লাঙ্গলবন্দ-মিনারবাড়ী সড়কে ব্যয় বাড়ছে ১৩৯ কোটি, সময় ৩০ মাস
১৯ জুলাই ২০২০ ০৮:৩০
ঢাকা: নারায়ণগঞ্জের লাঙ্গলবন্দ থেকে মিনারবাড়ী পর্যন্ত সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যয় বাড়ছে প্রায় ১৩৯ কোটি টাকা, যা মোট ব্যয়ের ১১৪ দশমিক ২০ শতাংশ। সেইসঙ্গে মেয়াদও বাড়ছে আড়াই বছর বা ৩০ মাস। এ জন্য সংশোধন করতে হচ্ছে ‘লাঙ্গলবন্দ-কাইকারটেক-নবীগঞ্জ জেলা মহাসড়কের লাঙ্গলবন্দ হতে মিনারবাড়ী পর্যন্ত সড়ক প্রশস্তকরণ’ প্রকল্প। প্রথম সংশোধনী প্রস্তাটি মঙ্গলবার (২১ জুলাই) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে উপস্থাপন করা হচ্ছে। এতে গণভবন থেকে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে সভাপতিত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা।
প্রকল্পটি সংশোধনের কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, সর্বশেষ ভূমি অধিগ্রহণ আইন অনুযায়ী জমির দাম ও ক্ষতি পূরণের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় এখানে অতিরিক্ত ৯৬ কোটি ৪৪ লাখ টাকা ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ ছাড়া ক্ষতিপূরণ ও ভূমি অধিগ্রহণের মোট প্রাক্কলিত ব্যয়ে ২০ শতাংশ হিসেবে ৪২ কোটি ৩০ লাখ টাকার সংস্থান করতে হচ্ছে। সেইসঙ্গে প্রকল্পের মেয়াদ বেড়ে যাওয়ায় সংশোধনী প্রস্তাব করা হয়েছে। এটিসহ আরও পাঁচটি প্রকল্প ওইদিন একনেকে উপস্থাপন করা হবে। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, ‘লাঙ্গলবন্দ-কাইকারটেক-নবীগঞ্জ জেলা মহাসড়কের লাঙ্গলবন্দ হতে মিনারবাড়ী পর্যন্ত সড়ক প্রশস্তকরণ প্রকল্পটির মূল ব্যয় ছিল ১২১ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। এখন প্রথম সংশোধনীর মাধ্যমে ১৩৮ কোটি ৮৩ লাখ টাকা বাড়িয়ে প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ২৬০ কোটি ৪১ লাখ টাকা। এক্ষেত্রে ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে ১১৪ দশমিক ২০ শতাংশ। এদিকে প্রকল্পের মূল অনুমোদিত মেয়াদ ছিল ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত। এরই মধ্যে ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়াই একবছর বাড়িয়ে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়েছিল। কিন্তু এতেও কাজ শেষ না হওয়ায় এখন নতুন করে আড়াই বছর সময় বাড়িয়ে ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রকল্পের সংশোধনী প্রস্তাবে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, লাঙ্গরবন্দ-কাইকারটেক-নবীগঞ্জ জেলা মহাসড়কটি ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ। বিবেচ্য প্রকল্পের আওতায় লাঙ্গলবন্দ হতে মিনারবাড়ী পর্যন্ত ৩ দশমিক ৭৪ কিলোমিটার সড়কাংশ উন্নয়নের জন্য প্রথম পর্যায়ে ভূমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব করা হয়। সড়কটির এএডিটি (অ্যানুয়্যাল অ্যাভারেজ ডেইলি ট্রাফিক) ১৩ হাজার ৬৫২টি। এর মধ্যে ভারি যানবাহন চার হাজার ৮৫০ এবং হালকা যানবাহন আট হাজার ৮০২টি। এছাড়া এই সড়কটি দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ শীতলক্ষ্যা নদী পার হয়ে নারায়ণগঞ্জ শহরে যাতায়াত করেন। তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু নির্মাণের পর সড়কটি গুরুত্ব আরও বেড়ে যাবে। অন্যদিকে প্রস্তাবিত সড়কটি আশপাশে অনেক শিল্প কারখানা ও জনবসতি গড়ে ওঠায় যানবাহন চলাচল অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া এই সড়ক ব্যবহার করে হিন্দু পুণ্যার্থীরা লাঙ্গলবন্দ অষ্টমী স্নান পালন করে। প্রতিবছর ভারত, নেপাল ও ভুটান থেকে প্রায় ১০ লাখ তীর্থযাত্রী এই সড়ক ব্যবহার করে পুরাতন ব্রক্ষ্মপুত্র নদে স্নান করতে আসেন। এ উপলক্ষ্যে প্রচুর যানবাহন চলাচল ও জনসমাগমের কারণে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা কষ্টকর হয়।
প্রস্তাবে আরও বলা হয়েছে, ইতোমধ্যেই ‘লাঙ্গলবন্দ-কাইকারটেক-নবীগঞ্জ জেলা সড়ক উন্নয়ন’ নামের অন্য একটি প্রকল্পের মাধ্যমে সড়কটি ৩ দশমিক ৭০ মিটার হতে (১২ ফুট) ৫ দশমিক ৫ মিটার (১৮ ফুট) প্রশস্ত করা হয়েছে। এরপর ২০১৫ সালের ২৭ মার্চ অষ্টমী স্নানের সময় এক দুঘর্টনায় পদদলিত হয়ে ১০ জন নিহত হওয়ায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সড়কটি ১১ মিটার অর্থাৎ ৩৬ ফুট প্রশস্তকরণের নির্দেশ দেওয়া হয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে সড়কটি ৩৬ মিটার প্রশস্ত করতে হলে ৮ দশমিক ৮ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ করা প্রয়োজন। প্রথম পর্যায়ে জরুরি ভিত্তিতে ভূমি অধিগ্রহণের জন্য প্রস্তাবিত প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছিল। এ প্রকল্পের আওতায় ভূমি অধিগ্রহণ শেষ করার পর দ্বিতীয় পর্যায়ে সড়কটি প্রশস্তকরণ ও অন্যান্য ভৌত কাজের জন্য বিনিয়োগ প্রকল্প গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয় সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। ফলে প্রকল্পে ব্যয় ও মেয়াদ বাড়াতে হচ্ছে।
প্রকল্পটির দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) শামীমা নার্গিস সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে নারায়ণগঞ্জ সড়ক বিভাগের অধীন লাঙ্গলবন্দ-কাইকারটেক-নবীগঞ্জ জেলা মহাসড়কটি লাঙ্গলবন্দ হতে মিনারবাড়ী পর্যন্ত সড়ক প্রশস্ত করতে ৮ দশমিক ৮৪ একর ভূমি অধিগ্রহণ করতে হবে। পরবর্তীতে দ্বিতীয় পর্যায়ে বিনিয়োগ প্রকল্পের আওতায় অপেক্ষাকৃত দ্রুত সময়ে ওই সড়কটি যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ করা হবে। ফলে অষ্টমী স্নান উপলক্ষ্যে হিন্দু তীর্থ যাত্রীদের জন্য নিরবচ্ছিন্ন ও নিরাপদ সড়ক যোগাযোগ স্থাপন সম্ভব হবে। ফলে প্রকল্পটির সংশোধিত প্রস্তাব একনেক উপস্থাপনের সুপারিশ করা হয়েছে।’
একনেকে উঠতে যাওয়া অন্য ৫ প্রকল্প হচ্ছে
খুলনা শিপইয়ার্ড সড়ক প্রশস্তকরণ ও উন্নয়ন (প্রথম সংশোধিত) প্রকল্প; এছাড়া কুমিল্লার তিতাস ও হামনা উপজেলায় তিতাস নদীর (লোয়ার ইতিহাস) পুনঃখনন; গাইবান্ধা জেলার সদর ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলার গোঘাট ও খানাবাড়িসহ পার্শ্ববর্তী এলাকা যমুনা নদীর ডান তীরের ভাঙ্গন হতে রক্ষা; চর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড সেটেলমেন্ট প্রোজেক্ট-ব্রিজিং (অতিরিক্ত অর্থায়ন) (বাপাউবো অংশ) এবং বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের ফসলের নিবিড়তা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্প।