Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

৫ মাস পর মুখর সুপ্রিম কোর্ট, বারের ৪৮ সহকর্মীকে হারানোর বেদনা


১৩ আগস্ট ২০২০ ০৮:২১

ঢাকা: করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) কারণে শুরুতে একেবারে বন্ধ এবং পরে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে খোলা থাকলেও নিয়মিত আদালত বসেনি। তাতে এই পাঁচ মাসে সুনশান নিরবতা ছিল সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে। দীর্ঘ পাঁচ মাস পর ফের প্রাণচাঞ্চল্য ফিরেছে সেখানে। বিচারপতিরা বসেছেন এজলাসে, আইনজীবীরা উপস্থিত হয়ে মামলার শুনানিতে অংশ নিয়েছেন। তবে চেম্বারগুলোতে মূলত তরুণ আইনজীবীদের উপস্থিতিই ছিল বেশি। আর সবকিছু প্রায় স্বাভাবিক হয়ে এলেও পার্থক্য ছিল আইনজীবীদের পোশাকে। চিরচেনা কালো গাউনের পরিবর্তে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী তাদের পরনে ছিল সাদা পোশাক।

বিজ্ঞাপন

এদিকে, ১২ মার্চ থেকে ১২ আগস্ট পর্যন্ত পাঁচ মাসে ৪৮ জন সদস্যকে হারিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি। তাদের অধিকাংশই করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন। এই পাচঁ মাসে অনেকে তাদের সিনিয়র আইনজীবী এবং তাদের সহকর্মীদের হারিয়ে ভারাক্রান্ত মন নিয়ে শুরু করেছেন নিয়মিত আদালতের শুনানি।

গত ১৩ মার্চ থেকে অবকাশে ছিল হাইকোর্ট। এর মধ্যেই দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে শুরু করায় ২৬ মার্চ থেকে সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটির সঙ্গে মিল রেখে বন্ধ ‍ঘোষণা করা হয় আদালতেও। এরপর ধাপে ধাপে দেশের সব আদালতে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে বিচারকাজ শুরু হয়। আইনজীবীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে পাঁচ মাস পর প্রধান বিচারপতি ভার্চুয়াল পদ্ধতির পাশাপাশি নিয়মিত বিচারকাজ পরিচালনার ঘোষণা দেন। তারই আলোকে দীর্ঘ পাঁচ মাস পর বুধবার থেকে ১৮টি নিয়মিত আদালতে বিচার কাজ শুরু হয়েছে।

 

বুধবার (১২ আগস্ট) সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে গিয়ে দেখা যায়, সাদা পোশাকে হাজির হয়েছেন বিচারপতি ও আইনজীবীরা। এই চত্বরে পাঁচ মাস পরের কর্মচাঞ্চল্যের শুরুটা সকাল থেকেই আইনজীবীদের হাজির হওয়ার মাধ্যমে। কেউ কেউ প্রস্তুতি নেন মামলার শুনানির। অনেকেই দীর্ঘ দিন পর চেম্বার খুলে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে একে অন্যের খোঁজখবরও নিয়েছেন। অনেককে ফেসবুকে ছবি দিয়ে স্ট্যাটাস দিতেও দেখা গেছে। তবে চেম্বারগুলোতে বয়জ্যেষ্ঠ সিনিয়র আইনজীবীদের তুলনায় তরুণ আইনজীবীদের উপস্থিতিই বেশি দেখা গেছে। অনেক সিনিয়র আইনজীবী বাসায় বসে ভার্চুয়াল কোর্টে শুনানিতে অংশ নিয়েছেন।

সীমিত পরিসরে হলেও শারীরিক উপস্থিতিতে কিছু কোর্ট চালু করায় প্রধান বিচারপতিকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন আইনজীবীরা। কালো গাউন পরিধানের বাধ্যবাধকতা উঠে যাওয়াকেও স্বাগত জানিয়েছেন তারা।

বিজ্ঞাপন

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী বিথী রায় সারাবাংলাকে বলেন, করোনার এই সময়ে কালো কোট ও গাউন ছাড়া একটু ভিন্ন রকম লাগছে। তবে তীব্র গরমের এই সময়ে এটি না পরার সুযোগ পাওয়াটা একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ।

পাঁচ মাস পর সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে পা রাখতে পেরে উচ্ছ্বসিত ব্যারিস্টার শফিকুল ইসলাম সোহেল। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, দীর্ঘদিন আদালত চত্বরে উপস্থিত হতে পারিনি। স্বাভাবিকভাবেই খারাপ লাগছিল। কারণ এই আদালতই তো আমাদের অস্তিত্বের ঠিকানা। এতদিন ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে বিচারকাজ চলেছে। তাতে কাজ থেমে না থাকার স্বস্তি ছিল, কিন্তু তাতে মন ভরেনি। আজ অনেক ভালো লাগছে।

করোনা সংক্রমণের ঝুঁকির বিষয়ে ব্যারিস্টার শফিকুল বলেন, আদালতে শারীরিকভাবে উপস্থিত হলেও স্বাস্থ্যবিধি মনে চলছে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব হবে বলেই বিশ্বাস করি।

এদিকে দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর এখন পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ৪৮ সদস্যের মৃত্যু হয়েছে। তাদের অনেকেরই করোনায় আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ ছিল বলে জানিয়েছেন সমিতির কোষাধ্যক্ষ ব্যারিস্টার রাগিব রউফ।

তিনি সারাবাংলাকে বলেন, গত ৯ মার্চ থেকে ১২ আগস্ট পর্যন্ত আমাদের ৪৮ জন সদস্য মৃত্যুবরণ করেছেন। তাদের বেশিরভাগেরেই করোনা উপসর্গ থাকলেও সুনির্দিষ্টভাবে কতজন করোনায় মারা গেছেন, তার কোনো তালিকা করা হয়ীন। অনেকে বলতেও চাননি। তবে যেভাবেই হোক, তাদের প্রয়াণটিই মুখ্য।

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সুপারিনটেন্ডেন্ট নিমেশ চন্দ্র দাশ সারাবাংলাকে বলেন, করোনাকালীন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সদস্য সাবেক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, খালেদা জিয়ার আইনজীবী অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া ছাড়াও অ্যাডভোকেট মমতাজ বেগম, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির এবারের নির্বাচনে কোষাধ্যক্ষ পদে অংশ নেওয়া ড. এনামুল হক, আইনজীবী ইদ্রিসুর রহমানসহ সমিতির প্রায় অধর্শত সদস্য মারা গেছেন। তারা তো আমাদের স্বজন ছিলেন, একই পরিবারের মানুষ ছিলেন। তাদের প্রয়াণে আমরা গভীরভাবে শোকাহত।

দীর্ঘদিন আদালত বন্ধ থাকার পর ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে বিচারকাজ পরিচালনার সুযোগ মিললেও আইনজীবীদের দাবি ছিল আদালত খুলে দেওয়ার। দফায় দফায় এ বিষয়ে আলোচনা হলেও কোনো ঐকমত্যে আসতে পারেননি সংশ্লিষ্টরা। সবশেষ ৮ আগস্ট ফুলকোর্ট সভায় ভার্চুয়াল পদ্ধতির পাশাপাশি শারীরিকভাবে উপস্থিত হয়েও উচ্চ আদালতের বিচারকাজ পরিচালনার সিদ্ধান্ত হয়।

ওই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১০ আগস্ট ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে শুনানির জন্য ৩৫টি ও শারীরিক উপস্থিতির মাধ্যমে শুনানির জন্য ১৮টি বেঞ্চ গঠন করে দেন প্রধান বিচারপতি। পরদিন ১১ আগস্ট সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন চলমান পরিস্থিতিতে বিচারপতি ও আইনজীবীদের কালো গাউন পরার বাধ্যবাধকতা তুলে নেয়।

এর আগে, গত ১৩ মার্চ থেকে ‍সুপ্রিম কোর্টে ছুটি শুরু হয়। এরপর করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হলে ২৬ মার্চ থেকে সারাদেশের সব আদালতে ছুটি ঘোষণা করা হয়। পরে ১১ মে থেকে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে নিম্ন আদালত ও হাইকোর্টের কয়েকটি বেঞ্চে জরুরি মামলার শুনানি শুরু হয়। এরপর চেম্বার আদালতেও বিচার শুরু হয়। ১২ জুলাই থেকে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে শুরু হয় আপিল বিভাগের কার্যক্রমও।

আদালত বিচার সুপ্রিম কোর্ট

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর