Thursday 05 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

চট্টগ্রামে ৫ পত্রিকায় সংকট কাটছে না, বল বিএফইউজের ‘কোর্টে’


১০ আগস্ট ২০২০ ২২:০৮

চট্টগ্রাম ব্যুরো: দৈনিক আজাদীর সম্পাদকের বাড়ি ঘেরাওয়ের জেরে চট্টগ্রামের পাঁচ পত্রিকার প্রকাশনা বন্ধ নিয়ে সৃষ্ট সংকট কাটছে না। পত্রিকাগুলো চালু করার আকুতি জানিয়ে মানববন্ধন করেছেন ‘বেকার হয়ে পড়া’ সাধারণ বিভাগের কয়েক’শ কর্মকর্তা-কর্মচারী। পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি না থাকলেও চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নও (সিইউজে) একই দাবিতে সমাবেশ করেছে।

সিইউজে নেতারা জানিয়েছেন, পত্রিকাগুলোর প্রকাশনা চালুর জন্য বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) নেতাদের মধ্যস্থতায় মালিকপক্ষের সঙ্গে বৈঠকের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। তবে দৈনিক আজাদীর সম্পাদক এম এ মালেক জানিয়েছেন, তিনি বৈঠকের কোনো প্রস্তাব পাননি।

আরও পড়ুন- বন্ধের সিদ্ধান্তে অনড় কর্তৃপক্ষ, চালু হয়নি চট্টগ্রামের ৫ দৈনিক

পূর্ণাঙ্গ ঈদ বোনাসের দাবিতে গত ২৯ জুলাই নগরীর ঘাটফরহাদবেগ এলাকায় দৈনিক আজাদীর সম্পাদক এম এ মালেকের বাসভবন ঘেরাও কর্মসূচি পালন করে সিইউজে। এরপর থেকে আজাদীসহ চট্টগ্রাম থেকে পাঁচ পত্রিকার প্রকাশনা বন্ধ আছে। বাকি চারটি পত্রিকা হচ্ছে— দৈনিক পূর্বকোণ, বীর চট্টগ্রাম মঞ্চ, সুপ্রভাত বাংলাদেশ ও পূর্বদেশ।

পত্রিকাগুলো খুলে দেওয়ার দাবিতে গত ৬ আগস্ট চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে সিইউজে সমাবেশ করে। সোমবার (১০ আগস্ট) একই দাবিতে সংগঠনটি আবারও সমাবেশ করেছে।

এদিকে একই সময়ে নগরীর জামালখানে পাঁচ সংবাদপত্রে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য পরিষদসহ বিভিন্ন সংগঠন মানববন্ধন ও সমাবেশ করে। সংগঠনের সাবেক সভাপতি জসিম উদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা প্রেস ক্লাবের সামনে কর্মসূচি দিয়েছিলাম। সেখানে আমাদের দুই শতাধিক সদস্যের জমায়েত হয়। আমরা যাওয়ার পর দেখি সিইউজে আগে থেকেই ব্যানার নিয়ে প্রেস ক্লাবের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আমরা সড়কে দাঁড়াই। তখন সিইউজের সভাপতি মোহাম্মদ আলী ভাই এসে আমাদের জানান, তারাও আমাদের কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন। তিনি বক্তব্য রাখতে চাইলেও সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত না থাকায় আমরা সুযোগ দিতে পারিনি।’

জসিম উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের দাবি— পত্রিকাগুলো খুলে দিতে হবে। পত্রিকায় সাংবাদিকরা যেমন চাকরি করেন, আমরা সাধারণ বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও আছি। হঠাৎ করে পত্রিকা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমরা বেকার হয়ে গেছি। পরিবার নিয়ে আমরা কষ্টে আছি। আমরা চাই, অবিলম্বে পত্রিকাগুলোর প্রকাশনা আবারও শুরু হোক, যেন আমরা আবার কাজ শুরু করতে পারি।’

পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি না থাকলেও সিইউজে’র সমাবেশ করা নিয়ে জানতে চাইলে সাধারণ সম্পাদক ম. শামসুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের আন্দোলনের নিজস্ব পলিসি আছে। সেই পলিসি অনুযায়ী সমাবেশ করেছি।’

সিইউজে সমাবেশে সভাপতি মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘মালিকপক্ষ কোনো নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে, কোনো ধরনের ঘোষণা ছাড়াই পত্রিকার প্রকাশনা বন্ধ রেখেছে। সরকারি সব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেও আইনের প্রতি অবজ্ঞা দেখিয়ে মালিকরা পত্রিকা বন্ধ করেছে। এর মাধ্যমে সিইউজের আন্দোলনকে নস্যাৎ করা যাবে না। করোনার এমন কঠিন পরিস্থিতিতে মালিকদের এ অমানবিক আচরণ শুধু দুঃখজনক নয়, বিস্ময়করও।’

সিইউজের সাধারণ সম্পাদক ম. শামসুল ইসলাম বলেন, ‘মালিকরা মনে করছেন, একটি দালাল চক্রকে ব্যবহার করে সিইউজের আন্দোলন নস্যাৎ করবেন। অতীত ভুলে গিয়ে এ সংগঠনকে দুর্বল মনে করলে মালিকরা ভুল করবেন। আর দালালদের পরিণতিও সবসময় হয়েছে ভয়াবহ। চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন সাংবাদিকদের প্রাপ্য সব বকেয়া ও দুই ঈদের পূর্ণ বোনাস আদায় করবেই। মালিকদের প্রতি অনুরোধ, সংবিধান ও রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপ থেকে বেরিয়ে আসুন।’

সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ, সিইউজের সিনিয়র সহসভাপতি রতন কান্তি দেবাশীষ, সহসভাপতি অনিন্দ্য টিটো ও টিভি ইউনিটের প্রধান মাসুদুল হক। উপস্থিত ছিলেন যুগ্ম সম্পাদক সবুর শুভ, অর্থ সম্পাদক কাশেম শাহ, সাংগঠনিক সম্পাদক ইফতেখারুল ইসলাম, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ইফতেখার ফয়সাল, বিএফইউজের নির্বাহী সদস্য আজহার মাহমুদ, নির্বাহী সদস্য মুহাম্মদ মহরম হোসাইন, দৈনিক পূর্বদেশ ইউনিটের প্রধান জীবক বড়ুয়া, প্রতিনিধি ইউনিটের ডেপুটি প্রধান সোহেল সরওয়ার, টিভি ইউনিটের ডেপুটি প্রধান তৌহিদুল আলম।

এদিকে, সিইউজে সভাপতি মোহাম্মদ আলী রোববার সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, চলমান সংকট নিরসনে পত্রিকাগুলোর জ্যেষ্ঠ্য সাংবাদিকরা মালিকপক্ষের সঙ্গে সিইউজের একটি বৈঠকের আয়োজনের চেষ্টা করছেন। তবে দিনক্ষণ ঠিক হয়নি।

অন্যদিকে সিইউজের সাধারণ সম্পাদক ম. শামসুল ইসলাম সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, বিএফইউজে নেতারা মালিকপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছেন। তাদের মধ্যস্থতায় এই বৈঠকের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। আলোচনার টেবিলে মালিকপক্ষ বসলেই সংকটের সমাধান হবে বলে মনে করছেন তিনি।

জানতে চাইলে বিএফইউজের মহাসচিব শাবান মাহমুদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি এরই মধ্যে দৈনিক আজাদীর সম্পাদক এম এ মালেক সাহেবের সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি বলেছেন, সিইউজে নেতাদের সঙ্গে বসতে উনার কোনো আপত্তি নেই। আমি সিইউজের নেতাদের সঙ্গেও কথা বলেছি। উনারাও বলেছেন, আলোচনার টেবিলে বসলেই অবশ্যই সংকটের সুরাহা হবে। আগে পত্রিকার মালিকপক্ষ ও সিইউজে নেতারা বসবেন। সেখানে সমঝোতা না হলে বিএফইউজের সভাপতি এবং মহাসচিব হিসেবে আমি চট্টগ্রামে যাব। তখন আমাদের মধ্যস্থতায় আরেকটি বৈঠক হবে।’

সিইউজের সঙ্গে বৈঠকের সম্ভাবনা আছে কি না— জানতে চাইলে দৈনিক আজাদীর সম্পাদক এম এ মালেক সারাবাংলাকে বলেন, ‘মনে হয় না। তারা তো আমাদের কোনো প্রস্তাব দেয়নি। প্রস্তাব দিলে তখন দেখা যাবে।’

চট্টগ্রামের ৫ পত্রিকা দৈনিক আজাদী দৈনিক পূর্বকোণ পূর্বদেশ প্রকাশনা বন্ধ বীর চট্টগ্রাম মঞ্চ সিইউজে সুপ্রভাত বাংলাদেশ


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর