Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

গরুর হাটে ক্রেতা কম, লোকসানের শঙ্কায় খামারিরা


২৮ জুলাই ২০২০ ২১:৩৫

ঢাকা: ছোট থেকে বড় সব ধরনের গরুর দেখা মিলছে রাজধানীর গাবতলী গরুর হাটে। ক্রেতাদেরও কমবেশি ভিড় রয়েছে। হাটটিতে ৪০ হাজার থেকে ৩০ লাখ টাকা দাম হাঁকা হচ্ছে- এমন গরুও রয়েছে। তবে বিক্রেতারা বলছেন, হাটে এখনো ক্রেতাদের তেমন ভিড় নেই। এবার গরুর দামও কম। ফলে অনেককেই লোকসান গুণতে হবে। এছাড়া ঈদের আরও তিন দিন বাকি থাকলেও অনেককেই কোরবানির গরু কিনতে দেখা গেছে। হাসিল পরিশোধে এই বাজারের চারটি বুথেই ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় চোখে পড়ে। মঙ্গলবার (২৮ জুলাই) রাজধানীর গাবতলী গরুর হাট ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

বিজ্ঞাপন

চাপাইনবাবগঞ্জ থেকে দুটি ছোট গরু নিয়ে এসছেন করিম নামের এক খামারি। বাড়িতে লালন পালন করা গরু দুটি বছর খানেক আগে লাখ টাকা দিয়ে কিনেছিলেন। সারাবাংলাকে করিম জানান, সোমবার রাতে গাবতলী হাটে গরু নিয়ে এসেছেন। মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত গরু দুটির দাম লাখ টাকায় উঠেনি। দাম আর বেশি না উঠলে তাকে লোকসান গুণতে হবে।

একইভাবে চাপাইনবাবগঞ্জের আরেক খামারি অব্দুল জলিল জানান, তার গরুটি দুমাস আগে ৪০ হাজার টাকায় কেনা ছিল। মঙ্গলবার এই বাজারে গরুটির দাম ৩৫ থেকে ৩৬ হাজার টাকা বলা হচ্ছে। এই দামে গরু বিক্রি করতে হলে তাকে অন্তত ১৫ হাজার টাকা লোকসান গুণতে হবে।

চাপাইনবাবগঞ্জের কানসাট থেকে মাঝারি আকারের গরু নিয়ে এসেছে খামারি জসিম। সারাবাংলাকে তিনি জানান, তার ১০ মণ ওজনের গরুটির দাম বলা হচ্ছে ১ লাখ ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা। অথচ এই গরুটি এক বছর আগে ১ লাখ ৫২ হাজার টাকা দিয়ে কেনা ছিল। এক বছরে গরুটি লালন পালনে খরচ হয়েছে ৭৪ হাজার টাকা। তিনি বলেন, ‘গরুটির ওজন ১০ মণ হতে পারে। এর দাঁত চারটি। বাজারে ক্রেতা নেই। যারা আসছেন তারা খুবই কম দাম বলছে। ১২ মণ ওজন হবে এমন গরুর দামও ১ লাখ ২০ হাজার থেকে ৩০ হাজার বলা হচ্ছে।’ তার গরুটি লাখ খানেক টাকা লোকসান হতে পারে বলেও ধারণা করছেন তিনি। সারাবাংলাকে জসিম আরও বলেন, ‘লস হলেও গরু তো বেঁচতে হবে। দেখা যাক কত বেচতে পারি। গ্রামে আরও তিনটি গরু বিক্রি করেছি। তেমন লাভ না হলেও লস হয়নি। ঢাকার চেয়ে গ্রামে গরুর দাম আরও বেশি।’

রাজশাহী থেকে ১৫ মণ ওজনের একটি গরু নিয়ে এসেছেন বাবু। অস্ট্রেলিয়ান এই গরুটির দাম বলা হচ্ছে সাড়ে ৩ লাখ টাকা। বিক্রেতা বাবু বলছেন, ‘এটি আমাদের নিজস্ব খামারের গরু। তিন বছর বয়স হবে। নিজেরই পুষেছি। ৫ লাখ টাকার কমে এই গরু ছাড়া যাবে না। অথচ মানুষ দাম বলছে সাড়ে ৩ লাখ টাকার মতো। বাজারে ক্রেতা নেই। গতবছর এই সময়ে অনেক ক্রেতা ছিল।’

বিজ্ঞাপন

জামালপুরের একটি খামার জাকারিয়া অ্যাগ্রো ফার্ম। এই ফার্মের ৮১টি গরু তোলা হয়েছে গাবতলী হাটে। ফার্মের দেখভালের সঙ্গে জড়িত দুদু মিয়া সারাবাংলাকে বলেন, ‘এরইমধ্যে আমরা পাঁচটি গরু বিক্রি করেছি। আড়াই থেকে ৪ লাখ টাকায় গরুগুলো বিক্রি হয়েছে। এতে আমাদের কিছুটা লাভ থাকবে।’ তবে অন্যবারের চেয়ে এবার লাভ কম হচ্ছে বলে জানালেন তিনি। এই ফার্মের সবচেয়ে বড় গরুর ওজন ১৮ মণ। ৫ লাখ টাকা দাম চাওয়া হলেও ক্রেতারা বলছেন ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা। এক বছর আগে এই গরুটি কেনা ছিল ২ লাখ ৮০ হাজারে। বছরে গরুটির পেছনে খরচ হয়েছে অন্তত ৫০ হাজার টাকা। ফলে সাড়ে ৪ লাখের নিচে গরুটি বিক্রি করলে লোকসান গুণতে হবে বলে জানালেন তিনি।

টাঙ্গাইলের চকদার গরুর ফার্ম গাবতলী বাজারে তাদের ৫৩টি গরু তুলেছে। এর মালিক দুলাল হোসেন চকদার সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের আটটি গরু এরই মধ্যে বিক্রি করে দিয়েছি। সবগুলো গরুর দামই ৩ লাখ টাকার ওপরে।’

তিনি জানান, তার ফার্মের সবচেয়ে বড় গরুটির ওজন প্রায় ৩০ মণ। গরুটির দাম চাওয়া হচ্ছে ১২ লাখ টাকা। ক্রেতারা এখন পর্যন্ত সাড়ে ৭ লাখ টাকা দাম বলেছে। মহারাজা নামের এই গরুটি ২ বছর আগে আড়াই লাখ টাকা দিয়ে কিনে ফার্মে তুলেছিলেন।’ তিনি আরও জানান, ‘গরুর বাজার খুব একটা খারাপ না। ঢাকা শহরে শেষ দিকে সবাই গরু কিনে। তাই বাজারে এখনো ক্রেতা কম।’

সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া থেকে একটি বড় গরু নিয়ে এসেছেন আব্দুল মন্নাপ নামের এক খামারী। তিনি জানান, টাইটানিক নামের এই গরুটির ওজন সাড়ে ২৭ মণ। গরুটির দাম হাকা হচ্ছে ৮ লাখ টাকা। আর ক্রেতারা এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ সাড়ে ৫ লাখ টাকা দাম বলেছেন। গরুটির সঙ্গে প্রায় ৩০ হাজার টাকা দামের একটি খাশি ফ্রি রয়েছে।

মন্নাপ বলেন, ‘গত কোরবানি ঈদে গরুটি কেনা হয়েছিল ২ লাখ টাকার কিছু বেশি দাম দিয়ে।’ এক বছরে অন্তত ২ লাখ টাকা খরচ হয়েছে বলে তার দাবি। তার মতে, বাজারে গরুর দাম খুবই কম।

গাবতলী বাজারে ওঠা সবচেয়ে বড় গরুটির ওজন ৩৬ মণ। যশোরের মণিপুর থেকে গরুটি নিয়ে এসেছেন খামারি আসমত আলী। সারাবাংলাকে জানান, তার গরুটির নাম বাংলার বস। এর দাম হাঁকা হচ্ছে ৩০ লাখ টাকা। ক্রেতারা ১৫ থেকে ১৬ লাখ টাকা বলছেন। এক বছর আগে এই গরুটি কেনা ছিল ১৭ লাখ টাকায়। কেনার পর এক বছরে গরুটির পেছনে আরও ৬ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। বাজারে যে দাম হাকা হচ্ছে সেই দামে বাংলার বসকে বিক্রি করতে হলে বড় অঙ্কের লোকসানের মুখে পড়তে হবে বলে জানান খামারী আসমত আলী।

মিরপুর থেকে গাবতলী বাজারে এসেছিলেন বেসরকারি চাকুরিজীবী হাসিব মিয়া। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকায় গরু কিনতে চাচ্ছি। কিন্তু পছন্দমতো হচ্ছে না। ছোট গরুর দাম অনেক বেশি চাওয়া হচ্ছে ‘

একই রকম কথা জানান ব্যবসায়ী শওকত খান। তিনি বলেন, ‘এবার ব্যবসার অবস্থা ভালো নয়। ঢাকাতে একাই কোরবানি দিতে হবে। ইচ্ছে ছিল ৫০ হাজার টাকার মধ্যে একটি গরু কেনার। কিন্তু ছোট গরুর দাম অনেক বেশি। এই দামে কিনতে না পারলে অন্যদের সঙ্গে শেয়ারে কোরবানি দিতে হবে।’

এছাড়া বাজারে চারটি হাসিল ঘরেই কেনা গরুর হাসিল পরিশোধ করছিলেন ক্রেতারা। বাজারের ইজারাদারদের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব না হলেও গাবতলী হাটের চারটি বুথেই হাসিল পরিশোধে ক্রেতাদের ভিড় দেখা গেছে। এছাড়া অনেককেই গরু কিনে বাড়ি ফিরতে দেখা গেছে।

কম কোরবানি গরুর হাট গাবতলী বিক্রি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর