লোকসান গুণতে হচ্ছে ব্যাপারীদের!
৩১ জুলাই ২০২০ ০২:১৭
ঢাকা: ঈদের বাকি আর একদিন। তবে রাজধানীর পশুর হাটে বেচাবিক্রি নিয়ে কোনোভাবেই সন্তুষ্ট নন কোরবানির পশুর খামারি ও ব্যাপারীরা। তারা বলছেন, হাটে এবার গরু ও ছাগল— দু’টোর দামই কম। ফলে ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে। কোনো কোনো গরুতে দুই থেকে পাঁচ হাজার টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে বলে জানাচ্ছেন ব্যাপারীরা। আবার কোনো কোনো ব্যাপারী বলছেন, হাজার-দুই হাজার টাকা লাভ হলেও তারা গরু ছেড়ে দিচ্ছেন। আর প্রান্তিক খামারিরা বলছেন, এ বছর গরুর দাম খুবই কম হওয়ায় যে দাম পাচ্ছেন, তাতেই সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে। বিপরীত দিকে ক্রেতাদের অনেকেই কম দামে কোরবানির পশু কিনতে পেরে সন্তুষ্টির কথাই জানালেন।
বৃহস্পতিবার (৩০ জুলাই) রাজধানীর কচুক্ষেত পশুর হাট ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে পাওয়া গেল এমন চিত্র।
হাটে কথা হয় পাবনা থেকে ১৪টি গরু নিয়ে আসা আফতাব ব্যাপারীর সঙ্গে। জানালেন, এরই মধ্যে ছয়টি গরু বিক্রি করতে পেরেছেন। তবে দাম নিয়ে সন্তুষ্ট নন তিনি। আফতাব সারাবাংলাকে বলেন, এক লাখ থেকে এক লাখ ৩৫ হাজার টাকায় গরু বিক্রি করেছি। দাম তেমন পাইনি। কিন্তু এই দামেই সন্তুষ্ট হতে হয়েছে।
এই ব্যাপারী ‘রাজা’ ও ‘বাদশা’ নামে বড় দু’টি গরু এই হাটে তুলেছেন। শাহী আলের ক্রস জাতের লাল রঙের ‘রাজা’র ওজন ১৮ মণ। দাম চাচ্ছেন ৮ লাখ টাকা, ক্রেতারা সাড়ে ৪ লাখ পর্যন্ত দাম বলেছেন। আর আফতার ব্যাপারী ২০ মণ ওজনের ‘বাদশা’র দাম হেঁকেছেন ১০ লাখ টাকা, দাম উঠেছে সাড়ে ৫ লাখ পর্যন্ত। আফতাব বলেন, যে দাম বলা হচ্ছে, তা খুবই কম। আমরা আরও বেশি দাম আশা করছি।
সিরাজগঞ্জের আব্দুল আলীম মাঝারি থেকে বড় আকৃতির একটি গরু নিয়ে হাটে এসেছেন। আনুমানিক ৭ মণ ওজনের গরুর দাম চাইছেন ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা। আলীম বলেন, এখন পর্যন্ত ১ লাখ ৩০ পর্যন্ত দাম উঠেছে। ২ বছর আগে গরুটি ৭১ হাজার টাকা দিয়ে কেনা ছিল। তখন দাম বেশি ছিল। কিন্তু এবার গরুর দাম খুবই কম। এত কম দামে বিক্রি করতে হলে অনেক ক্ষতি হবে।
কুষ্টিয়ার উজ্জ্বল ব্যাপারী বাজারে ১৬টি গরু নিয়ে এসেছেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে মাত্র পাঁচটি। গরুতে ২ হাজার টাকা লাভ হলেও ছেড়ে দিচ্ছেন জানিয়ে তিনি বলেন, সাড়ে ৭ মণ ওজনের গরু ১ লাখ ৬০ টাকার হলেই ছেড়ে দেবো। ৮ মণ ওজনের আরেকটা গরু আছে। সেটাও ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা দাম উঠলেই ছেড়ে দেবো।
সিরাজগঞ্জ আরেক ব্যাপারী ওমর ফারুক হাটে এনেছেন ৩৮টি গরু। তিনিও মাত্র পাঁচটি বিক্রি করতে পেরেছেন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত। সারাবাংলাকে ফারুক বলেন, ‘গরুতে লাভ নেই। একেকটি গরুতে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত লস হচ্ছে।’ তার ৩৮টি গরুর মধ্যে সবচেয়ে বড় ‘টাইগারে’র ওজন আনুমানিক ১২ মণ। দাম চাইছেন ৩ লাখ টাকা।
তবে কচুক্ষেত হাটের সবচেয়ে বড় গরুটি এসেছে শেরপুরের নকলা থেকে। কৃষক জাহিদুল ইসলাম এনেছেন ‘বাংলার বাহাদুর’ নামের এই গরু। ৩৫ মণ ওজনের গরুটির দাম হাঁকা হচ্ছে ১৫ লাখ টাকা। জাহিদুল সারাবাংলাকে বলেন, গরুটি দেশি জাতের। দেশি জাতের গরু এর চেয়ে বড় হয় বলে মনে হয় না। এটি আমাদের নিজেদের পালা গাভীর বাচ্চা। ৫ বছর ধরে লালন পালন করছি। সাড়ে ৮ লাখ টাকা দাম উঠেছে। ১০ লাখ হলেও হয়তো ছেড়ে দেবো।
ইব্রাহিমপুর থেকে এই বাজারে গরু কিনতে এসেছিলেন সুজন। তিনি বলেন, গরু কিনেছি ১ লাখ ২০ হাজার টাকা দিয়ে। গরুর দাম খুব একটা কমও নয়, আবার বেশিও না। তবে অন্য বছর এমন গরুর দাম আরও বেশি থাকে। ভাষাণটেকের আরেক ক্রেতা হিমেল বলেন, গরুর দাম কমই রয়েছে। এক লাখ টাকায় যে গরু কিনেছি, সেই গরুর দাম অন্য বছর এক লাখ ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা থাকে।
এদিকে, বাজারে ছাগলও খুব সস্তায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। গোপালগঞ্জ থেকে আসা করিম নামের এক ব্যাপারী বলেন, ৪০টি খাশি নিয়ে বাজারে এসেছি। গরুর মতো খাশির দামও এবার কম। অন্যবার যে খাশি ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি, এবার তা ১৪ থেকে ১৫ হাজার টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে।
কচুক্ষেত থেকে ৩০ কেজি ওজনের একটি খাশি কিনেছেন নাহার বেকারির বাসিন্দা ওবায়দুল বারী নাসিফ। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, প্রায় ৩০ কেজি ওজনের খাশি সাড়ে ১৪ হাজার টাকা দিয়ে কিনেছি। অন্য বছর এমন খাশির দাম ২০ হাজার টাকার বেশি থাকে। গরুর মতো ছাগলের দামও বাজারে কম রয়েছে। মাঝারি আকারের এক জোড়া ছাগল ২০ থেকে ২২ হাজার টাকায় কেনা যাচ্ছে।