ডিএনসিসির নতুন ১৮ ওয়ার্ডের উন্নয়নে আসছে ৪০২৫ কোটি টাকার প্রকল্প
১৪ জুলাই ২০২০ ০৮:১৮
ঢাকা: ২০১৬ সালে তেজগাঁও সার্কেলভুক্ত ১৬টি ইউনিয়নকে অন্তর্ভুক্ত করে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনকে সম্প্রসারিত করা হয়। এতে উভয় সিটি করপোরেশনে নতুন ১৮টি করে ওয়ার্ড যুক্ত হয়ে আয়তন আগের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যায়। এর আগে এসব এলাকার উন্নয়ন না হলেও গত সিটি নির্বাচনের পর উন্নয়নের ছোঁয়া লাগতে যাচ্ছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ১৮টি নতুন ওয়ার্ডে। এর জন্য ৪ হাজার ২৫ কোটি টাকার বেশি ব্যয় হবে বলে জানা গেছে।
এসব ওয়ার্ডের সড়ক নেটওয়ার্ক উন্নয়নের মাধ্যমে যান চলাচল সহযোগিতা বাড়ানো ও যানজট নিরসন, নর্দমা নির্মাণ ও খাল উন্নয়নের মাধ্যমে জলবদ্ধতা দূরীকরণ এবং এলইডি বাতি স্থাপনের মাধ্যমে পরিবেশগত উন্নয়ন ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এজন্য ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের নতুন ১৮টি ওয়ার্ডের সড়ক অবকাঠামো ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার নির্মাণ ও উন্নয়ন (ফেজ-১) শীর্ষক একটি প্রকল্প হাতে নিচ্ছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। এটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ৪ হাজার ২৫ কোটি ৬২ লাখ টাকা। মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে উপস্থাপন করা হচ্ছে প্রকল্পটি। অনুমোদন পেলে চলতি মাস থেকে ২০২২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন।
প্রকল্পের আওতায় প্রধান কার্যক্রম হচ্ছে- ১৮২ দশমিক ৭৮ কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণ ও উন্নয়ন, ২৩৩ দশমিক ৯৭ কিলোমিটার নর্দমা নির্মাণ ও উন্নয়ন, ২৮ দশমিক ৫১ কিলোমিটার খাল উন্নয়ন, ১২ হাজার ২৬৭টি এলইডি বৈদ্যুতিক বাতি স্থাপন, ৬৯ দশমিক ৪৮ একর ভূমি অধিগ্রহণ এবং থোক থেকে স্থাপনার ক্ষতিপূরণ দেওয়া।
পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে জানান, স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে প্রস্তাব পাওয়ার পর গত বছরের ১৭ জুন প্রকল্পটি নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা। ওই সভায় দেওয়া সুপারিশগুলো প্রতিপালন করে ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) সংশোধন করা হয়েছে। ফলে পরিকল্পনা কমিশনের পক্ষ থেকে একনেকে উপস্থাপনের সুপারিশ করা হয়েছে। প্রস্তাবিত প্রকল্পটি সরকারের সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার আওতায় পরিকল্পিত নগরায়ন এবং উন্নত নাগরিক সেবা প্রদান সংক্রান্ত সিটি করপোরেশনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের সঙ্গে সম্পর্কিত।
প্রকল্পের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, ২০১১ সালের ৪ ডিসেম্বর ঢাকা সিটি করপোরেশনকে দুইটি অংশে বিভক্ত করা হয়েছে। এর মাধ্যমে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন করপোরেশন (ডিএনসিসি) এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) সৃষ্টি করা হয়। এরপর ২০১৬ সালের ২৮ জুন বাংলাদেশ গেজেট প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে উত্তর সিটি করপোরেশনের আওতায় উত্তর পশ্চিমে অবস্থিত হরিরামপুর ইউনিয়ন এবং পূর্বাঞ্চলের উত্তরখান, দক্ষিণ খান, বাড্ডা, রারাইদ, ডুমনি, সাঁতারকুল ও ভাটারা ইউনিয়নের এলাকাগুলোকে ১৮টি ওয়ার্ডে বিভক্ত করে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ফলে ডিএনসিসি এলাকা ১১৪ দশমিক ৫৬ বর্গ কিলোমিটার বৃদ্ধি পেয়ে জনসংখ্যা ১ দশমিক ৫ গুণ বেড়ে গেছে।
প্রস্তাবে আরও বলা হয়ছে, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের এয়ারপোর্ট রোড ও প্রগতি স্মরণী সংলগ্ন ৭টি ইউনিয়নের পশ্চিমাংশ ও উত্তরা আবাসিক এলাকা সংলগ্ন হরিরামপুর ইউনিয়ন তুলনামূলকভাবে অধিক ঘনবসতিপূর্ণ। অধিকাংশ ইউনিয়নের বিদ্যমান রাস্তা ও রাস্তার পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থাদি অপর্যাপ্ত হওয়ায় অল্প বৃষ্টিতে রাস্তায় জলাবদ্ধতা এবং যানজটের সৃষ্টি হয়। অধিকাংশ রাস্তায় কোনো বৈদ্যুতিক আলো না থাকায় রাতের বেলায় চলাচলের ক্ষেত্রে নিরাপত্তাহীনতা লক্ষ্য করা যায়। এছাড়া বিদ্যমান খালগুলো রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ক্রমেই সংকুচিত হওয়ায় পানি নিষ্কাশন বিঘ্নিত হচ্ছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রকল্পটি প্রক্রিয়াকরণের দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকঠামো বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) শামীমা নার্গিস কমিশনের মতামত দিতে গিয়ে সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সম্প্রসারিত এলাকার উন্নয়ন ঘটবে। ওইসব ওয়ার্ডের সড়ক নেটওয়ার্ক, নর্দমা ও জলাবদ্ধতা নিরসন, এলইডি বাতি স্থাপনসহ অন্যান্য কার্যক্রমের মাধ্যমে নগরবাসী কাঙ্ক্ষিত নাগরিক সেবা লাভ করবে। এ পরিপ্রেক্ষিতে প্রকল্পটি একনেকে উপস্থাপনের সুপারিশ করা হয়েছে।’