বিজ্ঞাপন

বন্ধের সিদ্ধান্তে অনড় কর্তৃপক্ষ, চালু হয়নি চট্টগ্রামের ৫ দৈনিক

August 4, 2020 | 10:54 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: বন্দরনগরী চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত পাঁচ দৈনিকের প্রকাশনা বন্ধে অনড় অবস্থান নিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। পূর্ণাঙ্গ ঈদ বোনাসের দাবিতে চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন (সিইউজে) দেশের প্রাচীনতম সংবাদপত্র দৈনিক আজাদীর সম্পাদকের বাসা ঘেরাও কর্মসূচি পালনের পর পত্রিকাগুলোর প্রকাশনা একযোগে বন্ধ করে দেওয়া হয়।

বিজ্ঞাপন

ঈদুল আজহার ছুটি শেষে মঙ্গলবার (৪ আগস্ট) ছিল সংবাদপত্র খোলার প্রথম দিন। কিন্তু চট্টগ্রামের মূলধারার এই পাঁচটি দৈনিকের কার্যালয় খোলেনি। যথারীতি পত্রিকাও প্রকাশ হচ্ছে না। এর ফলে পত্রিকাগুলোতে কর্মরত সাংবাদিক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সিইউজে বুধবার (৫ আগস্ট) জরুরি সভা আহ্বান করেছে।

পত্রিকাগুলো হচ্ছে— আজাদী, পূর্বকোণ, বীর চট্টগ্রাম মঞ্চ, সুপ্রভাত বাংলাদেশ ও পূর্বদেশ। গত ৩০ জুলাই থেকে এসব পত্রিকার প্রকাশনা বন্ধ আছে। অবশ্য এর মাঝে চার দিন ঈদুল আজহার ছুটি ছিল।

আরও পড়ুন- চট্টগ্রামে ৫ দৈনিকের প্রকাশনা একযোগে বন্ধ, সিইউজের উদ্বেগ

বিজ্ঞাপন

এর আগে ২৯ জুলাই নগরীর ঘাটফরহাদবেগ এলাকায় দৈনিক আজাদীর সম্পাদক এম এ মালেকের বাসভবন ঘেরাও কর্মসূচি পালন করে সিইউজে। এরপর রাতে আজাদীসহ অন্যান্য পত্রিকায় কর্মরতরা জানতে পারেন, কর্তৃপক্ষ পত্রিকার প্রকাশনা ‘অনির্দিষ্টকালের জন্য’ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। পরদিন দৈনিক পূর্বকোণ এবং পূর্বদেশ পত্রিকার সম্পাদকের বাসভবন ঘেরাওয়ের কর্মসূচি দিয়েছিল সিইউজে। তবে নিজ নিজ ইউনিটের নেতারা বেতন-বোনাস পেতে মালিকের আশ্বাস পেয়েছেন জানিয়ে সেই কর্মসূচি স্থগিত করা হয়।

পত্রিকাগুলোতে কর্মরত কয়েকজন সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঈদুল আজহার ছুটির পর খোলার প্রথম দিনে পত্রিকাগুলোর প্রকাশনা আবারও চালু হবে বলে তারা ভেবেছিলেন। তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ খোলার বিষয়ে তাদের কোনো সিদ্ধান্ত জানাননি।

জানতে চাইলে দৈনিক আজাদীর প্রধান প্রতিবেদক হাসান আকবর সারাবাংলাকে বলেন, ‘ঈদুল আজহার ছুটির পর পত্রিকা চালুর বিষয়ে জানতে আমরা কয়েকজন সিনিয়র সহকর্মী সম্পাদক মহোদয়ের কাছে গিয়েছিলাম। কিন্তু তিনি পত্রিকা প্রকাশ না করার সিদ্ধান্তে অনড় আছেন।’

বিজ্ঞাপন

এ বিষয়ে আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক সারাবাংলাকে বলেন, ‘কিভাবে পত্রিকা বের করব? পত্রিকা বের করার কোনো পরিবেশ আছে? যেখানে নিজের ইজ্জত নিয়ে টানাটানি, সেখানে আমি পত্রিকা বের করে কী করব? নিজের স্ত্রী-সন্তানের সামনে, পাড়া-প্রতিবেশীর সামনে কেউ যদি আপনাকে বেইজ্জত করে, আপনার কেমন লাগবে? মালিকের বাসার সামনে এসে আন্দোলনের ইতিহাস কি অতীতে আর একটিও আছে? আমি এখনো বুঝতে পারি না, আমার অপরাধটা কোথায়?’

‘যখন আমার বাসার সামনে এসে আমাকে গালাগালি করে গেল, আমি অন্য পত্রিকাগুলোর সম্পাদকদের ফোন করে বলেছি, ভাই আমি কাল থেকে আর পত্রিকা বের করব না। আমি কাউকে বলিনি যে আপনারাও বের করবেন না। উনারাই বলেছেন, তারাও বের করবেন না। বাংলাদেশে পত্রিকার ইতিহাস লিখতে গেলে অবশ্যই দৈনিক আজাদীর নাম আসবে। আবার মালিকের বাসার সামনে আন্দোলনের ইতিহাস লিখতে গেলেও আমার নাম আসবে। আমার পত্রিকা প্রকাশের খায়েশ মিটে গেছে,’— বলেন এম এ মালেক।

দৈনিক পূর্বকোণের প্রধান প্রতিবেদক নওশের আলী খান সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের পত্রিকা বের হচ্ছে না। কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এই ব্যাপারে আমাদের কোনো কথা হয়নি। কর্তৃপক্ষও আমাদের কিছু জানাননি।’

দৈনিক পূর্বদেশের সম্পাদক মুজিবুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের একটা অ্যালায়েন্স আছে। সেখানে যতক্ষণ সিদ্ধান্ত হবে না, ততক্ষণ তো আমি একা পত্রিকা বের করতে পারব না। পত্রিকা বের করার বিষয়ে আমাদের কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।’

বিজ্ঞাপন

দৈনিক বীর চট্টগ্রাম মঞ্চ ও দৈনিক সুপ্রভাত বাংলাদেশের সম্পাদকের সঙ্গে চেষ্টা করেও যোগাযোগ সম্ভব হয়নি। তবে সেখানে কর্মরতরা জানিয়েছেন, এই দু’টি পত্রিকাও প্রকাশ হচ্ছে না। কবে নাগাদ প্রকাশ হবে, সে বিষয়েও তাদের কিছুই জানানো হয়নি।

এদিকে সিইউজে সভাপতি মোহাম্মদ আলী চলমান সংকট নিরসনে সংশ্লিষ্ট পত্রিকা কর্তৃপক্ষকে আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘ঈদুল আজহার মাত্র দুই দিন আগে তারা আকস্মিকভাবে পাঁচটি পত্রিকা একসঙ্গে বন্ধ করে দেয়। এটা অমানবিক। কোনোভাবেই কাম্য নয়। আমরা বারবার আলোচনা করে সংকটের সুরাহা করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু পত্রিকা কর্তৃপক্ষ আমাদের সঙ্গে আলোচনায় বসেনি। আমরা আবারও আলোচনায় বসে এই সংকট সমাধানের আহ্বান জানাচ্ছি।’

সারাবাংলা/আরডি/টিআর

Tags: , , , , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন