন, ‘সমির ঘোষ তার ঘি’র কৌটায় বাংলাদেশের পতাকার সিল ব্যবহার করেছেন। ইতোপূর্বে এমন প্রতারণা কখনো দেখা যায়নি। ঘি ব্যবহারের পর ওই কৌটা মানুষ ফেলে দিতে পারে। এতে পতাকার অবমাননা হয়। এভাবে অনুমোদন ছাড়া পতাকার ছবি বা সিল ব্যবহার পতাকা আইনে অপরাধ। মালিকের ঘি’র ব্র্যান্ডের নাম সমির ঘোষ। কিন্তু তিনি এর সঙ্গে ‘সমির ঘোষের স্পেশাল গাওয়া ঘি’ লিখেছেন। এমন চটকদার বিজ্ঞাপনের ব্যবহার মানুষকে প্রতারণার শামিল। কারণ তার এটার অনুমোদন নেই। গাওয়া ঘি কিন্তু আরও ইমপ্রুভড ও অধিক পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ হয়।’
পলাশ কুমার বসু বলেন, ‘এসব অভিযোগের কোনোটারই সদুত্তর দিতে পারেননি সমির ঘোষ। যে কারণে ভ্রাম্যমাণ আদালত তাকে ভোক্তা সংরক্ষণ আইন ও নিরাপদ খাদ্য আইনের বিভিন্ন ধারায় ১০ লাখ টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন। তিনি নগদে ১০ লাখ টাকা জরিমানা পরিশোধ করেছেন।’
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ আরও বলেন, ‘জব্দ করা ৫ রকমের ঘি’তে কোনো কেমিক্যাল রয়েছে কি-না, যা খালি চোখে দেখা যায় না; তা পরীক্ষার জন্য বিএসটিআই ল্যাবে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যদি পরীক্ষায় অস্বাস্থ্যকর ও কেমিক্যাল জাতীয় কিছু মেলে তাহলে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা দায়ের করা হবে।