দেবে যাওয়া ১০ কিলোমিটার নামেই ‘মহাসড়কে’, খানাখন্দ শত শত!
২৭ জুলাই ২০২০ ০৯:১৪
লক্ষ্মীপুর: দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় চলাচলের অনুপযোগী হয়ে গেছে লক্ষ্মীপুর-ভোলা-বরিশাল আঞ্চলিক মহাসড়কটি। স্থানীয়দের অভিযোগ, সড়ক তৈরির সময় কাজ হয়েছে নিম্নমানের। এর ওপর বালুবাহী ১০ চাকার ভারি যানবাহন চলাচলের কারণে সড়ক দেবে গেছে। এতে প্রতিদিনই ঘটছে বিভিন্ন দুর্ঘটনা। আর বৃষ্টি হলে তো কথাই নেই। লক্ষ্মীপুর থেকে মজুচৌধুরীর হাট পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার এলাকায় সড়কে যানবাহন রীতিমতো থমকে থাকে। এতে এলাকাবাসীকে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
এলাকাবাসী বলছেন, ব্যস্ততম লক্ষ্মীপুর-ভোলা-বরিশাল আঞ্চলিক মহাসড়কের লক্ষ্মীপুর থেকে মজুচৌধুরীর হাট পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার অংশ জায়গা জায়গায় দেবে গেছে। এর ফলে এই অংশে ছোটবড় কমপক্ষে পাঁচশ খানাখন্দ তৈরি হয়েছে। এ অবস্থায় নামে ‘মহাসড়ক’ হলেও একে আর ‘মহাসড়ক’ বলতে রাজি নন। জরুরিভিত্তিতে এখনই মেরামত করা না গেলে ঈদে ঘরমুখো ২১ জেলার হাজার হাজার যাত্রীকে ব্যাপক ভোগান্তি পোহাতে হবে বলে আশঙ্কা তাদের।
এদিকে, যানবাহনের চালক ও যাত্রীসহ স্থানীয়রা দীর্ঘদিন ধরে সড়কটি স্থায়ীভাবে মেরামতের দাবি জানিয়ে আসছেন। তবে লক্ষ্মীপুর সড়ক বিভাগের পক্ষ থেকে বড় বড় গর্তে দেওয়া হচ্ছে মাটি। চালকরা উদ্যোগ নিয়ে স্বেচ্ছাশ্রমে বিছিয়েছেন ইট।
চালকরা বলছেন, সড়ক ও জনপথ বিভাগ থেকে সড়ক মেরামত না করায় তারা নিজেরা উদ্যোগ নিয়ে বালু ও মাটি দিয়ে সড়কটি কয়েকবার মেরামত করেছেন। তবে বৃষ্টি হলেই তাদের সেই মেরামত ভেস্তে যায়। বৃষ্টির পানিতে বালু-মাটি সরিয়ে দিয়ে ফের গর্ত বেরিয়ে আসে। ফলে এই সড়কে স্বাভাবিক গতি তো দূরের কথা, ধীর গতিতে চলাচলও দায় হয়ে পড়েছে। আর গর্তে জমা বৃষ্টির পানির ওপর দিয়ে ১০ চাকার বালুভর্তি গাড়ি যেতেই যেতেই সড়কের কার্পেটিং উঠে সৃষ্টি হচ্ছে আরও অসংখ্য বড় বড় গর্ত। এসব গর্তে চাকা আটকে ঘটছে দুর্ঘটনাও।
স্থানীয় চেয়ারম্যান ইউছুফ ছৈয়াল জানান, অবৈধ বালু পারিবহনে ভারি যানবাহন চলাচলে দেবে গেছে সড়ক। বালুভর্তি গাড়ি আটকে প্রায়ই যানজট লেগে থাকে। সড়কের পাশে বালু ফেলে রাখায় চলাচল করা যায় না। ধুলাবালুতে মানুষের দুর্ভোগ পৌঁছেছে চরমে। স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্ত লোকজন লিখিত অভিযোগ দিলেও তা আমলে নিচ্ছে না প্রশাসন।
লক্ষ্মীপুর সড়ক বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. মোজাম্মেল হক জানান, ২০১৯ সালের ১৯ ডিসেম্বর সড়কটির লক্ষ্মীপুর থেকে মজুচৌধুরীর হাট পর্যন্ত ১০ দশমিক ৫ কিলোমিটার (চার লেন) ৩৬ ফুট প্রশস্ত করার জন্য প্রায় ১০০ কোটি টাকা টেন্ডার হয়েছে। মন্ত্রণালয়ে তুলনামূলক বিবরণী (চিএস) পাস না হওয়ার কারণে কার্যাদেশ পাচ্ছে না ঠিকাদার। আর কার্যাদেশ না পাওয়ার কারণে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজও শুরু করতে পারছে না।
জানা গেছে, সড়কটির বরিশাল, লায়েরহাট, ভেদরিয়া, ভোলা, ইলিশা, মজুচৌধুরীর হাট হয়ে লক্ষ্মীপুর পর্যন্ত জাতীয় মহাসড়ক (৮০৯) হিসেবে উন্নীত হওয়ার প্রক্রিয়া অনুমোদন হয়েছিল। কিন্তু লক্ষ্মীপুরের আগের অংশে জাতীয় মহাসড়কের কাজ চললেও লক্ষ্মীপুর অংশে সে কাজ হচ্ছে না।
উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মোজাম্মেল আরও জানান, সড়কটি উন্নয়নের জন্য গত বছর ১৯ ডিসেম্বর টেন্ডার হয়েছিল। এ কারণে সড়কটি সংস্কার করা যাচ্ছে না। সড়কটির টেন্ডার হওয়ার কারণে রিপেয়ারিংয়ের কোনো টেন্ডার না হওয়ায় সড়কের অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে গেছে। মন্ত্রণালয় যত দ্রুতসম্ভব তুলনামূলক বিবরণী পাস হওয়ার পরই সড়কের কাজ শুরু করা যাবে।
একই প্রক্রিয়ার কথা জানালেন লক্ষ্মীপুর সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী সুব্রত দত্তও। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, লক্ষ্মীপুর থেকে মজুচৌধুরীর হাট পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার সড়ক কয়েকবার মেরামত করা হয়েছে। ঈদ সামনে রেখে আবার মেরামত করা হয়েছে। বালুভর্তি ১০ চাকার ভারী যানবাহন বন্ধ না থাকায় সড়ক আবার ভেঙে গেছে। বিষয়টি কয়েকবার মিটিংয়ে তুলেছি। কিন্তু কাজ হয়নি।
নির্বাহী প্রকৌশলী সুব্রত বলেন, লক্ষ্মীপুর-ভোলা-বরিশাল আঞ্চলিক মহাসড়কটি তিনটি প্যাকেজে বরিশাল থেকে একশত কোটি টাকার টেন্ডার হয়েছে। ঠিকাদার নিয়োগ হলে কাজ শুরু হবে।
লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শফিকুর রিদোয়ান আরমান শাকিল জানান, মজুচৌধুরীর হাট এলাকায় কয়েকটি বালুর স্তূপ করে কয়েকজন প্রভাবশালী বালুর ব্যবসা করছেন। এতে স্থানীয়দের সমস্যা হচ্ছে বলে তিনি অভিযোগ পেয়েছেন। বালুবাহী ভারী যানবাহন যাতায়াতে সড়ক দেবে গর্ত তৈরি হওয়ার অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান তিনি।
ইউএনও চেয়ারম্যান নির্বাহী প্রকৌশলী লক্ষীপুর-ভোলা-বরিশাল মহাসড়ক সড়ক ও জনপথ বিভাগ