Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বাসার ছাদ ও ঘরে কেটেছে শিশুদের ঈদ


১ আগস্ট ২০২০ ২২:২৫

ঢাকা: করোনা মহামারির কারণে শিশুদের এবারের ঈদও কেটেছে ঘর কিংবা বাসার ছাদে। ঘরবন্দি সময়ে তাদের দেখা হয়নি বন্ধু কিংবা সমবসয়সী শিশুদের সঙ্গে। আত্মীয়-স্বজনরাও নিরাপত্তার স্বার্থে শিশুদের সঙ্গে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখছেন। অনেক অভিভাবক তাদের ঘরবন্দি শিশুদের ছবি আপলোড দিয়েছেন ফেসবুকে।

শনিবার (১ আগস্ট) বাংলাদেশে উদযাপিত হয়েছে মুসলিম ধর্মাম্বলীদের দ্বিতীয় বড় উৎসব ঈদুল আজহা। করেনায় ঈদুল ফিতরের মতো এবারের ঈদটিও ছিল ম্লান।

বিজ্ঞাপন

অনেকের মতোই মিরপুরের বাসিন্দা আহসান দিপু শিশু পুত্র আদ্রিয়ানসহ পরিবারের সঙ্গে কয়েকটি ছবি আপলোড দিয়ে ফেসবুকে লিখেছেন ‘ছাদে উঠেই ঈদকে মোবারক করতে হয়।’ জানতে চাইলে এবারের ঈদ সম্পর্কে মিরপুর ক্যান্টম্যান্ট পাবলিক কলেজের বাংলার এই শিক্ষক সারাবাংলাকে বলেন, ‘যেকোনো বারের চেয়ে এবারের ঈদকে অনেক ম্লান বলা যায়। প্রতিবার সবাই একসঙ্গে ছাদে উঠি। এবার কেউ উঠেনি। শুধু আমরা উঠেছি। অন্যবার এই বাসায় ছয় থেকে সাতটি কোরবানি দেওয়া হয়। এবার বাড়িওয়ালা ভাড়াটিয়াসহ মাত্র তিনটি গরু কোরবানি দেওয়া হয়েছে। সবমিলিয়ে এবারের ঈদ অন্য যে কোন বারের চেয়ে ম্লান।’

প্রতীক মাহমুদের পাঁচ বছরের কন্যা প্রথা। প্রতিবছর কোরবানির ঈদে বাবা-মায়ের সঙ্গে দাদাবাড়ি গেলেও এবার করোনা প্যানডেমিকের কারণে যেতে পারেনি। এমনকি ঈদুল ফিতরও কেটেছে ঢাকায় গৃহবন্দি অবস্থায়। ঈদুল আজহায়ও এবার ঘরবন্দি থেকে ফেসবুক মেজেঞ্জারে ভিডিও কলেই সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছে।

প্রতীক মাহমুদ বলেন, ‘রোজার ঈদে বাড়ি যেতে না পারলেও কোরাবানির ঈদে প্রতিবছরই বাড়ি যাওয়া হয়। আর এই উৎসবের জন্যই অপেক্ষায় থাকে মেয়ে। কিন্তু করোনা এবারের উৎসব-আনন্দ কেড়ে নিয়েছে। শিশুমনের অস্থিরতা দূর করতে তাই ভিডিও কলে দাদু ও নানুবাড়ির লোকজনসহ আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে কথা বলিয়ে দিচ্ছি। এমনকি এই করোনাকালে ঢাকায়ও কারও বাসায় যাচ্ছি না। সবার স্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করেই মেয়েকে নিয়ে বাসায় ঈদ উদযাপন করছি।’

বিজ্ঞাপন

পদ্ম পারিভাশ ও আনুশ কিবরিয়ার মা সাংবাদিক নাজনীন আখতার ফেসবুকে কিছু ছবি আপলোড দিয়ে লিখেছেন ‘তাদের ঈদ’। জানতে চাইলে নাজনীন আখতার বলেন, ‘ওরা বাসায়ই ছিল। দুটি দিন শুধু নিচে নেমে একটু গরু দেখেছে। অন্যবার এমন ঘরবন্দি হয়ে থাকে না। আত্মীয় স্বজনের বাসায় ওদের ঘুরতে নিয়ে যায়। এবার তা হয়নি। এর আগে রোজার ঈদে আমাদের বাসাতেই করোনা রোগী ছিল। ফলে তখনো ওদের ঘরবন্দিই থাকতে হয়েছে। এবার কোরবানি ঈদে ওদের অত্মীয়স্বজনরা বাসার নিচে এসেছিল। এবং নিচ থেকেই চলে গেছে। করোনার কারণে বাসায় ঢুকেনি।’

জাহীদুল ইসলাম ও লাকী আক্তার দম্পত্তির কোলজুড়ে সম্প্রতি এসেছে শিশু সন্তান রোজাভা সূর্য। কন্যার বয়স এখন ৯ মাস ছুঁইছুঁই। সারবাংলাকে জাহীদুল বলেন, ‘ওর জন্মের পর থেকে বাসাতেই আছে। টিকা দেওয়া ছাড়া তেমন কোনো কাজে বাইরে নিয়ে যেতে পারিনি। ওর জন্মের কিছুদিন পরই দেশে করোনা শুরু হয়। মাঝেমধ্যে শুধুমাত্র ছাদে নিয়ে যাই। ও খুব খুশি হয়। ছেলেমেয়েদের তো আসলে বাইরের আবহাওয়ায় নিতে হয়। কিন্তু করোনার কারণে তা হচ্ছে না। আর শিশুদের তো আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে পরিচিত হওয়া উচিৎ। করোনায় তাও হচ্ছেনা। করোনার কারণে ঈদের দিনটিতেও সূর্যকে বাইরে নেওয়া হয়নি।’

বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সানজিদা সুলতানা থাকেন পূর্ব নাখালপাড়ায়। তার স্বামীও একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। করোনাভাইরাসের কারণে দুই মেয়ে দ্রাঘিমা ও আক্বিদাকে নিয়ে এবার বাড়ি যেতে পারেননি। ঈদ করছেন ঢাকাতেই। ঠিক যে কারণে বাড়ি যাননি, একই কারণে ঢাকাতেও বন্ধু-স্বজনদের বাসায় যাওয়ার কোনো আয়োজন নেই। জানালেন, হোয়াটসঅ্যাপ-মেসেঞ্জারের কল্যাণে মেয়েদের ঈদ কেটেছে নানা-নানী, দাদা-দাদীদের সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলে।

সানজিদা সারাবাংলাকে বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে কোথাও যাওয়ার তো সুযোগ নেই। তাই বাসাতেই কাটছে ঈদ। আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলছে মেয়েরা। তাকে কোথাও বের হতে না পারার আক্ষেপ কিছুটা হলেও ঘুচেছে। আর চেষ্টা করেছি ওদের পছন্দের খাবার রান্না করার। তারপরও সবকিছু মিলিয়ে ঈদের স্বতঃস্ফূর্ত আনন্দ থেকে ওরা বঞ্চিত হচ্ছে— তা বলাই বাহুল্য।

অনেক অভিভাবকই তাদের সন্তানদের বাসার ছাদ কিংবা ঘরবন্দি সময়ের ঈদ আনন্দের ছবি ফেসবুকে শেয়ার করছেন। কেউ কেউ লিখছেন, শিশুরা এখন ঘরকে মানিয়ে নিয়েছে। আবার কেউবা বলছেন, শিশুদের জন্য এ যে ধৈর্য্যের সময়।

ঈদ করোনা ছাদ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর