‘মানব ও অর্থপাচার মোকাবিলায় আইনের কঠোর প্রয়োগ জরুরি’
১৩ জুলাই ২০২০ ০০:১১
ঢাকা: মানব ও অর্থপাচারের মত সংঘবদ্ধ অপরাধ মোকাবিলায় রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও প্রচলিত আইনের কঠোর প্রয়োগ জরুরি। পাশাপাশি আন্তঃদেশীয় অভিজ্ঞতা ও তথ্য বিনিময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে মনে করছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ বিশ্লেষকরা।
এজন্য প্রয়োজনীয় আইনি সংস্কার এবং সচেতনতা তৈরিতে নাগরিক সমাজের ভূমিকাও অপরিহার্য বলে মনে করেন তারা। নির্ধারিত ক্ষেত্রগুলোতে জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে সহায়তার পাশাপাশি অপরাধ মোকাবিলায় ন্যায়বিচার, জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিতে নিবিড় পর্যবেক্ষণ ও মতামত প্রদানের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট দেশের সরকার ও ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর সহায়তায় নাগরিক সমাজ কার্যকর অবদান রাখতে পারে।
রোববার (১২ জুলাই) বিকেলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) ও কুয়েত ট্রান্সপারেন্সি সোসাইটি (কেটিএস) আয়োজিত ‘সংঘবদ্ধ অপরাধ মোকাবিলায় নাগরিক সমাজের ভূমিকা’ শীর্ষক এক যৌথ ভার্চুয়াল সেমিনারে এসব মন্তব্য করেন বিশ্লেষকরা।
কেটিএসের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য আসরার হায়াতের সঞ্চালনায় সেমিনারে আলোচক হিসেবে অংশ নেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) চেয়ারপার্সন ডেলিয়া ফ্যারাইরা রোবিও, ইন্টার-পার্লামেন্টারি ইউনিয়ন (আইপিইউ) এর সম্মানসূচক প্রেসিডেন্ট ও সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী, ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি অফ কুয়েতের সাবেক সদস্য ড. হাসসান জোহার, কেটিএসের চেয়ারপার্সন মাজিদ আল মুতাইরি, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, এবং কুয়েত ইউনিভার্সটি- ল স্কুলের ড. দালাল আল সাইফ।
সেমিনারের সূচনা বক্তব্যে টিআই চেয়ারপারসন ডেলিয়া ফ্যারাইরা রোবিও বলেন, ‘দুর্নীতি বন্ধ করতে হলে অর্থপাচার বন্ধ করতেই হবে। সম্মিলিত ও আন্তঃদেশীয় প্রচেষ্টার মাধ্যমেই এধরণের সংঘবদ্ধ আন্তঃদেশীয় অপরাধ দমন করা সম্ভব। বিশেষ করে আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে সকল প্রকার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রভাবমুক্ত থাকতে হবে। এজন্য কর্তৃপক্ষের আইনি ও কারিগরি সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি অর্থনৈতিক সক্ষমতাও বৃদ্ধি করতে হবে।’
এসময় কেটিএসের চেয়ারপারসন মাজিদ আল মুতাইরি সাম্প্রতিক সময়ে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বহুল আলোচিত ও প্রচারিত অর্থ ও মানবপাচার, অবৈধ সুবিধা লাভ এবং আত্মসাতের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি এ ধরণের অপরাধ প্রতিরোধে কেটিএস-এর নানা প্রয়াস তুলে ধরেন।
তিনি কুয়েতে আটক বাংলাদেশি সংসদ সদস্যের অর্থ ও মানবপাচারে যুক্ত থাকার অভিযোগের বিষয়টি উল্লেখ করে বলেন, ‘কূটনৈতিক দায়মুক্তি না থাকলে হয়তো কুয়েতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতকেও আটক করা হতো।’
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান ‘অর্থ ও মানবপাচারে জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ততার অভিযোগ: প্রভাব ও সম্ভাবনা’ বিষয়ে বিশদ আলোচনা করেন। এসময় তিনি জাতীয় সংসদের প্রায় ৬২ শতাংশ সদস্য ব্যবসায়ী হওয়ার তথ্য উল্লেখ করে রাজনীতিতে ব্যবসায়ীদের অধিক মাত্রায় অন্তর্ভূক্তির বিষয়টির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
তিনি বলেন, ‘কুয়েতে আটক বাংলাদেশি সংসদ সদস্য ছাড়াও গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের একাধিক জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে উত্থাপিত অর্থ ও মানবপাচার, মাদক ব্যবসা, ক্ষমতার অপব্যবহার, ক্যাসিনো ব্যবসা ও নানা অবৈধ পন্থায় অবৈধ সম্পদ অর্জনসহ দুর্নীতির নানা অভিযোগ আছে। এটি বাংলাদেশের রাজনীতি ও জনপ্রতিনিধিত্বে দুর্বৃত্তায়নের একটি অসম্মানজনক দৃষ্টান্তও বটে।’
আলোচনায় ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি অফ কুয়েতের সাবেক সদস্য ড. হাসসান জোহার বলেন, ‘দুর্নীতি প্রতিরোধের দায়িত্বে নিয়োজিতরা সুস্পষ্টভাবেই ব্যর্থ হয়েছে। আইনি প্রক্রিয়ায় জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিত করে গুরুত্বপূর্ণ এ খাতের পুরো ব্যবস্থাপনা ও সংশ্লিষ্ট আইনি কাঠামো জোরদার করতে হবে।’
এ সময় ইন্টার-পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের (আইপিইউ) সম্মানসূচক প্রেসিডেন্ট সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘দুর্নীতি কোভিডের মতই এক ধরণের ভাইরাস। উৎস থেকেই এই ভাইরাস নির্মূল করতে না পারলে সাধারণ জনগণও দুর্নীতিতে আক্রান্ত ও সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়। তাই উৎস থেকেই দুর্নীতি নির্মূলে তৎপর হতে হবে। তাই দুর্নীতির ঘটনা এবং তা প্রতিরোধে আন্তঃদেশীয় অভিজ্ঞতা বিনিময় জরুরি।’
কুয়েত ইউনিভার্সটি- ল স্কুলের ড. দালাল আল সাইফ বলেন, ‘আন্তঃদেশীয় সংঘবদ্ধ অপরাধ দমন চুক্তি’ বিষয়ক জাতিসংঘের কনভেশন বাস্তবায়নে কুয়েতের ফৌজদারি আইনের ঘাটতি রয়েছে। সাম্প্রতিক মানব ও অর্থপাচারের ঘটনায় কুয়েতি নাগরিক ও জনপ্রতিনিধিদের একাংশের সম্পৃক্ততার অভিযোগের বিষয়টিতে স্পষ্ট যে কুয়েতের প্রয়োজনীয় আইনি সংস্কারের অপরিহার্য।
অর্থপাচার আন্তঃদেশীয় অভিজ্ঞতা রাজনৈতিক সদিচ্ছা সংঘবদ্ধ অপরাধ