মাঠপর্যায়ে অনিয়ম-দুর্নীতি, কৃষিতে কাজে আসছে না সরকারি বরাদ্দ
১৩ আগস্ট ২০২০ ২০:০৯
গাজীপুর: জেলার সদর উপজেলা কৃষি অফিসের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ফসলের উন্নত জাত, প্রযুক্তি প্রদর্শনী স্থাপন, মাঠ দিবসসহ বিভিন্ন খাতের টাকা লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া প্রদর্শনীভুক্ত বীজ উৎপাদনে নির্বাচিত কৃষকদের সংখ্যাও বেশি দেখানো হয়েছে। ব্লক বা মাঠ পরিদর্শন না করে কর্মকর্তাদের ভ্রমণ বিল ও মোটরসাইকেলের তেলের টাকা এবং ভুট্টা, পেঁয়াজ, বিটি বেগুন, সরিষাসহ বিভিন্ন প্রদর্শনী না করে মিথ্যা ভাউচারে বরাদ্দকৃত টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে। যে কারণে কৃষিতে কাজে আসছে না সরকারি বরাদ্দ।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানায়, খাদ্য নিরাপত্তার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ফসলের উন্নত জাত ও প্রযুক্তি সম্প্রসারণ এবং উৎপাদন বৃদ্ধি কার্যক্রমের অংশ হিসেবে রাজস্ব অর্থায়নে প্রদর্শনী ও পর্যবেক্ষণ কার্যক্রমে অনিয়মের শেষ নেই। এব অনিয়মের সাথে জড়িত উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাবিনা সুলতানা, অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা বনানী কর্মকার ও সম্প্রসারণ কৃষি কর্মকর্তা সাবরিনা আফরিন এবং সহায়তা করছেন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. শহীদুল ইসলাম ভূইয়া পাভেল, সানিয়া সুলতানাসহ কয়েকজন।
জানা গেছে, সদর উপজেলার বাড়িয়া ইউনিয়নের সুকন্দি গ্রামের কৃষক আহসান সরকার আদা চাষ করেছিলেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের ডাল, তেল, মসলা বীজ উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিতরণ প্রকল্পের আওতায় তিনি আদা চাষ শুরু করেছিলেন। সরকারি সহায়তায় বীজ, সার ও অন্যান্য সহায়তা বাবদ এক লাখ ত্রিশ হাজার টাকার সমপরিমাণ সহায়তার কথা। কিন্তু কৃষক আহসান সরকার সহায়তা হিসেবে পেয়েছেন শুধুমাত্র বীজ।
কৃষক আহসান সরকার অভিযোগ করে জানান, ব্লকের দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তার অসহযোগিতায় বীজ শোধন ছাড়াই জমিতে আদা লাগাতে হয়। এরপর ছত্রাকে আক্রান্ত হয়ে ক্ষেতে জন্মানো আদা গাছ কিছুদিন পর লাল হয়ে মরে যেতে থাকে। অথচ মাঠ দিবসের এই আদা প্রদর্শনীতে দেখিয়ে টাকা আত্মসাৎ করেছেন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. শহীদুল ইসলাম ভূইয়াসহ সংশ্লিষ্টরা।
অভিযোগের বিষয়ে উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. শহীদুল ইসলাম ভূইয়াকে ফোন করা হলে তিনি বলেন, ‘আদা চাষ নিয়ে আপনার সাথে কোনো কথা নেই।’ এরপর তিনি ফোন কেটে দেন।
আরও জানা যায়, একই ব্লকের দিগধা গ্রামে বোরো ব্রি ধান-৮১ এর প্রদর্শনীভূক্ত বীজ উৎপাদন ১৫ জন কৃষক দলের প্রধান মো. সুরুজ্জামানের প্রদর্শনী প্লটে মাঠ দিবস অনুষ্ঠিত হয়েছে। এটি ছিল ৫০ জন কৃষকের মাঠ দিবস। মাঠ দিবসে উপস্থিত সব কৃষকের সম্মানী ভাতা হিসেবে তিনশ টাকা পাওয়ার কথা ছিল। তবে কয়েকজন কৃষক ছাড়া অন্যদের ভাতা দেওয়া হয়নি।
শুধু তাই নয়, ফল ও বৃক্ষমেলা-২০১৯ এর আওতায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিনামূল্যে চারা বিতরণেও অনিময়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিকেবাড়ি ব্লকের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সানিয়া সুলতানা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর গাজীপুরের উপ পরিচালকের দফতরে দাখিল করা মাস্টার রোলে প্রাপ্তি স্বীকার স্বাক্ষরের কলামে ডগরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বিকেবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম রয়েছে।
যোগাযোগ করা হলে ডগরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাহিদ হোসেন এবং বিকেবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আজিজুল ইসলাম কোনো ধরণের চারা গাছ পাননি বলে জানান। এছাড়া মাস্টার রোলের স্বাক্ষর তাদের নয় বলেও জানান।
এ ব্যাপারে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সানিয়া সুলতানার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাবিনা সুলতানা বলেন, ‘আমরা এখন করোনা ও বন্যা পরবর্তী কার্যক্রম নিয়ে ব্যস্ত। পুরনো বিষয় নিয়ে কথা বলতে চাই না। আমাদের ভালো কাজ নিয়ে রিপোর্ট লেখেন, মন্দ কথা লিখবেন না।’
একাধিক সূত্রে জানা যায়, কৃষি সম্প্রসারণ কাজে গাজীপুরের উপপরিচালক মো. মাহবুব আলম সশরীরে মাঠ পর্যায়ে পরিদর্শন বা তদারকি করেন না। কৃষি প্রশিক্ষণে কথিত বক্তৃতা দেওয়ার নামে টাকা পকেটে ভরার অভিযোগও রয়েছে এই উপপরিচালকের বিরুদ্ধে।
তবে অনিয়ম-অব্যবস্থাপনার সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর গাজীপুরের উপপরিচালক মো. মাহবুব আলম। তিনি বলেন, ‘আমার এখানে অনিয়ম হয় না।’