‘বিদেশ ফেরতদের ৭০ শতাংশই জীবিকা সংকটে’
১২ আগস্ট ২০২০ ১৪:৩০
ঢাকা: সম্প্রতি দেশে ফিরে আসা ৭০ শতাংশ অভিবাসীই কর্মহীন। দেশের ১২ জেলায় বিদেশ ফেরত অভিবাসীদের ওপর পরিচালিত এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। ১০ আগস্ট আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) প্রকাশিত ‘র্যাপিড অ্যাসেসমেন্ট অব নিডস অ্যান্ড ভালনারেবিলিটিস অব ইন্টার্নাল অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল রিটার্ন মাইগ্র্যান্টস ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদনে এই ফলাফল দেখা যায়।
বুধবার (১২ আগস্ট) আইওএম থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত করা গবেষণায় উঠে এসেছে, বিদেশ থেকে ফেরত আসা অভিবাসীরা জীবিকা, আর্থিক সংকট (উপার্জনের অভাব এবং বর্ধিত ঋণ) এবং স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয়সহ পুনঃএকত্রীকরণে নানা ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। একেকজন অভিবাসীকর্মী গড়ে তার পরিবারের তিনজন সদস্যকে সহায়তা প্রদান করে থাকেন। সেক্ষেত্রে, অপরিকল্পিত ও বৃহৎ সংখ্যক জীবিকাহীন অভিবাসী কর্মীদের ফেরত আসার ফলে সারাদেশে রেমিটেন্স নির্ভর জনগোষ্ঠীর ওপরও বিরূপ প্রভাব পড়ছে।
বাংলাদেশ সরকারের সাথে সমন্বয় করে মোট ১ হাজার ৪৮৬ জন বিদেশ ফেরত অভিবাসীকে নিয়ে পরিচালিত জরিপের ওপর ভিত্তি করে এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে আইওএম। ২০২০ সালের মে ও জুলাই মাসে দেশের ১২টি উচ্চ অভিবাসন প্রবণ জেলায় এই জরিপ পরিচালনা করা হয়, যার মধ্যে সাতটি জেলায় ভারতের সাথে সীমান্ত রয়েছে। কোভিড-১৯ এর প্রভাবে অভিবাসী কর্মীদের সুনির্দিষ্টভাবে বিপদাপন্নতা তৈরি হয়েছে। এর কারণে উপার্জন ব্যবস্থা, সামাজিক সেবা, স্বাস্থ্যসেবা এবং সামাজিক সহায়তার নেটওয়ার্কের অভাবে হাজারও অভিবাসীকর্মী প্রবাসে যে দেশে কাজ করছিলেন সেখানে থেকে বাংলাদেশে তাদের জেলায় ফিরে আসতে বাধ্য হন। মোট ৬৪ শতাংশ আন্তর্জাতিক অভিবাসী উল্লেখ করেন যে, কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাবে তাদের কর্মস্থল দেশে তথ্য এবং স্বাস্থ্যসেবা পেতে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।
জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে মোট ২৯ শতাংশ বলেছেন, যে দেশে তারা ছিলেন সেই দেশ ত্যাগ করতে বলায় তারা বাংলাদেশে ফেরত এসেছেন। ২৩ শতাংশ জানান, তারা কোভিড-১৯ নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলেন এবং পরিবারের কাছে ফেরত আসতে চেয়েছেন। আর অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ২৬ শতাংশ জানান, পরিবার তাদের ফেরত আসতে বলায় তারা ফিরে এসেছেন। নয় শতাংশ জানান, তাদের বলা হয়েছে, সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়া হবে এবং আটকে পড়ার ভয়ে তারা ফেরত এসেছেন।
সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় মোট ৫৫ শতাংশ জানান, তাদের ওপর বর্ধিত শোধ না করা ঋণের বোঝা রয়েছে। তাদের মধ্যে ৫৫ শতাংশ পরিবার ও বন্ধুর কাছে ঋণগ্রস্ত, ৪৪ শতাংশ ক্ষুদ্র ঋণপ্রদানকারী প্রতিষ্ঠান (এমএফআই), স্বনির্ভর দল এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে ঋণগ্রস্ত। ১৫ শতাংশ পাওনাদারদের কাছে ঋণগ্রস্ত। পরিবার এবং বন্ধুদের কাছ থেকে ঋণ গ্রহণকারীদের ৮৬ শতাংশ বিনা সুদে ঋণ নিয়েছেন, অন্যদিকে এমএফআই, এনজিও এবং বেসরকারি ব্যাংকসমূহ থেকে গৃহিত ৬৫ শতাংশকে ঋণের জন্য সুদ বহন করতে হচ্ছে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ। মহাজন বা সুদে টাকা ধার দেন এমন ব্যক্তিদের কাছ থেকে নেওয়া ঋণের ক্ষেত্রে ৬২ শতাংশ ঋণগ্রহীতাকে সুদ গুনতে হচ্ছে ৫০ থেকে ১৫০ শতাংশ।
আইওএম বাংলাদেশ’র মিশন প্রধান গিওরগি গিগাওরি বলেন, ‘কোভিড-১৯ মহামারির সময় সবচেয়ে বিপদাপন্ন গোষ্ঠীদের মধ্যে রয়েছেন অভিবাসীকর্মীরা। বৈশ্বিক চলাচলের ওপর আরোপিত নতুন নিষেধাজ্ঞা এবং কোভিড-১৯ মহামারি সৃষ্ট মন্দার ফলে বিরূপ প্রভাব পড়ছে বাংলাদেশের অভিবাসীকর্মী ও রেমিটেন্স নির্ভর জনগোষ্ঠীর উপর। বাংলাদেশে জাতিসংঘের অভিবাসন বিষয়ক নেটওয়ার্কের সমন্বয়ক হিসেবে আইওএম বাংলাদেশে অভিবাসন বিষয়ক গবেষণায় অবদান রাখতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। এই গবেষণা বিদেশ ফেরত অভিবাসীদের টেকসই পুনঃএকত্রীকরণে প্রমাণ-ভিত্তিক কৌশল তৈরিতে সরকারি প্রচেষ্টাকে সাহায্য করবে। এই মহামারি চলাকালীন, গবেষণা বিপদাপন্ন অভিবাসীদের সহায়তা এবং সুরক্ষায় প্রতিক্রিয়াশীল, অভিবাসী-কেন্দ্রিক পদ্ধতির বিকাশে সাহায্য করবে। অভিবাসীদের তাদের সম্প্রদায়ে পুনরায় সংহত করার জন্য আমাদের একসঙ্গে কাজ করা উচিত।’
সাক্ষাৎকারে অংশগ্রহণকারীদের তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে প্রায় ৭৫ শতাংশ জানান, তারা আবার অভিবাসনে আগ্রহী। তাদের মধ্যে ৯৭ শতাংশই কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের পূর্বে যে দেশে কাজ করতেন সেই দেশেই পুনরায় অভিবাসনে ইচ্ছুক। অপরদিকে, ৬০ শতাংশ অংশগ্রহণকারী আরও ভালো বেতনের চাকরি নিশ্চিতে তাদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে আগ্রহী।
১০ আগস্ট আইওএম এক ভার্চুয়াল ব্রিফিং এ গবেষণার ফলাফল তুলে ধরে। বাংলাদেশ এবং আঞ্চলিক পর্যায়ের জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা, আন্তর্জাতিক ও বেসরকারি এবং স্থানীয় সংস্থা এবং শিক্ষা সংস্থার অংশীদারগণ এই ব্রিফিংয়ে অংশ নেন।
‘র্যাপিড অ্যাসেসমেন্ট অব নিডস অ্যান্ড ভালনারেবিলিটিস অব ইন্টার্নাল অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল রিটার্ন মাইগ্র্যান্টস ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক এই গবেষণাটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থায়নে ‘রিজিওনাল এভিডেন্স ফর মাইগ্রেশন এনালাইসিস অ্যান্ড পলিসি (রিমেপ)’ প্রকল্পের আওতায় পরিচালিত হয়েছে।