ঢাকা: নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) নমুনা পরীক্ষা নিয়ে প্রতারণা করা জোবেদা খাতুন হেলথ কেয়ার (জেকেজি) নামে ওভাল গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠানের প্রতারণার বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতর নিজেদের অবস্থান জানিয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছে। শনিবার (১১ জুলাই) স্বাস্থ্য অধিদফতরের সহকারী পরিচালক ডা. মো জাহাঙ্গীর কবিরের সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে একথা জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রতিষ্ঠানটির প্রধান সমন্বয়ক আরিফুল চৌধুরী ওভাল গ্রুপ লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী। ওভাল গ্রুপ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক আয়োজিত স্বাস্থ্যসেবা সপ্তাহ-২০১৮’র ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের দায়িত্ব পালন করে। চিকিৎসা পেশাজীবীদের সংগঠন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনেরও একাধিক ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের দায়িত্ব পালন করে। কোভিড সংকট শুরু হওয়ার পর আরিফুল চৌধুরী স্বাস্থ্য অধিদফতরে আসেন এবং জানান যে, তিনি জোবেদা খাতুন হেলথ কেয়ার (জেকেজি) নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানের প্রধান সমন্বয়ক।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, জেকেজি গ্রুপ দক্ষিণ কোরিয়ার মডেলে বাংলাদেশে কিছু বুথ স্থাপন করতে চায়। এসব বুথের মাধ্যমে পিসিআর পরীক্ষা করার জন্য নমুনা সংগ্রহ করে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পিসিআর ল্যাবরেটরিকে সরবরাহ করবে। এজন্য স্বাস্থ্য অধিদফতর বা সরকারকে কোনো অর্থ দিতে হবে না। ধারণাটি ভালো এবং করোনা পরীক্ষার নমুনা সংগ্রহ বাড়ানো প্রয়োজন— এই বিবেচনা থেকে ওভাল গ্রুপের সাথে কাজের পূর্ব অভিজ্ঞতা থাকায় জেকেজি গ্রুপকে অনুমতি দেওয়া যায় বলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বা স্বাস্থ্য অধিদফতর মনে করে।
জেকেজি হেলথকেয়ার প্রতারণা করতে পারে এমন ধারণা আদৌ স্বাস্থ্য অধিদফতরের ছিল না উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, একটি ভালো কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকার মানসে ঐতিহ্যবাহী তিতুমীর কলেজ কর্তৃপক্ষও জেকেজি গ্রুপের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়ায়। পরবর্তী সময়ে প্রতারণার অভিযোগ পাওয়া গেলে স্বাস্থ্য অধিদফতর জেকেজি গ্রুপকে প্রদত্ত বুথ পরিচালনার অনুমতি বাতিল করে। স্বাস্থ্য অধিদফতর একটি সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান। তাই দ্রুত করোনা স্বাস্থ্যসেবা সম্প্রসারণের মূল লক্ষ্য ও সদিচ্ছা নিয়ে জেকেজি-কে অনুমতি দেয়। প্রতিষ্ঠানটি প্রতারণা করতে পারে, এমন ধারণা আদৌ আধিদফতরের ছিল না।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, ইদানিং কোনো কোনো স্বার্থান্বেষী মহল কল্পিত ও মিথ্যা তথ্য নিয়ে গণমাধ্যমকে বিভ্রান্ত করে অধিদফতরের সুনাম নষ্ট করার প্রয়াস চালাচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদফর ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দিন-রাত কঠোর পরিশ্রম করে, একই সঙ্গে শক্তি ও নিষ্ঠা দিয়ে কোভিডের মতো মহাদুর্যোগ মোকাবিলা করছেন। এই রোগটির বিষয়ে কারোরই কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিল না। কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারি যদি অসততা বা অন্যায়ের আশ্রয় নেন সেক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের অবস্থান স্পষ্ট। অপরাধ প্রমাণিত হলে আইনানুযায়ী যথাযথ শাস্তি হোক, তা সকলেই প্রত্যাশা করে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান ও পদ্ধতিগত সাধারণ সীমাবদ্ধতাগুলোকে আমলে নেওয়া হচ্ছে না। সহানুভূতির বদলে তীর্যক মন্তব্য এবং খণ্ডিত ও বিকৃতভাবে তথ্য উপস্থাপন করা হচ্ছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, অশালীনভাবে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে ব্যক্তিগত চরিত্র হননের প্রচেষ্টাও দেখা যাচ্ছে উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এসবের পেছনে হীন ব্যক্তিস্বার্থও কাজ করছে বলে আমরা মনে করি। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, নিষ্ঠাবান কর্মকর্তারা এখন মিডিয়ায় বক্তব্য দিয়ে পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করার বিষয়ে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছেন না। ফলে আরও বেশি করে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়ছে। কেউ অপরাধ করলে তদন্তেই তা ধরা পড়বে এবং শাস্তি হবে। তাই বলে মিথ্যা তথ্য দিয়ে নির্দোষ ব্যক্তির চরিত্র হনন এবং তাদের অপরাধী হিসেবে চিত্রিত করা কাম্য নয়। স্বাস্থ্য অধিদফতর এ বিষয়ে সকলের সুদৃষ্টি ও সহযোগিতা কামনা করে।