Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ৩ লাখ টাকার বাড়িতে উঠছেন সেই ‘দাতা ভিক্ষুক’


১৫ আগস্ট ২০২০ ২২:৩৮

শেরপুর: ঝিনাইগাতী উপজেলার কাংশা ইউনিয়নের গান্ধীগাঁও গ্রাম। সেই গ্রামেই ভেন্নাপাতার ছাউনি দেওয়ার মতো ঘরে বাস করতেন নাজিম উদ্দিন (৮২)। পেশা ছিল ভিক্ষাবৃত্তি। আর ভিক্ষা করে ঘর মেরামতের জন্য দুই বছর ধরে ১০ হাজার টাকাও জমিয়েছিলেন। কিন্তু করোনা মহামারিতে যখন জনজীবন বিপর্যস্ত, মানুষের কাজ নেই, খাবারের স্বল্পতা- ঠিক তখনই কর্মহীন মানুষের কষ্ট সইতে না পেরে নিজের জমানো সেই টাকা সরকারের ত্রাণ তহবিলে দান করে দিলেন নাজিম উদ্দিন।

সরকারের ত্রাণ তহবিলে হতদরিদ্র ভিক্ষুক নাজিম উদ্দিনের দানের খবরটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নজরে আসে। পরে প্রধানমন্ত্রী নাজিম উদ্দিনের উদারতায় খুশি হয়ে নিজের তহবিল থেকে উপহার হিসেবে জমি, ঘর ও দোকান করে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। এতদিনের কষ্টের জীবন শেষে ভেন্নাপাতার ছাউনির মতো ঘর ছেড়ে দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী সেই ‘দাতা ভিক্ষুক’ রোববার (১৬ আগস্ট) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারের আধুনিক পাকা বাড়িতে উঠবেন। কালই নতুন ঘরের চাবি তুলে দেওয়া হবে তার হাতে।

নাজিম উদ্দিন যে ঘরটিতে এতদিন ছিলেন সেটিও ছিল সরকারের খাস। কিন্তু তিনি তা জানতেন না। সরকারের এই খাস জমিটিও ভিক্ষুক নাজিম উদ্দিনের নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তিনি যে ঘরে থাকতেন সেই জমি কিছুটা সম্প্রসারণ করে ১৫ শতাংশ জমি তার নামে বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। আর নাজিম উদ্দিনকে যাতে আর কখনও ভিক্ষা করতে না হয় সেজন্য তাকে একটি দোকানও করে দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।

এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় হতদরিদ্র নাজিম উদ্দিনের চিকিৎসার দায়িত্ব নেওয়া হয়েছে এবং ইতোমধ্যে তার অসুস্থ মেয়ের চিকিৎসাও করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার উপহার পেয়ে খুশি গান্ধীগাঁও গ্রামের মৃত ইয়ার উদ্দিনের ছেলে নাজিম উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘ঘর রেডি হইছে। কাল নতুন ঘরে তুলে দেবো, ডিসি সাব আইবো। ঘর পছন্দ হয়েছে। খুশি হইছি দেইখা।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দীর্ঘায়ু ও মঙ্গল কামনা করে তিনি বলেন, ‘এরকম প্রধানমন্ত্রী আমার ৮২ বছর বয়সে আর কহনো দেহি নাইকা। মনে করন আমি তো করোনার জন্য ট্যাহাডা দিছি। সেহানে খুশি হইয়া প্রধানমন্ত্রী আমাক যে উপহার দিছে, খুব আমি খুশি হইছি। ঘরবাড়ি সব দিল। আমি আর কোনো কিছু চাই না। আমি দোয়া করি আল্লাহ তারে দীর্ঘদিন বাঁচায়ে রাখুক। যতদিন বেঁচে থাকে ততদিন আল্লাহ তারে আজত্ব করার সুযোগ দিক।’

ভিক্ষুক হয়েও কষ্টের জমানো টাকা দান করে নজির স্থাপন করায় নাজিম উদ্দিনের প্রশংসা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভিক্ষুক নাজিম উদ্দিন সারাবিশ্বে একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি সারাবিশ্বে মহৎ দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছেন। এত বড় মানবিক গুণ অনেক বিত্তশালীর মাঝেও দেখা যায় না। তার কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার আছে।’

এদিকে শেরপুরের জেলা প্রশাসক আনার কলি মাহবুব সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় আমরা নাজিম উদ্দিনের জন্য তিন লাখ টাকা ব্যয়ে ঘর তৈরি করেছি। আর তার জীবিকা নির্বাহের জন্য এক লাখ টাকা ব্যয়ে আমরা একটি মুদি দোকান করে দিয়েছে। এছাড়া তার চিকিৎসার দায়িত্বও আমরা নিয়েছি। ইতোমধ্যে তার অসুস্থ মেয়েরও চিকিৎসা করা হয়েছে। আর পরিবারটির যেন আর কষ্ট না হয় সেজন্য এক মাসের খাবারের ব্যবস্থার পাশাপাশি তাদের পোশাকও কিনে দেওয়া হয়েছে।’

যার কাছে ভিক্ষুক নাজিম ১০ হাজার টাকা তুলে দিয়েছিলেন ঝিনাইগাতীর সেই উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রুবেল মাহমুদ বলেন, ‘করোনাকালীন প্রথমদিকের লকডাউনে আমরা প্রায় পাঁচ হাজার পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দিয়েছি। সেজন্য একটি তহবিল গঠন করেছিলাম। সেই তহবিলেই নাজিম উদ্দিন টাকা দান করেন। পরে বিষয়টি স্থানীয় মানুষজনের মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। এক পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ফোন করে নাজিম উদ্দিন সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে তাকে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে বাড়ি করে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে বলা হয়। কয়েকদিনের মধ্যেই টাকা চলে এলে আমরা দ্রুত বাড়িটি নির্মাণ করি। এখন তার কাছে বাড়িটি হস্তান্তর করা হবে।’

একজন মানবিক মানুষের জন্য এমন একটি উদ্যোগে সম্পৃক্ত থাকতে পেরে নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করছেন ইউএনও রুবেল মাহমুদ।

উপহার ঝিনাইগাতী দাতা ভিক্ষুক নাজিম উদ্দিন প্রধানমন্ত্রী বাড়ি


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর