Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘কমিউনিটি ট্রান্সমিশন’ ছাড়াই ১০০ দিন পার নিউজিল্যান্ডের


১০ আগস্ট ২০২০ ০৩:২৬

নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিকা আরডেন, যিনি দেশটির করোনা প্রতিরোধে সাফল্যের অন্যতম কারিগর

গত ১ মে’র পর থেকে এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের কোনো ঘটনা ঘটেনি নিউজিল্যান্ডে। সে হিসাবে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন ছাড়াই ১০০ দিন পার করেছে দেশটি। এই অর্জনকে স্বাগত জানালেও ‘সেকেন্ড ওয়েভে’র শঙ্কায় আত্মতুষ্টির সুযোগ নেই বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

রোববার (৯ আগস্ট) ছিল নিউজিল্যান্ডে ‘কমিউনিটি ট্রান্সিমিশন’বিহীন ১০০তম দিন। এদিন পেরিয়েও কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের কোনো ঘটনা পাওয়া যায়নি। শুধু তাই নয়, রোববার টানা চতুর্থ দিনের মতো নতুন কোনো করোনা রোগীই শনাক্ত হয়নি। সেই হিসাবে দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন ব্যক্তির সংখ্যা ২৩-এই স্থির রয়েছে, যাদের সবাইকেই আইসোলেশনে রাখা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

বিবিসির খবরে বলা হয়, বিশ্বের অনেক দেশের মতোই গত ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে নিউজিল্যান্ডে শনাক্ত হয় করোনাভাইরাসের উপস্থিতি। তবে দ্রুতই দেশটিতে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। ১ মে থেকে তো কমিউনিটি ট্রান্সমিশনই বন্ধ হয়ে যায়।

আরও পড়ুন- লাখ মৃত্যু ছাড়াল ব্রাজিলে, ২ কোটি আক্রান্তের দ্বারপ্রান্তে বিশ্ব

এর আগ পর্যন্ত দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন এক হাজার ২১৯ জন। এর মধ্যে ২২ জন মারা যান। বিশ্বের অন্যান্য দেশের পরিসংখ্যান বিবেচনায় নিউজিল্যান্ডের এই পরিসংখ্যান একে করোনা মোকাবিলায় অত্যন্ত সফল দেশগুলোর একটি হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। আর এর অন্যতম রূপকার মনে করা হয় দেশটির প্রধানমন্ত্রী জেসিকা আরডেনকে, যিনি শুরু থেকেই করোনাভাইরাস প্রতিরোধে কঠোর সব ব্যবস্থা আরোপ করে এসেছেন।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্ত হওয়ার পর মার্চের শুরু থেকেই লকডাউন জারি করে নিউজিল্যান্ড সরকার। কঠোরভাবে সেই লকডাউন পালন করা হয়। ওই সময় সীমান্তে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়, করোনা বিষয়ক বার্তা যথাযথভাবে প্রচার করা হয় এবং শুরু থেকেই সবাইকে ব্যাপক হারে করোনা পরীক্ষার আওতায় নিয়ে আসা হয়। এর ফলে বলতে গেলে এই ভাইরাসকে যথাযথভাবে প্রতিরোধ করতেও সক্ষম হয় দেশটি।

বিজ্ঞাপন

এর সুফলও এখন ভোগ করছে নিউজিল্যান্ড। কমিউনিটি ট্রান্সমিশন ছাড়াই শততম দিন যেমন পেরিয়ে গেছে, তেমনি টানা চার নতুন কোনো সংক্রমণই শনাক্ত হয়নি। মার্চে যে কঠোর লকডাউন আরোপ করা হয়েছিল, তাও ধীরে ধীরে উঠে গেছে। বর্তমানে বলতে গেলে করোনা সংক্রান্ত তেমন কোনো বিধিনিষেধের মধ্যেই থাকতে হচ্ছে না দেশটির নাগরিকদের।

‘সেকেন্ড ওয়েভে’র শঙ্কায় আত্মতুষ্টি নয়

এর আগে, গত জুলাইয়ের শেষের দিকে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন এড়িয়ে শততম দিন পার করেছে তাইওয়ানও। নিউজিল্যান্ডও এমন সাফল্যের ভাগিদার হলো। তবে এমন সাফল্যেও আত্মহারা হতে নারাজ দেশটির সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। ‘সেকেন্ড ওয়েভ’ বা দ্বিতীয় দফায় করোনার আঘাতের আশঙ্কাকে তারা উড়িয়ে দিচ্ছে না।

নিউজিল্যান্ডের স্বাস্থ্য অধিদফতরের ডিরেক্টর জেনারেল ড. অ্যাশলে ব্লুমফিল্ড রোববার বলেন, কমিউনিটি ট্রান্সমিশন ছাড়াই ১০০ দিন পার করাটা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ একটি অর্জন। তবে এ নিয়ে আত্মতুষ্টিতে ভোগার সুযোগ নেই। আমরা এমন অনেক দেশই দেখেছি যেখানে এই ভাইরাসকে নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছিল। কিন্তু তারপরও সেখানে খুব সামান্য সময়ের মধ্যেই ভাইরাসটি ফের ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। তাই নিউজিল্যান্ডে ভবিষ্যৎ কোনো সংক্রমণের সব আশঙ্কাকে আমরা দ্রুততম সময়ে দূর করতে চাই।

নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিকা আরডেনকে যে দেশটির করোনা প্রতিরোধে সাফল্যের অন্যতম মূল কারিগর মনে হয়, সেই আরডেন কী বলছেন? বিবিসিকে আরডেন বলেন, শততম দিনটি নিঃসন্দেহে একটি মাইলফলক। তবে ফের একবার সংক্রমণের মাত্রা ত্বরান্বিত করার ঝুঁকি এই মাইলফলক কোনোভাবেই কমিয়ে দেয় না। তাই আমাদের নজরদারি অব্যাহত রাখতে হবে।

ভিয়েতনাম-অস্ট্রেলিয়ার উদাহরণে শঙ্কা

কমিউনিটি ট্রান্সমিশন ছাড়াই ১০০ দিন পার করে দিলেও নিউজিল্যান্ডের এমন সতর্কতার পেছনে অন্যতম ভূমিকা রাখছে ভিয়েতনাম ও অস্ট্রেলিয়ার উদাহরণ। ভিয়েতনামে ৯৯ দিন পর্যন্ত কমিউনিটি ট্রান্সমিশন দেখা যায়নি। তবে জুলাইয়ে এসে ডা নাগা শহরে ৫৭ বছর বয়সী একজনের শরীরে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়। এরপর ওই শহরটিই সেখানে করোনার নতুন ‘এপিসেন্টারে’ রূপ নেয়।

এই সংক্রমণের আগে ভিয়েতনামে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল তিনশ’র ঘরে, সেখানে এখন আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৪১ জনে। শুধু তাই নয়, জুলাইয়েই প্রথম করোনায় মৃত্যুর ঘটনাও ঘটে ভিয়েতনামে। এখন দেশটিতে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা হয়েছে ১১।

প্রায় একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে অস্ট্রেলিয়াতেও। দেশটিতে করোনা সংক্রমণ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছিল। এরপর ধীরে ধীরে লকডাউন তুলে নেওয়া হয়, চলাচলসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিধিনিষেধও তুলে নেওয়া হতে থাকে। এর মধ্যেই নিউ সাউথ ওয়েলস ও ভিক্টোরিয়াসহ বেশকিছু প্রদেশে নতুন করে করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে থাকে। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে এসব প্রদেশে ফের লকডাউন দিতে বাধ্য হয়েছে সরকার।

১০০ দিন কমিউনিটি ট্রান্সমিশন করোনা নিয়ন্ত্রণ করোনা সংক্রমণ করোনাভাইরাস কোভিড-১৯ নিউজিল্যান্ড লকডাউন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর