‘মিথ্যাচার করে জিয়াকে খাটো করার চেষ্টা করছে ক্ষমতাসীনরা’
১৬ আগস্ট ২০২০ ১৮:৫৩
ঢাকা: ক্ষমতাসীনরা মিথ্যাচার করে জিয়াউর রহমানকে খাটো করার অপচেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
রোববার (১৬ আগস্ট) এক ভার্চুয়াল আলোচনায় তিনি এ অভিযোগ করেন। খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এ আলোচনা সভা আয়োজন করা হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই দেশের স্বাধীনতা যিনি (জিয়াউর রহমান) ঘোষণা দিলেন, যিনি যুদ্ধ করলেন, একই সঙ্গে যিনি রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে আসার পর দেশকে জাগিয়ে তুললেন, তার সম্পর্কে মিথ্যা কথা বলে তাকে খাটো করার চেষ্টা করা হচ্ছে।’
‘আসলে আওয়ামী লীগের কেমেস্ট্রিটা হচ্ছে দলীয়করণের কেমেস্ট্রি। ওখানে নিরপেক্ষতা অথবা দলের বাইরে যোগ্যতাকে প্রাধান্য দিয়ে কাজ করা— এটা তাদের মধ্যে নেই। আজকে গোটা রাষ্ট্রকে দলীয়করণ করে ফেলেছে তারা। এটা তাদের আদর্শগত, নীতিগত ব্যাপার। কারণ, ১৯৭৫ সালে তারা একদলীয় শাসন বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছিল। আমরা তো সেগুলো ভুলে যাইনি। আজকে যদিও সবকিছু ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। এতো সহজে সত্যকে তো ঢেকে দেওয়া যায় না’— বলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
তিনি বলেন, ‘আমরা খুব খারাপ সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। এই সময়ে খেলাধুলা বলুন, গান-বাজনা বলুন আর রাজনীতি বলুন কোনোটাই দলীয়করণের বাইরে নয়। আমরা ১৯৭১ সালে যুদ্ধ করেছিলাম সেই চেতনাটি ছিল গণতান্ত্রিক চেতনা, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নির্মাণ করার চেতনা, গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণ করবার চেতনা, সেই চেতনাকে আমরা হারিয়ে ফেলেছি।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘যারা আজকে শাসন করছেন তারা সেই চেতনাকে বিনষ্ট করে দিয়ে একদলীয় ফ্যাসিবাদী সরকার তারা প্রতিষ্ঠা করেছে। এখানে খেলাধুলা আলাদা ব্যাপার নয়, ক্রীড়াঙ্গন আলাদা ব্যাপার নয়। পুরো রাষ্ট্রটাই এখন একটা দলের মধ্যে, চিন্তার মধ্যে চলে গেল।’
তিনি বলেন, ‘কিছুদিন আগে আমেরিকান অ্যাম্বেসিতে এক অনুষ্ঠানে প্রতিথযশা কণ্ঠশিল্পী ফরিদা পারভীনের সঙ্গে আমার দেখা হয়েছিল, তার স্বামী হাকিম সাহেবের সঙ্গে আমার দেখা হয়েছিল। উনার খুব দুঃখ করে বললেন, এখন আর তাদেরকে সরকারি অনুষ্ঠানে ডাকা হয় না। কী নিদারুণ অবস্থা চিন্তা করেন। শিল্পী ফরিদা পারভীন যিনি লালনসঙ্গীত-লোক সঙ্গীতে বিশেষ অবদানের জন্য আন্তর্জাতিক বহু পুরস্কারও পেয়েছেন, হাকিম সাহেব ওই ধরনের বংশীবাদক, তাদেরকে ডাকা হয় না।’
‘ঠিক একইভাবে যারা মুক্তিযুদ্ধ করেছেন কিন্তু তাদের (আওয়ামী লীগ) সমর্থক ছিলেন না। তারা মারা যাওয়ার পরে তাদের মরদেহ শহীদ মিনারে পর্যন্ত নিতে দেওয়া হয়নি’— বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘এই অবস্থা থেকে উত্তরণে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার সংগ্রাম জোরদার করতে হবে। আমি একজন রাজনীতির সঙ্গে জড়িত মানুষ হিসেবে বলতে পারি, কর্মী হিসেবে বলতে পারি যে, দল-মত নির্বিশেষ আমাদের যে রাষ্ট্র, যেটা আমাদের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র, বহু চিন্তার যে রাষ্ট্র, বহুমতের যে রাষ্ট্র, সেই রাষ্ট্রকে আমরা প্রতিষ্ঠা করতে চাই। এখানে কে বিএনপি করে, কে আওয়ামী লীগ করে, কে সিপিবি করে, কে অন্যান্য দল করে ওটা বেশি ব্যাপার নয়, ব্যাপারটা হচ্ছে এই রাষ্ট্রকে সকলের কথায়, সকলের মতের চিন্তার স্বাধীনতা এবং জনগনের প্রতিনিধিদের নিয়ে আমরা রাষ্ট্র পরিচালনা করব। তাহলেই ক্রিকেট, ক্রীড়াঙ্গন সবকিছুরই উন্নয়ন হবে।’
ক্রিকেটসহ বাংলাদেশের ক্রীড়াক্ষেত্রে উন্নয়নে আরাফাত রহমান কোকোর অবদানের কথা স্মরণ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘কোকো রাজনীতির বাইরে থেকে পুরোপুরিভাবে খেলাকে খেলা হিসেবে দেখেছেন। আজকে ক্রিকেটে যে ভিত্তি আমরা দেখতে পাই, এটা তৈরি করেছিলেন আরাফাত রহমান কোকো।’
যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালামের সভাপতিত্বে ও বিএনপির ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক আমিনুল হকের পরিচালনায় আলোচনা সভায় জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিকনায়ক শফিকুল হক হীরা, ক্রিকের্ট বোর্ডের সাবেক সহসভাপতি শাহ নুরুল কবির শাহিন, সাবেক যুগ্ম সম্পাদক রফিকুল ইসলাম বাবু, জেলা বিভাগীয় ক্রীড়া সংগঠক পরিষদের মহাসচিব কাজী মহিউদ্দিন বুলবুল, ক্রীড়া সংগঠক তাবিথ আউয়াল ও প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন বক্তব্য রাখেন।