ঢাকা: রাজধানীর হাজারীবাগ মধুবাজার এলাকার একটি বাসার ছাদ থেকে নিচে পড়ে আকলিমা (১২) নামে এক শিশু গৃহকর্মীর মৃত্যু হয়েছে।
মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) বেলা সোয়া ৩টার দিকে মধুবাজার ১০ নম্বর রোডের এক বাসায় এই ঘটনা ঘটে। পরে মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে মৃত ঘোষণা করেন।
তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসা ওই বাড়ির কেয়ারটেকার আমিনুল হক বলেন, ‘বাড়িটি নয়তলা বিশিষ্ট। বেলা সোয়া ৩টার দিকে হঠাৎ বাড়িটির ১তলায় টিনশেড গ্যারেজের উপরে একটি শব্দ হয়। এর কিছুক্ষণ পর ভাড়াটিয়াদের চিৎকার শুনতে পান তিনি। তখন টিনের চালার উপর উঠে দেখেন, ওই মেয়েটি রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। কয়েকজনের সহযোগিতায় তাকে উদ্ধার করে প্রথমে ইবনে সিনা হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেলে পাঠিয়ে দেওয়া হয় তাকে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাড়িটির ৯ম তলায় কাপড় ব্যবসায়ী আব্দুর রশীদ ও কহিনুর বেগম দম্পতি বসবাস করেন। ৪ দিন আগে ওই বাসার গৃহকর্মীর কাজে যোগ দিয়েছিল আকলিমা। সে ছাড়াও আরেকজন গৃহকর্মী রয়েছে ওই বাসায়। মঙ্গলবার সকালে সে বাসা থেকে বেরিয়ে যাওয়ারও চেষ্টা করেছিল। তবে গৃহকর্ত্রী তাকে বের হতে দেয়নি। দুপুরে যখন গৃহকর্ত্রী ঘুমিয়েছিলেন, আর অন্য গৃহকর্মী টিভি দেখছিল, তখন সে একটি ব্যাগ গুছিয়ে হয়তো বাসা থেকে বেরিয়ে যেতে চেয়েছিল। তখনই কোনোভাবে নয় তলা থেকে নিচে পড়ে যেতে পারে।’
হাসপতালে নাজমা বেগম জানান, তার বাসা রায়েরবাজার নিমতলীতে। চার দিন আগে বিকেল বেলায় রায়েরবাজার হাইস্কুলের ঢালে বসে কান্না করছিল মেয়েটি। তখন এগিয়ে গেলে মেয়েটি কোনো বাসাবাড়িতে কাজ পাইয়ে দিতে অনুরোধ করে। দাবি করে, তার বাবা-মা কেউ নেই। বাড়িতে সৎ মা। অন্য একটি বাসায় গৃহকর্মীর কাজ ছেড়ে চলে এসেছে। তখন নিজের ঠিকানাও বলতে পারে না বলে জানিয়েছিল মেয়েটি। শুধু কান্না করছিল। তখন মেয়েটিকে মধুবাজার এলাকার ওই বাড়ির ৯ম তলার ফ্ল্যাট মালিক ও গৃহকর্তা আব্দুর রশীদের বাসায় নিয়ে যান। বাবা মায়ের নাম পরিচয়হীন মেয়েটিকে প্রথমে বাসায় কাজ দিতে না চাইলেও পরে মেয়েটির অনুরোধে সেদিনই তাকে ছয় হাজার টাকা বেতন দিবে বলে কাজে রেখে দেন গৃহকর্তা। আজকে জানতে পারলাম ছাদ থেকে পড়ে মারা গেছে আকলিমা।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (পরিদর্শক) মো. ফারুক মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, মৃতদেহটি মর্গে রাখা হয়েছে। ঘটনাটি রহস্যজনক মনে হচ্ছে। বিষয়টি তদন্ত করতে হাজারীবাগ থানায় জানানো হয়েছে।