২৫০০ কোটি টাকার লোকসান সামাল দিতে ঘুরে দাঁড়াতে চায় বিমান
১০ আগস্ট ২০২০ ১৭:৫৫
ঢাকা: নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারিতে বড় ধরনের ধাক্কা লেগেছে দেশের এভিয়েশন খাতে। তিনমাস যাত্রীবাহী ফ্লাইট বন্ধ থাকায় আড়াই হাজার কোটি টাকার বেশি লোকসান গুনতে হচ্ছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসকে। আর এই লোকসানের ধাক্কা সামাল দিতে স্ট্র্যাটেজিক হিউম্যান ক্যাপিটাল প্ল্যানিং, গ্রাহক চাহিদা পূরণে সরাসরি আন্তজার্তিক ফ্লাইট বাড়ানো, নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ ও সেবার মান বাড়িয়ে ঘুরে দাঁড়াতে চায় রাষ্ট্রীয় এই সংস্থাটি।
সম্প্রতি বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে অধীনস্ত দফতরগুলোর বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তিতে এমন পরিকল্পনা দিয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মোকাব্বির হোসেনের সই করা ওই কর্মসম্পাদন চুক্তিতে বলা হয়েছে, চার ধরনের কাজে গুরুত্ব দিয়ে বিমান তার ভবিষ্যত পরিকল্পনাকে সামনে এগিয়ে নিতে চায়। সেসব পরিকল্পনার মধ্যে একটি হলো স্ট্র্যাটেজিক হিউম্যান ক্যাপিটাল প্ল্যানিং। এর মাধ্যমে প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ, বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণ দেওয়া, যথাযথ পদায়ন, মূল্যায়ন, প্রণোদনার মাধ্যমে দক্ষ জনসম্পদ গড়ে তোলা।
অন্যদিকে আন্তর্জাতিক মানের গ্রাহক চাহিদা পূরণে গুয়াংজু, টরেন্টো, টোকিও, চেন্নাই, কলম্বো, মালে, শারজাহ, সালালাহ, বাহরাইন ও নিউইয়র্ক স্টেশনে বিমানের ফ্লাইট চালু, বিমানের নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ, আন্তর্জাতিক মানের সেবা তৈরি ও সেবাদানের মাধ্যমে লাভের ধারা বজায় রাখা। এছাড়াও পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে বিমানের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ে আইএসএজিও সনদ ও উড়োজাহাজের রক্ষণাবেক্ষণে ইএএসএ-১৪৫ সনদ অর্জন করা। পাশাপাশি বিমানের বর্তমান ও ভবিষ্যত উড়োজাহাজ রক্ষণাবেক্ষণে আধুনিক ও সুপরিসর হ্যাঙ্গার নির্মাণ করা, তৃতীয় টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবা আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখতে বেবিচকের গাইডলাইন অনুসারে বিমানকে প্রস্তুত করাও রয়েছে পরিকল্পনায়।
জানা যায়, নভেল করোনাভাইরাস মহামারিতে দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকার পর ফ্লাইট চালু হলেও মিলছে না প্রত্যাশিত পরিমাণ যাত্রী। তাই লোকসান ঠেকাতে অভ্যন্তরীণ রুটে চালু হওয়া ফ্লাইট ফের বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে আন্তজার্তিক তিন গন্তব্যেও এখন পর্যন্ত আশানুরুপ যাত্রী মিলছে না। এভিয়েশন খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুরো সিস্টেম যাত্রী নির্ভর হওয়ায় এভাবে বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে সেক্টরটি।
দীর্ঘতিন মাস পর গত ১ জুন অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট চালু করা হলেও যাত্রী সংকটের কারণে প্রথম দিনেই অনেকগুলো ফ্লাইট বাতিল করা হয়। অন্যদিকে ঢাকা থেকে আন্তর্জাতিক রুটে কেবল লন্ডন ও ইউএই রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করছে বিমান। করোনাভাইরাসের কারনে দীর্ঘ দিন বন্ধ থাকার পর গত ২১ জুন ঢাকা লন্ডন রুটে ফের ফ্লাইট পরিচালনা শুরু হয়। এছাড়া সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই ও আবুধাবি রুটে ফ্লাইট চালু রয়েছে। তবে এই রুট গুলোতেও যাত্রী সংকট রয়েছে বলে জানা গেছে।
এ প্রসঙ্গে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মোকাব্বির হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিমান এমন একটি পরিবহন যে, লোকসান হয়ে গেলে তা আর পূরণ করা যায় না। করোনার কারণে লোকসানের ধাক্কায় সামাল দিতে পারলেও ভবিষ্যতের লোকসান ঠেকানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।’
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে সংস্থার বহরে উড়োজাহাজের সংখ্যা ১৮টি। এর মধ্যে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোয়িং থেকে সরাসরি কেনা হয়েছে ১২টি। আর দীর্ঘ দূরত্ব পারি দিতে সক্ষম ৪১৯ আসনের বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআর উড়োজাহাজ রয়েছে চারটি। এরপরও এই বহরে আরো যুক্ত হয়েছে ১৬২ আসনের দুটি বোয়িং ৭৩৭-৮০০ ও ২৭১ আসনের ছয়টি বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজ।
জানা গেছে, এসব উড়োজাহাজ রক্ষণাবেক্ষণে প্রতিমাসে খরচ হয় ২৬৬ কোটি টাকা। এর বাইরেও প্রতিমাসে লিজে আনা ছয়টি উড়োজাহাজের জন্য ৯৮ কোটি টাকা আর বোয়িং থেকে কেনা উড়োজাহাজের কিস্তি বাবদ ৭০ কোটি। এছাড়া কর্মকর্তাদের বেতন ও দেশ-বিদেশের অফিস রক্ষণাবেক্ষণে মোটা অংকের অর্থ ব্যয় করতে হয় বিমান বাংলাদেশকে। করোনকালে বিমান বন্ধ থাকলেও এই খাতগুলোর খরচ কমেনি। ফলে বিমানকে মোটা অংকের লোকসান গুনতে হয়ছে। তবে এখন স্ট্র্যাটেজিক হিউম্যান ক্যাপিটাল প্ল্যানিং, গ্রাহক চাহিদা পূরণে সরাসরি আন্তজার্তিক ফ্লাইট বাড়ানো, নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ ও সেবার মান বাড়িয়ে ঘুরে দাঁড়াতে চায় সংস্থাটি।
আড়াই হাজার কোটি টাকা ঘুরে দাঁড়ানো বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় লোকসান সিভিল এভিয়েশন