চট্টগ্রামে জমেনি পশুর বাজার, ক্রেতার ‘পথ চেয়ে’ বিক্রেতারা
২৪ জুলাই ২০২০ ২২:১০
চট্টগ্রাম ব্যুরো: করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতিতে বন্দরনগরী চট্টগ্রামে কোরবানির পশুর কেনা-বেচা শুরু হলেও ক্রেতার সমাগম খুবই কম। অন্যান্য বছরের তুলনায় বাজারে গরু-ছাগলের পরিমাণ কম। তবে দূর-দূরান্ত থেকে আসা বেপারিরা বসে আছেন ক্রেতার আশায়। আরও দুই-তিনদিন পর বাজার ক্রেতায় ভরপুর হবে এবং বিক্রি বাড়বে বলে আশা তাদের।
বৃহস্পতিবার (২৩ জুলাই) থেকে চট্টগ্রাম নগরীতে সাতটি বাজারে আনুষ্ঠানিকভাবে পশু বেচাকেনা শুরু হয়েছে। এর মধ্যে তিনটি স্থায়ী ও চারটি অস্থায়ী বাজার।
স্থায়ী বাজারগুলো হচ্ছে সাগরিকা পশুর বাজার, বিবিরহাট গরুর হাট ও পোস্তারপাড় ছাগলের বাজার। অস্থায়ী চারটি বাজার হচ্ছে- কমল মহাজন হাট পশু বাজার, সল্টগোলা গরুর বাজার ও ৪১ নম্বর ওয়ার্ডে বাটারফ্লাই পার্কের দক্ষিণে টিকে গ্রুপের খালি মাঠ এবং কর্ণফুলী পশুর বাজার।
শুক্রবার সাগরিকা ও বিবিরহাট বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, সামিয়ানা ও ত্রিপল টানিয়ে সারিবদ্ধ খুঁটিতে বেঁধে রাখা হয়েছে বিভিন্ন সাইজের গরু। প্রতিবছরের মতো এবারও কুষ্টিয়া, নওগাঁও, নাটোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, ফরিদপুর, কুমিল্লা, মেহেরপুর থেকে গরু এসেছে। দুপুরেও বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ট্রাকে গরু আসতে দেখা গেছে। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় গরু একেবারে কম।
সাগরিকা বাজারের বেপারি মো. মহিউদ্দিন সওদার সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা ১০-১২ জন মিলে এবার ১৫০টির মতো গরু এনেছি কুষ্টিয়া থেকে। গত তিনদিনে চারটি বিক্রি করেছি। আজ (শুক্রবার) সকালে একটি বিক্রি হয়েছে।’
সাগরিকা বাজারের অধীন ভাগিনার মাঠ ১০ জন মিলে ভাড়া নিয়ে গড়ে তুলেছে ছোট্ট বাজার। ভাড়া নেওয়া মো. রায়হান সারাবাংলাকে বলেন, ‘১০০টির মতো গরু এসেছে। গতবার আমরা বাজারই শুরু করেছিলাম কমপক্ষে ৫০০টি গরু নিয়ে। গরুও কম, ক্রেতাও কম। ক্রেতা আসছে, গরু দেখছে, তবে কিনছে না। যাচাইবাছাই করছে। চট্টগ্রামে একটা নিয়ম আছে যে, সবাই গরু কেনেন কোরবানির ২-৩ আগে। আশা করছি সোম-মঙ্গলবার থেকে বাজার পুরোপুরি জমে যাবে।’
সাগরিকা বাজারের অধীন বাগদাদ মাঠে শুক্রবার দুপুরে তিনটি ট্রাকে করে গরু এসেছে ৪৫টি। মূলত শুক্রবার এই মাঠে প্রথম গরু এসেছে।
বাগদাদ মাঠ ভাড়া নেওয়া আসলাম হোসেন সওদাগর সারাবাংলাকে বলেন, ‘কাস্টমার একদম নেই। কেউ এসে দামও জিজ্ঞেস করছে না। আরও গরু আসলে তখন হয়ত কাস্টমার আসবে।’
জেলা প্রাণি সম্পদ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, এবার কোরবানিতে চট্টগ্রাম জেলায় পশুর চাহিদা সাত লাখ ৩১ হাজার নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে জেলায় খামার আছে আট হাজারের মতো। সেখান থেকে আসবে ছয় লাখ ৮৯ হাজার ২২টি পশু।
এসব পশুর মধ্যে গরু চার লাখ ৬৪ হাজার ৫৭২টি, মহিষ ৫৭ হাজার ১৩১টি, ছাগল ও ভেড়া এক লাখ ৬৭ হাজার ২১০টি। অবশিষ্ট ৪১ হাজারের মত গরু দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসবে। নগরীর স্থায়ী-অস্থায়ী ছয় হাটের পাশাপাশি ১৪ উপজেলার আরও প্রায় শতাধিক হাট বসবে।
বিবিরহাট বাজারের বেপারি মো. শাহেদ সওদাগর সারাবাংলাকে বলেন, ‘করোনার কারণে মানুষের আর্থিক অবস্থা দুর্বল হয়ে গেছে। এবার সাত লাখ পশুর চাহিদা হবে না। এক-দেড় লাখ কম হতে পারে। গরুও কম আসবে। দূর-দূরান্তের জেলা থেকে সব বেপারিরা গরু আনবে না। সবার মধ্যেই বিক্রি হবে কি না এমন একটা ভয় আছে।’
করোনার কারণে নির্দেশনা অনুযায়ী হ্যান্ড স্যানিটাইজার, জীবাণুনাশক, মাস্কের ব্যবস্থা করা হয়েছে প্রতিটি পশুর বাজারে।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সামসুদ্দোহা বলেন, জানিয়েছেন, স্বাস্থ্যসুরক্ষা মানার বিষয়টি তদারকির জন্য প্রতি বাজারে সিটি করপোরেশনের টিম আছে কি না তা পর্যবেক্ষণ করছে। এ বিষয়ে ইজারাদারদের গাইডলাইনও দেওয়া হয়েছে।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে পশুর বাজারে অহেতুক লোকসমাগম না করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
করোনা করোনা মোকাবিলা করোনাভাইরাস কোরবানি নভেল করোনাভাইরাস পশুর হাট