Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বিদ্যালয়ে শোক দিবসের আয়োজন সীমিত পরিসরে, অনলাইনে


১৩ আগস্ট ২০২০ ১৮:৩৭

প্রতিবছর জাতীয় শোক দিবসে বিদ্যালয়গুলোতে এমন চিত্রাঙ্কন প্রতিযাগিতাসহ নানা আয়োজন থাকে; এবার করোনাভাইরাসের কারণে বেশিরভাগ আয়োজনই হবে অনলাইনে। গত বছর শোক দিবসে কুড়িগ্রামের একটি বিদ্যালয়ের ছবি

ঢাকা: ১৫ আগস্ট। জাতীয় শোক দিবস। নানা আয়োজনে দিনটি পালন করা হয় রাষ্ট্রীয়ভাবেই। তবে এ বছর করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) কেড়ে নিয়েছে সব আয়োজন। সম্পূর্ণ ভিন্ন এক পরিস্থিতিতে শেষ পর্যন্ত শোক দিবসের সব আয়োজনও করা হচ্ছে অনলাইনে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি বিদ্যালয়ের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিদ্যালয়গুলোর জন্যও দেওয়া হয়েছে একই নির্দেশনা। স্বাস্থ্যবিধি মেনে আয়োজন করতে হবে শোক দিবসের অনুষ্ঠান, তবে সীমিত পরিসরের সে আয়োজনে হাতে গোনা কয়েকজন উপস্থিত থাকবেন বিদ্যালয়ে। বাকিরা যুক্ত হবেন অনলাইনে।

বিজ্ঞাপন

১৫ আগস্ট। ৪৫ বছর আগে এই দিনে স্বাধীনতার স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যা করে ঘাতকরা। জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে শোক দিবস হিসেবে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে দিনটি পালন করা হয়। রাষ্ট্রীয়ভাবেও এটি জাতীয় শোক দিবস। এই দিনটিতে বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্ম ঘিরে বিভিন্ন আয়োজন থাকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতেও। এ বছর মুজিববর্ষ তথা জাতির জনকের জন্মশতবার্ষিকী হওয়ায় শোক দিবস ঘিরে পরিকল্পনা ছিল আরও বেশি। বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস সব পরিকল্পনায় জল ঢেলে দিয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে প্রায় পাঁচ মাস ধরে বন্ধ দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি যেহেতু এখনো দূর না হওয়ায় স্কুল-কলেজে শোক দিবসের আয়োজনও বাস্তবসম্মত নয়। মন্ত্রণালয় থেকেও দেওয়া হয়েছে একই নির্দেশনা।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এবার দিনটি সীমিত পরিসরে পালন করা হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবুল খায়ের সারাবাংলাকে বলেন, ‘করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে জনসমাগম এড়িয়ে একদম সীমিত পরিসরে শোক দিবস পালনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ওইদিন মাতৃভাষা ইনস্টিউটে স্বল্প পরিসরে শিক্ষামন্ত্রী, শিক্ষা উপমন্ত্রী, সচিবসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও দফতরের কর্মকর্তাদের নিয়ে শোক দিবসের আলোচনা সভার আয়োজন করা হবে। এই আয়োজন বাংলাদেশ টেলিভিশন সরাসরি সম্প্রচার করবে। চাইলে বেসরকারি টেলিভিশনও সরাসরি সম্প্রচারে অংশ নিতে পারবে।’

বিজ্ঞাপন

প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও ভার্চুয়াল পদ্ধতিতেই শোক দিবস পালনের উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছে। পাঠদান বন্ধ থাকলেও বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সীমিত পরিসরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে জাতীয় শোক দিবস পালন করবে বলে জানিয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ জাকির হোসেন। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, যেভাবে অনলাইনে ক্লাস করা হয়, সেভাবেই করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে আমরা অনলাইনে দোয়া মাহফিল ও শোক দিবসের আলোচনার আয়োজন করব।

জুলাইয়ের মাঝামাঝিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকেই মূলত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শোক দিবসের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ আলোচনা সভা, কবিতা পাঠ, রচনা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, চিত্র প্রদর্শনী, হাম-নাত প্রতিযোগিতা ও দোয়া মাহফিল ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে আয়োজনের নির্দেশনা দেওয়া হয়। এর বাইরে সংসদ টেলিভিশনেও শিক্ষার্থীদের জন্য বঙ্গবন্ধুর জীবনভিত্তিক আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে বলে জানানো হয়।

কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবার শোক দিবসের দিনে স্কুলে এসে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা, শোকের প্রতীক কালো পতাকা উত্তোলন, বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামী জীবন ও কীর্তির ওপরে আলোচনা, তার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা, শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভিন্ন প্রতিযোগিতা আয়োজন, মিলাদ মাহফিল, স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি, আলোকচিত্র প্রদর্শনী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উদযাপন— এর বেশিরভাগ আয়োজনই হচ্ছেই না। যেগুলো শেষ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে, সেগুলোও হবে সীমিত পরিসরে।

শিক্ষকরা বলছেন, করোনাভাইরাস মহামারির কারণে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। তাই এবার বাড়িতেই থাকতে হবে শিক্ষার্থীদের। তবে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভার্চুয়াল পদ্ধতি ব্যবহার করে সীমিত পরিসরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পালন করবে জাতীয় শোক দিবস। তারা জানিয়েছেন, অনলাইনে যেভাবে ক্লাস হয়, সেভাবেই শিক্ষার্থীরা শোক দিবসের আয়োজনে অংশ নিতে পারবে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেঠাগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নুরু উদ্দিন মিয়া সারাবাংলাকে বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে অনলাইনে শোক দিবসের অনুষ্ঠান আয়োজনের নির্দেশনা পেয়েছি। আমরা সেভাবেই প্রস্তুতি নিচ্ছি। প্রধান শিক্ষকসহ আমরা কয়েকজন সহকারী শিক্ষক বিদ্যালয়ে উপস্থিত থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে কিছু কার্যক্রমে অংশ নেব। বাকিরা অনলাইনে যুক্ত হবে।

তেজগাঁও শিল্প এলাকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক জানিয়েছেন, হাতেগোনা কয়েকজন শিক্ষক উপস্থিত থাকতে পারেন শোক দিবসের আয়োজনে। দুই-চার জন শিক্ষার্থী উপস্থিত থাকবে কি না, সে বিষয়ে তারা এখনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি। তবে শিক্ষার্থীদের উপস্থিত না করার সম্ভাবনাই বেশি। তাদের যত জনকে সম্ভব অনলাইনে যুক্ত করা হবে।

এদিকে, জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে ‘আমার মুজিব’ নামে একটি সংকলন প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদফতর। মাউশি’র মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমার মুজিব’-এর জন্য সারাদেশ থেকে শিক্ষার্থী লেখা পাঠাচ্ছে। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে নিজ নিজ অনুভূতি লেখনিতে তুলে ধরছে শিক্ষার্থীরা। গল্প, ছড়া, প্রবন্ধ লিখছে এবং ছবি এঁকে পাঠাচ্ছে। সেখান থেকে বাছাই করে সংকলনটি প্রকাশ করা হবে। এছাড়া জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা, জাতীয় শোক দিবসের আলোচনা, দোয়া মাহফিল— বেশিরভাগই আমরা অনলাইনে করব। আর সশরীরে উপস্থিত থেকে দুয়েকটি অনুষ্ঠান হলেও সেগুলো কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে আয়োজন করা হবে।

১৫ আগস্ট অনলাইনে শোক দিবস পালন জাতীয় শোক দিবস প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে শোক দিবস পালনৎ শিক্ষা মন্ত্রণালয় শোক দিবসের আয়োজন সরকারি বিদ্যালয়

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর