Monday 25 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ইন্টারনেটে ফোরজি: আগবাড়িয়ে প্রতারণা করছে রবি


৯ মার্চ ২০১৮ ০৮:২৯

এমদাদুল হক তুহিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মোবাইল ফোন অপারেটর রবি আজিয়াটা লিমিটেড চতুর্থ প্রজন্মের সেবা দিতে গিয়ে ফোর পয়েন্ট ফাইভ-জি সেবা চালু করেছে। মূলত ফোর-জি’র লাইসেন্স প্রাপ্তির দিন থেকেই প্রতিষ্ঠানটি এই সেবা চালু করে। তবে এরই মধ্যে তাদের সেবার মান নিয়ে উঠেছে নানা প্রশ্ন। ‘বাফারিং’ যুক্ত নিউজফিডের স্ক্রিনশট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার দিয়ে কেউ কেউ তীর্যক মন্তব্য করছেন। ভোক্তা অধিকার আইনে মামলা করা যায় কিনা-কোন কোন গ্রাহক খুঁজছেন এমন পথও।
গ্রাহকদের বড় একটি অংশের অভিযোগ- ‘অন্য কোম্পানিগুলো যেখানে ফোর-জি চালু করেছে- সেখানে রবি একধাপ এগিয়ে ফোর পয়েন্ট ফাইভ-জি চালুর মাধ্যমে গ্রাহকদের সঙ্গে পরোক্ষভাবে প্রতারণা করছে।’ যদিও রবির দাবি- তারা ফোর-জি’র চেয়েও উন্নত সেবা দিচ্ছে। আর নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি জানিয়েছে-ফোর পয়েন্ট ফাইভ-জি’র নামে রবি আসলে কি ধরনের সেবা দিচ্ছে তা পর্যালোচনা করা হবে।

বিজ্ঞাপন

রবির গ্রাহক গুলশানের বাসিন্দা নুর আলম খান। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি ব্যবহার করে আসছেন থ্রি-জি সেবা। উন্নত সেবা পেতে ফোর-জি চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পাল্টে নিয়েছেন সিম। তবে নতুন করে ৪.৫ জি ব্যবহারেও তার অভিজ্ঞতা সুখকর নয়। ইন্টারনেটের গতি প্রশ্নে সারাবাংলাকে নুর বলেন, ‘ভেবেছিলাম গতি বাড়বে। আসলে গতি বলতে কিছুই নেই।’ আর তারই প্রকাশ ঘটেছে গত ২ মার্চ ফেসবুক দেয়া তার এক স্ট্যাটাসে। নিজের ফেসবুক ওয়ালের স্ক্রিনশট পোস্ট করে তিনি লিখেছেন- ‘রবি ৪. ৫ জি!’ আর ওই স্ক্রিনশটই বাফারিংয়ের চিত্র স্পষ্টভাবে ফুটে উঠে। আরেক গ্রাহক ধানমন্ডির বাসিন্দা এম মোরশেদ বলেন, ‘১০০ টাকা খরচ করে ধানমন্ডির রবি সেন্টার থেকে সিম পাল্টে নিয়েছি। কিন্তু কোথাও ফোর-জি পাচ্ছি না। বরং অনেক যায়গায় টু-জি শো করছে।’ রবি নেটওয়ার্ক ব্যবহারের অভিজ্ঞতা জানিয়ে ফেসবুকে আব্দুর রহমান নামের একজন লিখেছেন, ‘…. একটা পোস্ট করতে গিয়ে তিন বার রিট্রাই করে চতুর্থবারে পোস্ট হয়েছে। এর মধ্যে তিন থেকে চার বার রবি ৪.৫ জি’র বিজ্ঞাপন….’ জাহিদুল ইসলাম সুজন লিখেছেন, ‘সরকার ফোর-জি’র অনুমোদন দিয়েছে, অথচ রবি ৪.৫ জি’র বিজ্ঞাপন দিচ্ছে!’

বিজ্ঞাপন

‘পাবলিক সার্ভিসেস হেল্প গ্রুপ’ নামের একটি ফেসবুক গ্রুপে রবির বিরুদ্ধে ভোক্তা অধিকার আইনে মামলা করা যাবে কি-না জানতে চেয়েছেন নাইমুল ইসলাম রুবেল। নেটওয়ার্ট ব্যবহারের তিক্ত অভিজ্ঞতার কারণে ওই পোস্টে তিনি লিখেছেন-‘আমি কি রবি মোবাইল কোম্পানির নামে ভোক্তা অধিকার আইনে মামলা করতে পারবো? কারণ তারা তাদের বিজ্ঞাপনে দেখাচ্ছে ফোর পয়েন্ট ফাইভ জি, যেখানে বাংলাদেশে সর্বোচ্চ সেবাই ফোর-জি। ….এই ক্ষেত্রে কি ভোক্তা অধিকারে মামলা করা যাবে? আর এক্ষেত্রে তো কোন ক্যাশ মেমো নাই আমার কাছে। রবির ফ্যান পেজ এর কমেন্ট গুলো দেখলেই বুঝবেন তারা কতো বাজে সেবা দিচ্ছে।’

উত্তর জানিয়ে ওই স্ট্যাটাসের মন্তব্য অংশে মাহবুব কবির মিলন নামের একজন লিখেছেন, ‘মোবাইল কোম্পানির বিরুদ্ধে ভোক্তা অধিকারে অভিযোগ করা যায় না। তারা হাইকোর্টে স্থগিতাদেশ নিয়ে রেখেছেন।’

একই গ্রুপে রাশেদ ইবনে কুরবান লিখেছেন, ‘বাংলাদেশে চালু হলো ফোর-জি। রবি দিচ্ছে ৪.৫ জি।’ তার প্রশ্ন ছিল এই সেবাটা কতো যুক্তিযুক্ত। ওই পোস্টে ৭৭ জন উত্তরদাতার অধিকাংশই বিরুপ মন্তব্য করেছেন। আনারুল হক নামের এক ব্যক্তি লিখেছেন, ‘প্রতারণা! এদের শাস্তি হওয়া দরকার।’ কটাক্ষ করে রিয়াজুল ইসলাম লিখেছেন, ‘তারা থ্রি জি’র সময়েও … (একই রকম প্রতারণা) করেছে।’

রবির তথ্যমতে, বর্তমানে ৬৪ জেলায় তাদের ফোর-জি সেবা চালু রয়েছে। সারাদেশে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত রবির ফোর পয়েন্ট ফাইভ-জি বিটিএসএর সংখ্যা ২৫০০। আর তাদের মতে, ফোর পয়েন্ট ফাইভ-জি ফোর-জি’র চেয়েও উন্নত প্রযুক্তি। রবি আজিয়াটা লিমিটেডের হেড অব রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স সাহেদ আলম বলেন, ‘আমরা যে প্রযুক্তির যাত্রা শুরু করেছি তা একটু অগ্রসরমান, যাকে বলা হয় ফোর-জি অ্যাডভান্স। আর ৪.৯ জি’কে বলা হয় এলটি এ্যাডভান্স। থ্রি-জিতেও আমাদের থ্রি পয়েন্ট ফাইভ-জি ছিল। আর ফোর-জিতেও আমরা ফোর পয়েন্ট ফাইভ-জি ব্রান্ডিং করছি।’

অপর এক প্রশ্নের জবাবে রবি আজিয়াটা লিমিটেডের ভাইস প্রেসিডেন্ট (কর্পোরেট কমিউনিকেশন্স) ইকরাম কবির সারাবাংলাকে বলেন, ‘গ্রাহকের ডিজিটাল লাইফস্টাইলে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে রবি সবার আগে ৬৪ জেলায় ফোর-জি সেবা চালু করেছে। ফোর- জি সেবার জন্য গ্রাহকের ফোর-জি ব্যবহার উপযোগী হ্যান্ডসেট, সিম এবং কভারেজ থাকার প্রয়োজন। ফোর-জি নেটওয়ার্কের আওতায় থাকলে বাফারিংয়ের হবে না।’ গ্রাহকেরা প্রতারণার অভিযোগ করছে- এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে রবির এক কর্মকর্তা বলেন, ‘তাদের অভিযোগ থাকলে তারা বিটিআরসিকে জানাতে পারে। রবি গ্রাহকের সঙ্গে প্রতারণা করছে না- বরং অন্য অপারেটগুলোর চেয়ে আধুনিক ও উন্নত সেবা দিচ্ছে।’

এদিকে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনও রবির এ ধরনের সেবাকে প্রতারণা বলছে। জানতে চাইলে সংগঠনটির সভাপতি মহিউদ্দীন আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘পূর্বেও রবি একই কাজ করেছে। সরকার যখন থ্রি-জি’র লাইসেন্স দিয়েছে, তখন তারা থ্রি পয়েন্ট ফাইভ জি বলে প্রচারণা চালিয়েছে। এখনও একই কাজ করছে। যেহেতু সরকার তাদের ফোর-জি’র লাইসেন্স দিয়েছে, হয়তো তাদের প্রযুক্তি একটু আপডেট হতে পারে- তবে তাদের এ ধরণের সেবা শুধু জনগণের সঙ্গেই নয়, রাষ্ট্রের সঙ্গেও প্রতারণা।’

ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারের মতে- রবি’র ফোর পয়েন্ট ফাইভ-জি সেবা দেওয়া যুক্তিযুক্ত। জানতে চাইল সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমরা ফোর জি’র লাইসেন্স দিয়েছি। আর ৪.৯৯ পর্যন্ত চতুর্থ প্রজন্মের সেবার মধ্যেই পড়ে। তাই তারা ৪.৫ জি সেবা দিতে পারে।’ অপর এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘সেবার মান খারাপ হওয়ার সঙ্গে নতুন প্রযুক্তির কোন সম্পর্ক নেই। তারা সেবা দিতে পারে না- না দিতে পারার ক্ষেত্রে যেসব প্রতিবন্ধকতা আছে, আমরা তা দূর করার চেষ্টা করছি। তবে সেবা ভালো না হওয়ার দায় কিন্তু অপারেটরগুলোরই।’

এদিকে ফোর পয়েন্ট ফাইভ-জি’তে রবি আসলে কি ধরনের সেবা দিচ্ছে তা পর্যালোচনা করা হবে বলে জানিয়েছেন বিটিআরসি চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘রবির ফোর পয়েন্ট ফাইভ-জি’কে প্রথমত আমি ইতিবাচক হিসেবে দেখছি। তবে ফোর-পয়েন্ট ফাইভ-জিতে তারা আসলে কি ধরনের সেবা দিচ্ছে, এটি আসলে আমি ঠিক জানি না। আমরা যে ফোর-জি’র লাইসেন্স দিয়েছি- তারা যে সেবা দিচ্ছে এতে আইনের কোন ব্যত্যয় ঘটছে কি-না, তা আমরা পর্যালোচনা করবো।’

সারাবাংলা/ইএইচটি/এমএস

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর