জোয়ারের তাণ্ডবে বিধ্বস্ত কুয়াকাটা, ভাঙনে বিলীন হচ্ছে সৈকত
২২ আগস্ট ২০২০ ০৮:০০
কুয়াকাটা: বৈরি আবহাওয়ার কারণে সৈকতের ওপর আছড়ে পড়া ঢেউ ক্রমশ কুয়াকাটার মানচিত্র বদলে দিচ্ছে। সাগরগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে নারকেল গাছ, পর্যটকদের জন্য নির্মিত পিকনিক স্পট ও ঝাউবন। কয়েকদিন ধরে সাগর প্রচণ্ড উত্তাল থাকায় আবাসিক হোটেল কিংসের পাকা ভবনটির একাংশ ভেঙে গেছে। হুমকির মুখে রয়েছে ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোও। ঢেউয়ের তাণ্ডবে অনেক গাছপালা উপড়ে গেছে। ভাসিয়ে নিয়ে গেছে সৈকতের দৃষ্টিনন্দন ছাতা বেঞ্চ ও অস্থায়ী ঝিনুক মার্কেটও।
গত তিন-চারদিন ধরে চলমান অমাবস্যার জোয়ার কুয়াকাটা সৈকতের দৃশ্যপট পাল্টে দিয়েছে। স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৪-৫ফুট পানির উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় সৈকতে থাকা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের নাভিশ্বাস উঠেছে। ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে বনবিভাগের রিজার্ভ ফরেস্ট ও কুয়াকাটা জাতীয় উদ্যান। চরম ঝুঁকির মুখে পড়েছে কুয়াকাটার মসজিদ ও মন্দির।
এ ছাড়া বাঁধের বাইরে থাকা পাকা-আধাপাকা অনেকগুলো আবাসিক হোটেল, ট্যুরিস্ট পুলিশ বক্স ও সদ্য চালু হওয়া ট্যুরিজম পার্কটি পানির কবলে পড়েছে। সমুদ্রের এমন রুদ্রমূর্তি গত ১০ বছরে আর দেখা যায়নি বলে স্থানীয়রা জনিয়েছেন। তারা জানান, গত তিনদিনে ২০ থেকে ২৫ ফুট ভূ-ভাগ সমুদ্রে বিলীন হয়ে গেছে।
কুয়াকাটা পৌর কর্তৃপক্ষ জিও বস্তা ফেললেও এ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে আগামী দু’এক দিনের মধ্যেই পাবলিক টয়লেট ও কিংস হোটেলটি সমুদ্রগর্ভে বিলীন হবে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
সৈকতপাড়ের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ঝিনুকের দোকানদার মো. সৈয়দ জানান, মঙ্গলবার রাতে দোকান বন্ধ করে বাসায় চলে যান তিনি। সকালে এসে দেখেন তার দোকানের একাংশ ও মালামাল সমুদ্রে ভেসে গেছে। শুধু তার দোকান নয়, এমন প্রায় অর্ধশত দোকান ও দোকানের মালামাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলেও জানান তিনি।
ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী জালাল জানান, ছেলেমেয়ে নিয়ে কোনোরকম সংসার চালিয়ে আসছিলেন। তিল তিল করে গড়ে তোলা তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি সমুদ্রের গ্রাসে চলে গেছে।
সৈকতে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, ঢেউয়ের ঝাপটায় অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। অবশিষ্ট অংশ দোকানিরা সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। সমুদ্রের ঢেউ এসে আছড়ে পড়ছে মহসড়কের শেষ সীমানায়। প্রবল ঢেউয়ে পর্যটকরা সৈকতে দাঁড়িয়ে থাকতে পারছেন না।
ঢাকা থেকে কুয়াকাটায় বেড়াতে আসা ডকুমেন্টারি চলচ্চিত্র নির্মাতা সন্দীপ বিশ্বাস জানান, তিনি ১২ বছর ধরে কুয়াকাটায় আসেন। ১২ বছর আগে প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে সৈকত দেখেছেন। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যেভরা কুয়াকাটার এখনকার চিত্র দেখে তিনি হতাশা ব্যক্ত করেন। এবার কুয়াকাটা সৈকতে এসে এমন বিধস্ত অবস্থা দেখে বিস্মিত তিনি।
তিনি বলেন, ‘কুয়াকাটা সৈকতকে রক্ষায় জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। অন্যথায় সূর্যোদয়-সূর্যাস্তের এই বিরল সৌন্দর্যমণ্ডিত কুয়াকাটা পর্যটনের মানচিত্র থেকে অচিরেই হারিয়ে যাবে।’
কুয়াকাটা প্রেসক্লাব ও কুয়াকাটা ট্যুরিজম ম্যানেজমেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের (কুটুম) সভাপতি নাসির উদ্দিন বিপ্লব বলেন, ‘কুয়াকাটা সৈকতের বালুক্ষয় রোধে দীর্ঘমেয়াদি দৃশ্যমান কোনো পরিকল্পনার বাস্তবায়ন নেই। বিভিন্ন সময় স্বল্পমেয়াদি যেসব পদক্ষেপ নিতে দেখা গেছে তা নিয়েও রয়েছে দুর্নীতির অভিযোগ। দরকার দ্রুত এবং সময় উপযোগী বাস্তবমুখি পরিকল্পনা এবং তার যথাযথ বাস্তবায়ন।’
কুয়াকাটা পৌর মেয়র আ. বারেক মোল্লা বলেন, ‘সমুদ্র ভাঙন রোধে পদক্ষেপ নেওয়ার সক্ষমতা কুয়াকাটা পৌরসভার নেই। দরকার দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ, যা পাউবো কর্তৃপক্ষ নিতে পারে। পৌরসভার পক্ষ থেকে জিরো পয়েন্টে কিছু জিও বস্তা ফেলে সাময়িকভাবে রক্ষার চেষ্টা করা হয়েছে, যা দিয়ে সৈকত রক্ষা করা সম্ভব নয়।’