তেঁতুলিয়ার ভাঙন ঠেকাতে ৭১২ কোটি টাকার প্রকল্প উঠছে একনেকে
১৮ আগস্ট ২০২০ ০৮:৩৬
ঢাকা: তেঁতুলিয়া নদীর ভাঙন ঠেকাতে ৭১২ কোটি ২১ লাখ টাকার প্রকল্প হাতে নিচ্ছে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়। এই প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি অবকাঠামো, শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, কৃষি-অকৃষি জমি, ফসল এবং জনসাধারণের ঘরবাড়ি রক্ষা সম্ভব হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। সে কারণেই প্রকল্পটির প্রক্রিয়াকরণ শেষ করেছে পরিকল্পনা কমিশন। আজ মঙ্গলবার (১৮ আগস্ট) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটি উপস্থাপন করা হচ্ছে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, আজ মঙ্গলবার শেরেবাংলা নগরের জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সম্মেলন কক্ষে একনেক বৈঠক হবে। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ে যুক্ত হয়ে বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন একনেক চেয়ারপারসন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই বৈঠকেই উপস্থাপন করা হবে ছয়টি প্রকল্প, যার মধ্যে রয়েছে ‘তেঁতুলিয়া নদীর ভাঙন থেকে পটুয়াখালী জেলার বাউফল উপজেলার ধুলিয়া লঞ্চ ঘাট থেকে বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার ধর্মপাশা রক্ষা’ শীর্ষক প্রকল্পটি। অনুমোদন পেলে চলতি মাসে শুরু হয়ে ২০২২ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বাপাউবো)।
সূত্র জানায়, পটুয়াখালী জেলার বাউফল উপজেলার পূর্ব দিকে তেঁতুলিয়া নদী, উত্তরে কারখানা নদী এবং পশ্চিমে লোহানিয়া নদী বয়ে চলেছে। এছাড়া অসংখ্য ছোট ছোট খাল-নদীও রয়েছে এ উপজেলায়। তিনটি বড় নদীর ভাঙনে বাউফল উপজেলার মানচিত্র প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হচ্ছে। বিশেষ করে বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার দূর্গাপাশা থেকে শুরু হয়ে পটুয়াখালী জেলার বাউফল উপজেলার ধুলিয়া লঞ্চ ঘাটের উজানে এবং ভাটিতে বিস্তীর্ণ এলাকা তেঁতুলিয়া নদীর ভাঙনের মুখে রয়েছে।
বাপাউবো বলছে, এই ভাঙনের ফলে গোটা এলাকার কৃষি জমি, বসতবাড়ি, রাস্তাঘাট ও স্কুল-কলেজসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ সমস্যা সমাধানের জন্য বাপাউবো গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে একটি কারিগরি কমিটি গঠন করে। ওই কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয় পরিকল্পনা কমিশনে। প্রকল্পের আওতায় সাড়ে সাত কিলোমিটার নদীর তীর সংরক্ষণ এবং ২ দশমিক ৮৩ কিলোমিটার নদী ড্রেজিং করা হবে।
প্রকল্পটি প্রক্রিয়াকরণের দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য (সচিব) জাকির হোসেন আকন্দ সারাবাংলাকে বলেন, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব পাওয়ার পর প্রকল্পটির ওপর গত বছরের ১১ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা। ওই সভায় বেশকিছু সুপারিশ দেওয়া হয়। সেগুলো প্রতিপালন করলে ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) পুনর্গঠন করা হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে নদী ভাঙনের হাত থেকে এলাকাটিকে রক্ষার পাশাপাশি মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়ন সম্ভব হবে বলে মনে করছে পরিকল্পনা কমিশন। তাই এটি একনেকে উপস্থাপনের সুপারিশ করা হয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ১১ এপ্রিল অনুষ্ঠিত পিইসি সভায় প্রকল্প এলাকা ফের পরিদর্শন করে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন তথ্য সন্নিবেশ করতে কারিগরি কমিটি গঠন করতে বলা হয়। বাপাউবো’র প্রধান প্রকৌশলীর (নকশা) নেতৃত্বে কমিটি গঠন করে প্রকল্পের কাজগুলোর যৌক্তিক ব্যয় নির্ধারণ করতেও বলা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে একটি কারিগরি কমিটি গঠন করে সুপারিশ অনুযায়ী কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশন থেকে নদী ড্রেজিং করার ক্ষেত্রে সমীক্ষার জন্য বরাদ্দ রাখতে বলা হয়। কিছু কিছু খরচ বাদও দিতে বলা হয়। সেসব সুপারিশ মেনেই ডিপিপি চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে কমিশন।
একনেকে উঠছে আর যেসব প্রকল্প
– বারৈয়াহাট-হেয়াকো-রামগড় সড়ক প্রশস্তকরণ
– দাউদকান্দি-গোয়লমারী-শ্রীরায়েরচর-মতলব উত্তর জেলা মহাসড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ
– খুলনা সড়ক জোনের অধীন মহাসড়কে বিদ্যমান সনু ও ঝুঁকিপূর্ণ পুরাতন কংক্রিট সেতু নির্মাণ
– গভীর সমুদ্রে টুনা ও সমজাতীয় পেলাজিক মাছ আহরণে পাইলট প্রকল্প
– ইমার্জেন্সি মাল্টি-সেক্টর রোহিঙ্গা ক্রাইসিস রেসপন্স
পরিকল্পনা কমিশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা আশা করছেন, যেভাবে প্রকল্পগুলোর প্রস্তাব চূড়ান্ত করা হয়েছে, তাতে সবগুলো প্রকল্পই একনেকে পাস হয়ে যাবে।
অবকাঠামো কৃষি-অকৃষি জমি ঘরবাড়ি পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান সরকারি ও বেসরকারি