সিনহা হত্যা ‘অপ্রত্যাশিত’— জানালো পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনও
১৭ আগস্ট ২০২০ ২২:১১
ঢাকা: কক্সবাজারের টেকনাফের একটি চেকপোস্ট সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের পর এবার পুলিশ অ্যাসোসিয়েশেনও ‘অপ্রত্যাশিত’ বলে অভিহিত করেছে। বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ওই ঘটনাকে অনভিপ্রেত ও অনাকাঙ্ক্ষিত বলেও অবিহিত করেছে সংগঠনটি। বলছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও কিছু মিডিয়ায় যেভাবে ঘটনাটিকে তুলে ধরা হচ্ছে, তাতে দু’টি বাহিনীকে মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড় করানোর অপচেষ্টা চলছে।
সোমবার (১৭ আগস্ট) বিকেলে বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের বিমানবন্দর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বি এম ফরমান আলী এবং সাধারণ সম্পাদক ও যাত্রাবাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাজহারুল ইসলামের সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মহান মুক্তিযুদ্ধে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ২৫শে মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি হানাদারদের বিরুদ্ধে প্রথম প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল বাংলাদেশ পুলিশবাহিনী। ফলে মহান মুক্তিযুদ্ধে একক বাহিনী হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশের বেশি সংখ্যক সদস্য শাহাদাত বরণ করেন। আত্মত্যাগের সেই মহান ব্রত নিয়ে বাংলাদেশ পুলিশবাহিনীর প্রতিটি সদস্য সর্বদা দেশ ও জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছে। গত ৩১ জুলাই ২০২০ রাতে কক্সবাজারে সেনাবাহিনীর মেজর (অবসরপ্রাপ্ত) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান পুলিশের চেকপোস্টে অপ্রত্যাশিত, অনভিপ্রেত ও অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে নিহত হন।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, এ ঘটনার নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু তদন্তের জন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে উচ্চ পর্যায়ের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির তদন্ত চলাকালীন নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে আদালতে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলাটি বর্তমানে র্যাব তদন্ত করছে। আইনের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যরা দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিজ্ঞ আদালতে আত্মসমর্পণ করেছেন। গত ৫ আগস্ট সম্মানিত সেনাপ্রধান ও পুলিশ প্রধান কক্সবাজারে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তখন তারা যৌথ সংবাদ সম্মেলনে নিরপেক্ষ ও প্রভাবমুক্ত পরিবেশে তদন্ত সম্পন্নের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ব্যক্তির কোনো দায় প্রতিষ্ঠান বহন করবে না মর্মেও তারা ঘোষণা দেয়।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও উল্লেখ করা হয়, স্বাধীনতা উত্তরকাল হতে দেশের বিভিন্ন দুর্যোগ ও জরুরি প্রয়োজনে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দায়িত্ব পালনের বিষয়টি উভয় বাহিনীর প্রধান পুনর্ব্যক্ত করেন। ওই সময় কক্সবাজার জেলার সংশ্লিষ্ট এলাকায় সেনা এবং পুলিশের যৌথ টহলের উদ্যোগ নেওয়া হয়। গৃহীত এই উদ্যোগের জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর প্রধানদ্বয়ের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা ও বিনম্র শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছে বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রীর প্রজ্ঞাবান নেতৃত্বে প্রায় একযুগে বাংলাদেশ বিস্ময়করভাবে অর্থনৈতিক সাফল্য ও সামাজিক স্থিতিশীলতা অর্জন করে চলেছে। আর সামাজিক স্থিতিশীলতা ও বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশ বিনির্মানে রয়েছে পুলিশের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। বর্তমান করোনা মহামারিতে শুরু থেকেই সম্মুখযোদ্ধা হিসেবে লড়াই করে যাচ্ছে বাংলাদেশ পুলিশের প্রতিটি সদস্য। করোনা পরিস্থতিতে সবাই যখন স্বজন নিয়ে ঘরে ছিলেন, তখন পরিবার ও প্রিয়জনকে দূরে রেখে মানুষকে সেবা দিতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় সাড়ে পনের হাজার পুলিশ সদস্য। এবং এ পর্যন্ত মৃত্যুবরণ করেছেন ৬৭ জন। শুধুমাত্র করোনাকালেই নয়, জঙ্গি কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ, সারাদেশে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন, মাদক নিয়ন্ত্রণ, জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এর মাধ্যমে ২৪ ঘণ্টা সেবা প্রদানসহ প্রতিনিয়ত সাধারণ মানুষের বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে কার্যকর ভূমিকা রাখছে বাংলাদেশ পুলিশের প্রতিটি সদস্য।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর মধ্যে সুদীর্ঘকাল পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাসের সম্পর্ক বিদ্যমান উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করেছি, কিছু ব্যক্তি বা মহল বা সংগঠন জনগণের কাছে বাংলাদেশ পুলিশবাহিনীকে বিতর্কিত ও অগ্রহণযোগ্য করার জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় উল্লিখিত ঘটনার বিষয়ে উস্কানিমূলক বিভিন্ন বক্তব্য দিচ্ছেন। দুটি ঐতিহ্যবাহী ও ভ্রাতৃপ্রতিম বাহিনীকে বিভিন্ন অনাকাঙ্ক্ষিত বক্তব্য ও অনভিপ্রেত মন্তব্যের মাধ্যমে মুখোমুখি দাঁড় করানোর অপপ্রয়াসে লিপ্ত হয়েছেন। এই অপপ্রচার চলমান বিচারিক ও প্রশাসনিক অনুসন্ধান প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে পারে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।’
এ ধরণের উদ্দেশ্য প্রণোদিত অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হয়ে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, জনবান্ধব ও গণমুখী পুলিশ ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করার জন্য সকলের সহযোগিতা চাওয়া হয় ওই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে।