বন্যা মোকাবিলায়ও সরকার উদাসীন— মির্জা ফখরুল
২৭ জুলাই ২০২০ ১৬:৩৫
ঢাকা: করোনাভাইরাসের মতোই বন্যা মোকাবিলার ক্ষেত্রেও ‘সরকার উদাসীন ও নিষ্ক্রিয়’ বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘করোনা মোকাবিলায় যেমন সরকার একেবারেই ব্যর্থ, চরম উদাসীনতা, অবহেলা ও দুর্নীতির কারণে গোটা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। ঠিক তেমনি বন্যার বিষয়েও সরকারের নীরবতা, নিষ্ক্রিয়তা মানুষকে আতঙ্কগ্রস্ত করছে।’
সোমবার (২৭ জুলাই) দুপুরে উত্তরায় নিজের বাসা থেকে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন। এসময় তিনি বলেন, ‘আমরা অনির্বাচিত সরকারের এই অবহেলা উদাসীনতা এবং নিষ্ক্রিয়তার নিন্দা জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে বন্যা প্রয়োজনীয় ত্রাণের যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।’
দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীসহ দেশবাসীকে বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘বিএনপি সবসময় যেকোনো দুযোর্গে মানুষের পাশে দাঁড়ায়। সর্বশেষ করোনা দুযোর্গে পাশে দাঁড়িয়েছে বিএনপি। বন্যাদুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়াতে স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুকে আহ্বায়ক করে একটি জাতীয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। অবিলম্বে এই কমিটি কাজ শুরু করবে।’
বিএনপি মহাসচিব জানান, তাদের এই জাতীয় কমিটির সদস্যরা হলেন— দলের ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ বুলু, মো. শাহজাহান, আব্দুল আউয়াল মিন্টু, এ জেড এম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য মিজানুর রহমান মিনু, জয়নুল আবদিন ফারুক, মনিরুল হক চৌধুরী, হেলালুজ্জামান তালুকদার লালু, আবদুল হাই, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, হারুন অর রশীদ, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, আসাদুল হাবিব দুলু, সাখাওয়াত হাসান জীবন, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, বিলকিস আক্তার জাহান শিরিন, শ্যামা ওবায়েদ, সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক কামরুজ্জামান রতন, ত্রাণ ও পূর্নবাসন বিষয়ক সম্পাদক আমিনুর রশীদ ইয়াসিন, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, কেন্দ্রীয় নেতা তাইফুল ইসলাম টিপু, মুনির হোসেন, বেলাল আহমেদ, আমিরুল ইসলাম খান আলীম, আমিনুল ইসলাম, শফিকুল ইসলাম মিলন, নেওয়াজ হালিমা আরলি, জেড খান মো. রিয়াজ উদ্দিন নসু, রফিকুল ইসলাম, তাসভীরুল ইসলাম, আব্দুল লতিফ জনি, জি এম সিরাজ, আমিনুল ইসলাম, এস এ জিন্নাহ কবির, মাইনুল হাসান সাদিক. জাকির হোসেন বাবলু ও রফিকুল ইসলাম পাপ্পু।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “একজন মন্ত্রী তো বলেই ফেললেন ‘বন্যার বিষয়ে এতটুকু চিন্তিত নই।’ ভালো কথা। এই যে প্রতিদিন গণমাধ্যমে আসছে— আমরা বন্যার্ত মানুষের আহাজারি ও তাদের অসহায়ত্ব সহায়-সম্বল হারিয়ে সড়ক অথবা বাঁধের ওপরে আশ্রয় নেওয়া শিশু সন্তান, বৃদ্ধ পিতা-মাতাকে নিয়ে খোলা আকাশের নিচে অভুক্ত থাকা— এই বিষয়গুলো তাদের চিন্তিত করে না। তারা (সরকার) তো ধরাছোঁয়ার বাইরে। জনগণের কাছে তাদের জবাবদিহিতা করতে হয় না। করোনা-বন্যা এসব দুযোর্গ এলে বরং তারা খুশি হয় এই কারণে যে দুর্নীতির নতুন সুযোগ তৈরি হলো।’
তিনি বলেন, ‘ভারতের অভিন্ন নদীগুলোর সকল বাঁধ ব্যারেজের গেট খুলে দেওয়ায় উজান থেকে নেমে আসা বন্যার পানি বাংলাদেশে ব্রক্ষপুত্র, যমুনা, মেঘনা, মহানন্দা, পদ্মা, তিস্তা ও ধরলা নদীর অবাহিকায় প্রায় ৩৪টি জেলা এরই মধ্যে প্লাবিত হয়ে গেছে। কয়েকটি জেলায় এক মাসের মধ্যে দুই-তিন বার বন্যার পানি উজান থেকে এসে ঘর-বাড়ি, ফসলের ক্ষেত ভাসিয়ে নিয়ে গেছে।’
‘ভারতের সঙ্গে যে অভিন্ন নদী প্রায় ১৫৪টি, একমাত্র পদ্মার ফারাক্কা বাঁধ ছাড়া কোনোটারই কোনো পানিবণ্টন চুক্তি ভারতের অনীহার কারণে সম্পন্ন হয়নি। তিস্তার চুক্তির কথা ফলাও করে এই সরকার প্রচার করলেও গত এক দশকে কোনো চুক্তি করতে সক্ষম হয়নি। এই সরকারের নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণে প্রায় প্রতিবছর বাংলাদেশের নদী অববাহিকায় বসবাসকারী মানুষেরা এই বন্যায় আক্রান্ত হয়ে সর্বম্বান্ত হচ্ছে। ভারত-বাংলাদেশ যৌথ নদী কমিশন প্রায় নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছে,’— বলেন মির্জা ফখরুল।
বন্যা এলাকায় সরকার ত্রাণ দিলেও কেন উদাসীনতার অভিযোগ করছেন?— এমন প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘এখন পর্যন্ত বন্যার জন্য কী পরিমাণ ত্রাণ সরকার দিয়েছে, তা দেশবাসী জানেই না। এই ধরনের কোনো রিপোর্ট আমরা পাইনি যে বন্যার জন্য ত্রাণ কোথাও..। যেমন আমি জানি যে, কুড়িগ্রাম, লালমনিহাট জেলায় প্রথম দিকে কিছু সাহায্য দিয়েছে। কিন্তু আমরা মিডিয়াগুলোতেও দেখতে পারছি যে, তারা বলছে যে তারা কেউ ত্রাণ পাচ্ছে না।’
তিনি বলেন, ‘দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই সরকার যতবারই ত্রাণের বিষয়ে গেছে, আপনারা দেখছেন যে কোভিডের সময় ত্রাণ বিতরণ করতে গিয়ে কী ধরনের চুরি হয়েছে। কোনো কিছুই তারা বাদ রাখেনি— চাল, সয়াবিন তেল থেকে শুরু করে সবই চুরি করেছে। এখন বন্যার যে ত্রাণ অবিলম্বে শুরু করা দরকার তার কোনো কার্য্ক্রমই আমরা দেখতে পারছি না। এখন সব শক্তিকে এক করে ত্রাণের ব্যবস্থা করতে হবে, খাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই অবস্থা থেকে উত্তরণে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার কোনো বিকল্প নাই। জনগণের সরকার না থাকলে, জনগণের প্রতিনিধি না থাকলে, জনগণের পার্লামেন্ট না থাকলে মানুষের সমস্যার সমাধান হতে পারে না। এই অনির্বাচিত সরকারের দ্বারা কখনোই জনগণের সমস্যা কোনো সমাধান সম্ভব হবে না।’
ভার্চুয়াল এই সংবাদ সম্মেলনে দলের গঠিত জাতীয় ত্রাণ কমিটির আহবায়ক ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুও যুক্ত ছিলেন।
ফাইছ ছবি
জাতীয় কমিটি বন্যা দুর্গত বন্যা মোকাবিলা বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংবাদ সম্মেলন