৮ বছরে মেলেনি ক্ষতিপূরণ, নিষ্পত্তির অপেক্ষায় তারেক মাসুদের মামলা
১৩ আগস্ট ২০২০ ১০:৪০
ঢাকা: আজ ১৩ আগস্ট, ২০১১ সালের এ দিনে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয় চলচ্চিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদ এবং এটিএন নিউজের প্রধান নির্বাহী মিশুক মুনীর। এ ঘটনায় ২০১৩ সালে নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণ চেয়ে করা মামলা আট বছরেও চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়নি।
চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদের মৃত্যুর ঘটনায় তার পরিবারকে ৪ কোটি ৬১ লাখ ৪৫২ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে ২০১৭ সালে হাইকোর্ট আদেশ দিলেও সেটি এখন আপিল বিভাগে বিচারাধীন। অন্যদিকে মিশুক মুনীরের পরিবারের ক্ষতিপূরণ মামলাটি এখনও হাইকোর্টে পড়ে আছে।
চলতি বছরের মধ্যেই মিশুক মুনীরের মামলাটি হাইকোর্টে শুনানি শেষ হবে বলে প্রত্যাশা করেছেন তার আইনজীবীরা।
অন্যদিকে তারেক মাসুদের মৃত্যুর ঘটনায় ক্ষতিপূরণের মামলা আপিল বিভাগে কবে নাগাদ চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হবে তা ঠিক করে বলতে পারছেন না কেউই।
এ মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে তাদের আইনজীবী রমজান আলী শিকদার সারাবাংলাকে বলেন, ‘অনেক কারণেই মামলা নিষ্পত্তিতে দীর্ঘায়িত হয়। তার মধ্যে অন্যতম হলো মামলা জট। মামলা নিষ্পত্তির তুলনায় মামলা দায়েরের সংখ্যাও বেশি। যার কারনে মামলা নিষ্পত্তিতে বিলম্ব হচ্ছে।’
এছাড়াও মামলায় অপরপক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে এমন আশঙ্কা তারা বারবার সময় নিয়ে মামলাটিকে দীর্ঘায়িত করান। ফলে মামলা নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রিতা তৈরি হয়। তবে শিগগিরই মিশুক মুনীরের মামলাটি বিচারপতি জেবিএম হাসানের কোর্টে শুনানি শুরু হবে বলে জানিয়েছেন এই আইনজীবী। অন্যদিকে আপিলে চূড়ান্ত নিষ্পত্তির অপেক্ষায় থাকা তারেক মাসুদের মামলাটি নিয়মিত কোর্ট চালু হলে শুনানি হতে পারে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
মিশুক মুনীরের ছোট ভাই আসিফ মুনীর সারাবাংলাকে বলেন, ‘ক্ষতিপূরণ চেয়ে আমরা যে মামলাটি করেছি, এ মামলাটি একটি চ্যালেঞ্জ। কেননা এ মামলার মাধ্যমে আমরা চেষ্টা করছি একটি দৃষ্টান্ত স্থাপনের। যাতে অন্যরাও ক্ষতিপূরণ পেতে পারেন। ক্ষতিপূরণ দিতে আদালত যে রায় দেবেন সেটি হবে একটি নজির। কেননা সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিপূরণ সংক্রান্ত রায়টি হবে একটি দৃষ্টান্ত। এ জন্যই মূলত এ মামলা করা।’
মামলার দীর্ঘসূত্রিতা নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের বিচার ব্যবস্থায় মামলার সংখ্যা আমরা সকলেই প্রায় জানি। তারপরও প্রত্যাশা থাকে দ্রুত যেন মামলাটি নিষ্পত্তি হয়।’
এর আগে তারেক মাসুদের স্ত্রী ক্যাথরিন মাসুদ সারাবাংলাকে বলেছিলেন, ‘আমি বলবো আমরা একটু হতাশ। তারপরও দ্রুত প্রক্রিয়ার মধ্যে সমাধান হবে এমনটি আশা করছি।’
তারেক মাসুদের মামলাটি আপিল বিভাগে শুনানির অপেক্ষায় আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের মামলা আপিল শুনানির জন্য প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে। আশা করছি, সেটাও যাতে দ্রুত শেষ হয়।’
ক্যাথরিন মাসুদ বলেন, ‘প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ সড়কে প্রাণ হারাচ্ছে। শত শত পরিবার কষ্টভোগ করছে। দুর্ঘটনায় কেউ মারা গেলে পুরো পরিবারকেই কষ্ট করতে হয়। সেই কারণেই এ মামলায় ক্ষতিপূরণের বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আদালতের মাধ্যমে এটি তাড়াতাড়ি সমাধান হবে এমনটি প্রত্যাশা করছি।’
মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার জোকা এলাকায় ২০১১ সালের ১৩ আগস্ট ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে দুর্ঘটনায় মারা যান তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীরসহ ৫ জন। তারেক ও মিশুককে বহনকারী মাইক্রোবাসটির সঙ্গে চুয়াডাঙ্গাগামী একটি বাসের সংঘর্ষে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা করে।
এ ঘটনার প্রায় দেড় বছর পর ২০১৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি নিহতদের পরিবারের সদস্যরা মানিকগঞ্জে মোটরযান অর্ডিন্যান্সে ১২৮ ধারায় বাস মালিক, চালক ও ইনস্যুরেন্স কোম্পানির বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণ চেয়ে দুটি মামলা করেন।
পরে সংবিধানের ১১০ অনুচ্ছেদ অনুসারে জনস্বার্থে হাইকোর্টে বদলির নির্দেশনা চেয়ে আবেদন করলে মামলা দুটি হাইকোর্টের চলে আসে। দীর্ঘ শুনানি শেষে ২০১৭ সালের ৩ ডিসেম্বর তারেক মাসুদের পরিবারকে ৪ কোটি ৬১ লাখ ৪৫২ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে বাস মালিক, চালক ও সংশ্লিষ্ট ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিকে নির্দেশ দেন বিচারপতি জিনাত আরা ও বিচারপতি কাজী ইজারুল হক আকন্দের হাইকোর্ট বেঞ্চ।
রায়ের কপি পাওয়ার তিন মাসের মধ্যে টাকা পরিশোধ করতে বলা হয়। এরমধ্যে বাসের (চুয়াডাঙ্গা ডিলাক্স) তিন মালিক দেবেন ৪ কোটি ৩০ লাখ ৮৫ হাজার ৪শ ৫২ টাকা, বাস চালক জমির উদ্দিন দেবেন ৩০ লাখ টাকা এবং রিলায়েন্স ইনস্যুরেন্স কোম্পানি দেবেন ৮০ হাজার টাকা। তিন মালিক সমান হারে টাকা দেবেন। এ টাকা ক্যাথরিন মাসুদ, নিহতের ছেলে নিষাদ মাসুদ ও বৃদ্ধা মা নুরুন নাহার পাবেন বলে রায়ে বলা হয়েছে।
এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করায় মামলাটি এখন আপিলে চুড়ান্ত নিষ্পত্তির অপেক্ষায় আছে। অন্যদিকে, মিশুক মুনীরের মামলাটি হাইকোর্টের বিচারপতি জে বি এম হাসানের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চে শুনানির পর্যায়ে রয়েছে।
উল্লেখ্য এ ঘটনায় দায়ের হওয়া হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ প্রাপ্ত সেই বাস চালক জামির হোসেন কারাগারে মারা গেছেন। গত ১ আগস্ট ঈদের দিন সকালে কাশিমপুর কারাগার থেকে তাকে ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিলে সেখানে তিনি মারা যান।