ভারী বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা, পাহাড় থেকে বাসিন্দাদের সরানোর চেষ্টা
২১ জুলাই ২০২০ ২০:৫৩
চট্টগ্রাম ব্যুরো: কখনো ভারী, কখনো মাঝারি মাত্রার বৃষ্টিতে চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। সড়ক ছাপিয়ে পানি ঢুকে গেছে একটি হাসপাতালসহ বিভিন্ন ভবনেও। এদিকে অব্যাহত বৃষ্টিতে ধসের আশঙ্কায় পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসরতদের সরে যাবার নির্দেশ দিয়েছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। তাদের জন্য নগরীতে ১৯টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।
সোমবার (২০ জুলাই) থেকেই চট্টগ্রাম নগরীসহ আশপাশের এলাকায় হালকা থেকে মাঝারি আকারে বৃষ্টিপাত শুরু হয়।
মঙ্গলবার বেলা গড়াতেই কখনো কখনো সেই বৃষ্টিপাত ভারী রূপ নেয়। বৃষ্টির সঙ্গে জোয়ারের পানি মিশে জলাবদ্ধতা তৈরি হয় নগরীর নিচু এলাকাগুলোতে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মঙ্গলবার দুপুরে নগরীর বাকলিয়া, প্রবর্তক মোড়, চান্দগাঁও, বহদ্দারহাট, হালিশহর, সরাইপাড়া, চকবাজার, ডিসি রোড, কাপাসগোলা, চাক্তাই, আছদগঞ্জ খাতুনগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় পানি জমে আছে। সবচেয়ে বেশি প্রায় হাঁটু পরিমাণ পানি দেখা গেছে প্রবর্তক মোড়ে। এর মধ্যেই যানবাহন এবং লোকজন চলাচল করতে দেখা গেছে।
চট্টগ্রাম নগরীতে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের পরিচালক সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাহ আলী সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রবর্তক মোড়ে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছিল। সেখানে আমাদের কালভার্ট ও ড্রেন সংস্কারের কাজ চলমান আছে। সেজন্য পানিপ্রবাহে সময় লেগেছে। এর বাইরে আরও কয়েকটি স্পটে পানি জমে থাকার খবর পেয়ে আমাদের কুইক রেসপন্স টিম গিয়েছিল। কিন্তু সেখানকার পরিস্থিতিকে জলাবদ্ধতা বলা যাবে না। শুধুমাত্র পানির চাপ ছিল। পানি ড্রেন হয়ে খালে যাওয়া পর্যন্ত সময়টুকু লেগেছিল।’
এদিকে বরাবরের মতো বৃষ্টি ও জোয়ারের পানি ঢুকে ভোগান্তি তৈরি হয়েছে চট্টগ্রাম নগরীর আগ্রাবাদ মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতালে। সেখানে কোভিড আক্রান্তদেরও চিকিৎসা চলছে। ভারী বর্ষণ শুরুর পর বেলা ১২টার দিকে হাসপাতালটিতে পানি ঢুকতে শুরু করে। প্রায় দেড় থেকে দুঘণ্টা স্থায়ী ছিল পানি। এসময় হাসপাতালের নিচতলার প্রশাসনিক ব্লক, অভ্যর্থনা কক্ষ এবং শিশু ওয়ার্ডে প্রায় হাঁটু পরিমাণ পানি ছিল।
কৌশিক দাশ নামে এক রোগীর স্বজন সারাবাংলাকে জানান, দুপুরে হাসপাতালের ভেতরে মেঝেতে ময়লা-আবজর্না ভাসছিল। ব্যবহৃত গ্লাভস, মাস্ক, পলিথিন, গজ ব্যান্ডেজসহ নানা কিছু ভাসছিল। নিচে পানি, উপরে বিছানায় জড়োসড়ো হয়েছিলেন রোগী ও তাদের স্বজনরা।
হাসপাতালের পরিচালক ডা. নুরুল হক বলেন, ‘সোমবারও পানি উঠেছিল। প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে হাসপাতালে পানি ওঠে এবং ভোগান্তিতে পড়তে হয়। তবে কোভিড রোগীদের সমস্যা হয়নি। তাদের চিকিৎসা চলছে নতুন ভবনে। পুরনো ভবনে রোগীদের সমস্যা হয়েছে।’
আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় ৩৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকার কারণে উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্রবন্দরগুলোর ওপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এ জন্য চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে উপকূলের কাছাকাছি থাকতে বলা হয়।
পতেঙ্গা আবহাওয়া দফতরের কর্তব্যরত সহকারী আবহাওয়াবিদ উজ্জ্বল কান্তি পাল বলেন, ‘মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামসহ কয়েকটি উপকূলীয় বিভাগের ওপর মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণের সতর্কতা জারি করা হয়েছে।’
এদিকে ভারী বর্ষণ শুরুর পর নগরীর বিভিন্ন পাহাড় থেকে বাসিন্দাদের সরাতে মাঠে নামে জেলা প্রশাসনের টিম। নগরীর মতিঝর্ণা, বাটালি হিল, একে খান পাহাড়, ট্যাংকির পাহাড়, আমিন জুট মিলস এলাকা, রউফাবাদ, খুলশী, পাহাড়তলি, ফয়’সলেক, আকবর শাহ, ঝিল-১,২,৩ নম্বর এলাকা, কৈবল্যধাম বিশ্বকলোনী এলাকা, ফিরোজ শাহ, ফরেস্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট, বায়েজিদ-ফৌজদারহাট সিডিএ লিংক রোড এলাকা থেকে লোকজনকে সরে যেতে মাইকিং করা হয়েছে। নগরীর চান্দগাঁও, বাকলিয়া, আগ্রাবাদ এবং কাট্টলী সার্কেলের আওতাধীন এলাকায় ১৯টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সার্কেলের ছয় জন সহকারী কমিশনার (ভূমি) এবং স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলররা এসব আশ্রয়কেন্দ্রের তত্ত্বাবধানে আছেন।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. তৌহিদুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘১৭টি পাহাড় থেকে বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে মাইকিং করা হচ্ছে। স্থানীয় মসজিদ থেকেও বারবার বলা হচ্ছে। আমরা ১৯টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রেখেছি। আশ্রয়কেন্দ্রে সামাজিক দূরত্ব মেনে লোকজনকে রাখার ব্যবস্থাও করা হয়েছে।’