সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে, ওয়ারীতে বাড়ছে না লকডাউনের সময়
২৪ জুলাই ২০২০ ০১:২৯
ঢাকা: শুরুর কয়েকদিনের ধাক্কা কাটিয়ে লকডাউন কার্যকর প্রমাণিত হতে যাচ্ছে রাজধানীর দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ওয়ারীতে। পূর্বনির্ধারিত ২১ দিনের লকডাউনের এরই মধ্যে ১৯ দিন পেরিয়ে গেছে। তাকে সংক্রমণ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আসায় এবং বাসিন্দাদেরও লকডাউনে আগ্রহ না থাকায় আর সময় বাড়াতে চাইছে না বাস্তবায়ন কমিটি। কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রতিদিন যে পরিমাণ নমুনা সংগ্রহ আসছে এবং পজিটিভ রিপোর্ট আসছে, তাতে সংক্রমণ বাড়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।
লকডাউন এলাকার স্বেচ্ছাসেবীদের সমন্বয়কারী মো. নাঈম সারাবাংলাকে বলেন, সংক্রমণ প্রতিরোধ ও বাসিন্দাদের সচেতনতা নিশ্চিত করতে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছিল। সে অনুযায়ী বাস্তবায়নও চলছে। কিন্তু আমরা দু’টি বিষয় পর্যালোচনা করে আর বাড়ানোর প্রয়োজন মনে করছি না।
নাঈম জানান, এখানকার বাসিন্দারা এখন অনেকটাই সচেতন। প্রথম কয়েকদিন তারা যেভাবে গেটে ভিড় করেছিলেন, পরে সেই প্রবণতা কমে গেছে। আর খুব প্রয়োজনে বাইরে যেতে হলেও সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করেই বের হচ্ছেন। অন্যদিকে করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ ও সংক্রমণ— কোনোটিই মাত্রা ছাড়ায়নি বলে মনে করছেন তারা।
নাঈম বলেন, প্রথমে আমরা ভেবেছিলাম বাসিন্দারা ইচ্ছা করেই নমুনা দিচ্ছে না। এটা ভেবে নমুনা সংগ্রহের জন্য সরকার নির্ধারিত দুইশ টাকাও মওকুফ করা হয়। বাড়ি বাড়ি গিয়েও নমুনা সংগ্রহের উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু উপসর্গ নিয়ে নমুনা দেওয়ার মতো মানুষই ছিল কম। আবার প্রতিদিনের সংগ্রহ করা নমুনাতেও পজিটিভ আসার হারও কম। তাই আমরা মনে করি, এই এলাকায় আর লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানোর প্রয়োজন নেই। বাসিন্দাদের সচেতন থাকলেই হবে।
রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) তথ্য অনুযায়ী, গত ৪ জুলাই থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ওয়ারী এলাকা থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ২৯৩ জনের। এর মধ্যে ২১ জুলাই পর্যন্ত সংগৃহীত ২৫৫টি নমুনা পরীক্ষায় আক্রান্ত পাওয়া গেছে ৮৮ জন। বাকি ৩৮ জনের রিপোর্ট এখনো পাওয়া যায়নি।
আইইডিসিআরের তথ্য বলছে, ৪ জুলাই করোনা উপসর্গ থাকা ১৬ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এর মধ্যে পজিটিভ আসেন সাত জন। ৫ জুলাই সংগ্রহ করা ১৯ নমুনার মধ্যে পজিটিভ ছিলেন ১০ জন, ৬ জুলাই ১৬ জনের মধ্যে পজিটিভ ছিলেন সাত জন, ৭ জুলাই ১৮ জনের মধ্যে পজিটিভ ছিলেন সাত জন, ৮ জুলাই ২৬ জনের মধ্যে পজিটিভ ছিলেন ১২ জন, ৯ জুলাই ১০ জনের মধ্যে পজিটিভ ছিলেন পাঁচ জন। এরপর ১২ জুলাই ছাড়া বাকি দিনগুলোতে নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে সংক্রমণ শনাক্তের হার অনেক কম আসে। ওই দিন ১৩ জনের নমুনা সংগ্রহ করলে ১২ জনই পজিটিভ এসেছিলেন।
বাকি দিনগুলোর মধ্যে ১০ জুলাই ১৫টি নমুনার মধ্যে সংক্রমণ শনাক্ত হয় ৩ জনের, ১১ জুলাই ১৪ নমুনায় শনাক্ত হন ৩ জন, ১৩ জুলাই ১০ নমুনায় ৪ জন, ১৪ জুলাই ৯ নমুনায় একজন, ১৫ জুলাই ১৫ নমুনায় ৩ জন, ১৬ জুলাই ১৩ নমুনায় ৩ জন, ১৭ জুলাই ১১ নমুনায় ৩ জন, ১৯ জুলাই ৮ নমুনায় ২ জন ও ২০ জুলাই ২৪ নমুনায় ৮ জন করোনা সংক্রমিত হিসেবে শনাক্ত হন। আর ১৮ জুলাই ১৫টি নমুনা সংগ্রহ করা হলেও কোনোটিই পজিটিভ আসেনি। এর বাইরে ২২ জুলাই ১৭ জন ও ২৩ জুলাই ২১ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হলেও তাদের নমুনা পরীক্ষার ফল এখনো মেলেনি।
লকডাউনের সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সারওয়ার হোসেন আলো সারাবাংলাকে বলেন, লকডাউনের কারণে সংক্রমণ পরিস্থিতি অনেকটাই ভালো। তাছাড়া বাসিন্দারাও সচেতন। তাই আর সময় না বাড়াতে সংশ্লিষ্টদের জানিয়েছি। তারাই সিদ্ধান্ত নেবেন। সিদ্ধান্ত নিয়ে জানালে আমরা সে অনুযায়ী কাজ করব।
এ বিষয়ে ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) শাহ মো. এমদাদুল হক সারাবাংলাকে বলেন, আমাদের লক্ষ্য সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা। এটি নিয়ন্ত্রণ হলে কার্যকর কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ২৫ জুলাই লকডাউনের শেষ দিন তারা সিদ্ধান্ত দেবেন। ওই দিনই জানা যাবে, লকডাউনের মেয়াদ বাড়বে কি না।