Wednesday 20 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বৈরুতে বিস্ফোরণে নিহত বেড়ে ৫০, আহত ৩ হাজার


৫ আগস্ট ২০২০ ০৩:০৫

লেবাননের রাজধানী বৈরুতে ভয়াবহ দুই বিস্ফোরণের ঘটনায় এ পর্যন্ত কমপক্ষে ৫০ জন মারা গেছেন বলে জানিয়েছেন দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী হামাদ হাসান। তিনি জানিয়েছেন, বিস্ফোরণে আহতের সংখ্যা প্রায় তিন হাজার। ভয়াবহ এই বিস্ফোরণে বৈরুত শহরে বড় একটি অংশ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। এখন পর্যন্ত বিস্ফোরণের কারণ জানা যায়নি। তবে বৈরুতের ওই বন্দর এলাকায় বিপুল পরিমাণ অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট মজুত ছিল বলে জানা গেছে।

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (৪ আগস্ট) লেবাননের স্থানীয় সময় সন্ধ্যার দিকে (বাংলাদেশ সময় রাত ১০টার দিকে) এই বিস্ফোরণ ঘটে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো বলছে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হতাহতের সংখ্যা বাড়ছে।

মঙ্গলবার দিবাগত মধ্যরাত পেরিয়ে পাওয়া সবশেষ তথ্য বলছে, বিস্ফারণে এ পর্যন্ত কমপক্ষে ৫০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। প্রায় তিন হাজার আহত ব্যক্তিকে নেওয়া হয়েছে বিভিন্ন হাসপাতালে। রোগীর চাপে হাসপাতালগুলোতে এখন পা ফেলার জায়গা মিলছে না।

আলজাজিরার খবরে বলা হয়েছে, এখন পর্যন্ত এই বিস্ফোরণের কারণ জানা যায়নি। তবে দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ ফাহমি জানিয়েছেন, বৈরুতের উপকণ্ঠের ওই বন্দর এলাকায় প্রচুর পরিমাণে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট মজুত করা ছিল। এর থেকেই বিস্ফোরণ ঘটেছে। এত বিপুল পরিমাণ অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট কেন সেখানে মজুত করা ছিল, সে বিষয়ে লেবানন কাস্টমসকে জিজ্ঞাসাবাদ করা দরকার বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

আরও পড়ুন- বৈরুতে ভয়াবহ বিস্ফোরণ, নিহত ১০

অন্যদিকে স্থানীয় গণমাধ্যম মায়াডিন দেশটির কাস্টমস পরিচালককে উদ্ধৃত করে বলছে, কয়েক টন নাইট্রেট বিস্ফোরিত হয়েছে ওই এলাকাটিতে।

লেবাননের প্রেসিডেন্ট মাইকেল আউন দেশটির সুপ্রিম ডিফেন্স কাউন্সিলের জরুরি বৈঠক আহ্বান করেছেন। তিনি দেশটির সেনাবাহিনীকে বৈরুতের বিস্ফোরণের পর ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাজুড়ে টহলের নির্দেশ দিয়েছেন।

অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী হাসান দিয়াব বুধবার দেশটিতে জাতীয় শোক দিবস ঘোষণা করেছেন। এ ঘটনাকে ‘বিপর্যয়’ অভিহিত করে এর জন্য দায়ীদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে বলে মন্তব্য করেন হাসান দিয়াব।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া বিভিন্ন ভিডিওতে দেখা যায়, বৈরুতের উপকণ্ঠে পরপর দুইটি বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে গোটা শহর। মুহূর্তের মধ্যে বিশালাকার মাশরুমের মতো আকৃতিতে আগুন আর ধোঁয়ার কুণ্ডলীতে ছেয়ে যায় বৈরুতের আকাশ। ধোঁয়া কেটে গেলে দেখা যায়, বিস্ফোরণস্থলের আশপাশে বড় এলাকা পরিণত হয়েছে ধ্বংসস্তূপে। বিস্ফোরণের ধাক্কায় অনেক ভবনই ধ্বসে পড়েছে।

বিজ্ঞাপন

বার্তা সংস্থা এএফপির খবরে বলা হয়, বৈরুতের এই বিস্ফোরণের শব্দ এতটাই তীব্র ছিল যে ২৪০ কিলোমিটার দূরে পূর্ব ভূমধ্যসাগরের সাইপ্রাস দ্বীপপুঞ্জ থেকেও এর শব্দ পাওয়া গেছে। একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘চোখের সামনে সব ভবনগুলো ধ্বসে পড়লো। মনে হচ্ছিল আমি অন্ধকারে কাঁচের সমুদ্রের মধ্য দিয়ে হেঁটে যাচ্ছি। আমার চারপাশে কেবল ধ্বংসস্তূপ।’

বিবিসি বলছে, লেবাননে বিস্ফোরণের এই ঘটনাটি এমন এক সময়ে ঘটলো যখন দেশটির অর্থনৈতিক সংকট চরমে পৌঁছেছে এবং এই সংকট দেশটির পুরনো রাজনৈতিক বিভাজনকে উস্কে দিচ্ছে। এছাড়া ২০০৫ সালে হত্যার শিকার দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী রফিক হারিরি হত্যা মামলার রায়ও আগামী শুক্রবার ঘোষণার কথা হয়েছে। যদিও লেবানন সরকারের বিভিন্ন দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা এ ঘটনাকে দুর্ঘটনা হিসেবেই ইঙ্গিত করছেন।

বিশ্বনেতাদের সমবেদনা, সহায়তার আশ্বাস

বৈরুতের এই ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় বিভিন্ন দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানরা শোক জানিয়েছেন। তারা লেবাননকে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দিচ্ছেন।

যুক্তরাজ্যর প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন টুইট করেছেন, বৈরুতের যেসব ছবি ও ভিডিও দেখছি, সেগুলো আঁতকে ওঠার মতো। যারা এই ভয়াবহ ঘটনার মধ্যে আটকা পড়েছেন, তাদের প্রতি আমার প্রার্থনা রইলো। সেখানে ব্রিটিশ নাগরিক যারা আছেন, তাদের জন্য তো বটেই, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে লেবাননের জন্য যেকোনো ধরনের সহায়তায় আমরা প্রস্তুত।

বিস্ফোরণের পর কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল-থানি ফোন করেছিলেন লেবাননের প্রেসিডেন্ট মাইকেল আউনকে। তিনি বৈরুতের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় সহায়তা করার জন্য ফিল্ড হাসপাতাল গড়তে প্রয়োজনীয় সবকিছু করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। বিস্ফোরণে আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেন তিনি।

এদিকে, লেবাবনে সহায়তা পাঠানোর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে ফ্রান্স। দেশটির প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোও ফোন করে কথা বলেছেন মাইকেলে আউনের সঙ্গে। এক টুইটে ম্যাক্রো বলেন, ফ্রান্স সবসময় লেবাননের পাশে আছে। ফ্রান্সের পক্ষ থেকে সহায়তা লেবাননের পথেই আছে।

জাতীয় শোক ধ্বংসস্তূপ বহু হতাহত বিস্ফোরণ বৈরুত বৈরুতে বিস্ফোরণ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর