অবশেষে গ্যাসের চুলা, বন্দিদের খাবার সংকট কাটছে
১৯ আগস্ট ২০২০ ০৮:৩১
ঢাকা: ২২৮ বছরের ইতিহাস কাটিয়ে ২০১৬ সালে প্রথমবারের মতো ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার স্থানান্তরিত হয় পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোড থেকে। ওই বছরের ৩০ জুলাই ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ঠিকানা হয় কেরাণীগঞ্জ। বন্দিদের সেখানে নিয়ে গেলে সবচেয়ে বড় যে সমস্যার মুখে পড়তে হয় তা হলো— এত বিপুল পরিমাণ বন্দিদের জন্য রান্না। দীর্ঘ দিন ধরে গ্যাসের চুলায় রান্নার অভ্যস্ততা থেকে আচমকা লাকড়ির চুলায় এত মানুষের খাবার রান্নার আয়োজনটা বড় চ্যালেঞ্জ ছিল কারা কর্তৃপক্ষের জন্য। সেই চ্যালেঞ্জ প্রকৃত অর্থে খুব ভালোভাবে মোকাবিলাও করা যায়নি। যে কারণে বিভিন্ন সময়ই কেন্দ্রীয় কারাগারের খাবার নিয়ে সমস্যার কথা জানা গেছে। বন্দিরা ঠিকমতো খাবার না পেয়ে হৈ হট্টগোলও করেছেন মাঝে মাঝে।
দীর্ঘ চার বছর এমন পরিস্থিতি কাটানোর পর অবশেষে সে চিত্র বদলে যাওয়ার সুযোগ হয়েছে। কেন্দ্রীয় কারাগারে শেষ হয়েছে গ্যাস লাইন সংযোগের কাজ। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এরই মধ্যে কারাগারের কোয়ার্টারগুলোতে পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহ শুরু হয়েছে। কারাগারের রান্নাঘরেও লাইনের কাজ শেষ। চুলার মেরামতের পাশাপাশি পরীক্ষামূলকভাবে পাইপলাইনের গ্যাসে চলছে রান্নার কাজ। শিগগিরই সব বন্দির জন্য গ্যাসের চুলায় রান্না শুরু হবে। খাবার পেতে বন্দিদের গত চার বছর যে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে, তার অবসান হতে চলেছে এর মাধ্যমে।
জানতে চাইলে কারা মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজন) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম মোস্তফা কামাল পাশা সারাবাংলাকে বলেন, চার বছর ধরে সবাই কষ্ট করেছে। আর কষ্ট নয়। গ্যাসের লাইনের কাজ শেষ হয়েছে। এখন সবাই গ্যাসের চুলায় রান্না করতে পারবেন।
ঠিক কবে নাগাদ গ্যাসের রান্না শুরু হবে— জানতে চাইলে তিনি বলেন, এরই মধ্যে কোয়ার্টারে রান্না শুরু হয়েছে। বন্দিদের রান্নাও শিগগিরই শুরু হবে।
মঙ্গলবার (১৮ আগস্ট) দুপুরে কথা হয় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মাহবুবুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, কেরাণীগঞ্জের কারাগারে বন্দি হস্তান্তরের পর এ পর্যন্ত কারাগারে বন্দিদের লাকড়ি চুলায় রান্না করে খাওয়ানো হতো। এখন কারাগারে গ্যাসের লাইন এসেছে। আমাদের কোয়ার্টারগুলোতে আমরা গ্যাসে রান্না করে খাচ্ছি। কারাগারের ভেতরে গ্যাসলাইনের কাজ শেষ। এখন চুলা মেরামতের কাজ চলছে। আর কয়েকটা দিন হয়তো লাকড়ির চুলায় রান্না করার প্রয়োজন হতে পারে।
আরও আগেই এই কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল জানিয়ে কেন্দ্রীয় কারাগারের এই জেলার বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে মেরামতের কাজ বেশ কিছুদিন বন্ধ ছিল। তা না হলে আরও আগেই চুলার কাজ শেষ হতো।
গ্যাসের রান্নার জন্য সব প্রস্তুতি মোটামুটি শেষ— সেটি জানালেন কারারক্ষী শরীফ মাহমুদও। তিনি বলেন, গত সপ্তাহে সবশেষ লাকড়ি ঢুকেছে কারাগারে। এরপর থেকে আর লাকড়ি ঢোকেনি, ঢুকবেও না। কারণ সবশেষ লাকড়ি যা এসেছে, সেগুলো শেষ হতে হতেই গ্যাসের চুলায় রান্না শুরু হয়ে যাবে।
আরেক কারারক্ষী জামাল উদ্দিন বলছেন, গ্যাসের চুলায় রান্না হলে বন্দিদের খাবার সরবরাহে এতদিন যে ঝামেলা পোহাতে হতো তার মুখোমুখি আর হতে হবে না। তিনি বলেন, আগে একসঙ্গে সব বন্দিকে খাবার দেওয়া যেত না। কারণ লাকড়ির চুলায় রান্নায় সময় বেশি লাগত। ফলে বন্দিতের পালা করে খাবার দিতে হতো। এতে করে যেসব বন্দি পরের দিকে খাবার পেত, তারা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠত। এখন আর সে ঝামেলা হবে না।
জানা যায়, স্থানান্তরের পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বেশ কয়েকবার কেন্দ্রীয় কারাগার পরিদর্শন করেছেন। এসময় বন্দিদের সুবিধা-অসুবিধার কথাও দফায় দফায় শুনেছেন তিনি। প্রতিবারই বন্দিরা সাধারণ যে সমস্যার কথা সবচেয়ে বেশি বলেছেন, তা হলো খাবারের সমস্যা। সে সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তারপরও গ্যাস লাইন যুক্ত হতে সময় লাগে। শেষ পর্যন্ত ২০১৯ সালের অক্টোবর মাসে শুরু হয় গ্যাসের সংযোগের কাজ। ১০ মাস পর এবারে সে কাজ শেষ হতে যাচ্ছে।
আইজি প্রিজন কেরাণীগঞ্জ খাবার গ্যাসের চুলা ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার বন্দি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম মোস্তফা কামাল পাশা