Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘সরকারের প্রণোদনায় সারাদেশে আউশের আবাদ বেড়েছে’


২২ আগস্ট ২০২০ ১৭:১২

ঢাকা: কৃষিতে সরকারের নানামুখী উদ্যোগের ফলে দেশে আউশ ধানের আবাদ বেড়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, এবার আউশ আবাদে কৃষকদের সার, বীজ, সেচসহ বিভিন্ন প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। সারের দাম কমানো হয়েছে। ফলে আবাদ বেড়েছে।

শনিবার (২২ আগস্ট) মেহেরপুরের কালাচাঁদপুর গ্রামে আউশ ধান কাটা উদ্বোধন করার সময় অনলাইনে সংযুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন। মেহেরপুর জেলা প্রশাসন এবং কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ যৌথভাবে অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে।

কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘আজকের ক্রপ কাটিংয়ে দেখা যাচ্ছে, প্রতি বিঘা জমিতে এখন ১৮-১৯ মণ ধান হচ্ছে। যেটি অত্যন্ত গর্বের ও অহংকারের। অথচ এক সময় আউশ উৎপাদন সবচেয়ে কম হতো। প্রতি বিঘা জমিতে মাত্র ২-৩ মণের মতো। কিন্তু উৎপাদন বেড়ে যাওয়ায় এ বছর অনেক উৎসাহ ও আগ্রহ নিয়ে কৃষকেরা আউশ চাষ করেছেন। অন্যদিকে কৃষি বিজ্ঞানীরাও অনেকগুলো উচ্চফলনশীল জাতের ধান উদ্ভাবন করেছেন। যেগুলো চাষের ফলে গড় ফলনও বেড়েছে।’

কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘কৃষিপণ্যের বিপণনে সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করতে হবে। ইউরোপ-আমেরিকায় শাকসবজির অনেক দাম। এদেশের কৃষিপণ্যকে ইউরোপ-আমেরিকাসহ উন্নত দেশের বাজারে রফতানি করতে পারলে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। সেজন্য পূর্বাচলে একটি অ্যাগ্রো প্রসেসিং সেন্টার করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে, যাতে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী এদেশ থেকে কৃষিপণ্য রফতানি করা যায়।’

এ সময় আলোচনায় অংশ নিয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘মেহেরপুর কৃষিতে অত্যন্ত সমৃদ্ধ অঞ্চল। দেশের কৃষিতে ভবিষ্যতে এ অঞ্চলের ব্যাপক অবদান রাখার সুযোগ রয়েছে। তাই এ অঞ্চলের কৃষিকে এগিয়ে নিয়ে দেশের কৃষিখাতকে আরও সমৃদ্ধ করতে সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমান সরকার এ অঞ্চলের কৃষির উন্নয়নে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। এরই মধ্যে সেচের সুবিধার জন্য কিছু নদী খনন করা হয়েছে। ভবিষ্যতে আরো নদী ও খাল খনন করা হবে।’ জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী এ সময় বিভিন্ন সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে কৃষিকে আরও এগিয়ে নিতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারের ওপর‌ও ‌‌গুরুত্বারোপ করেন।

অনুষ্ঠানে কৃষি সচিব মো. নাসিরুজ্জামান বলেন, ‘নতুন জাতের প্রসার ও জনপ্রিয়তাকরণে ফসল কাটায় উৎসব খুবই প্রয়োজন। বর্তমানে ব্রি ধান-৪৮ আউশের একটি ভালো জাত। তবে এর চেয়েও ভালোজাত বা মেগাভ্যারাইটি ব্রি ধান-৮৩ আনা হচ্ছে। এছাড়া কৃষকের কাছে নতুন জাতের চাষাবাদ জনপ্রিয় করতে জেলা-উপজেলায় ফান্ডের মাধ্যমে কিছু বীজ কেনা ও সংরক্ষণ করা গেলে সহজেই জাতগুলো জনপ্রিয় হবে।’

জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ মনসুর আলম খান প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতি ইঞ্চি জমিতে ফসল ফলাতে জেলা প্রশাসন ও কৃষি বিভাগ নিরলস প্রচেষ্ঠা অব্যাহত রেখেছে বলে জানান।

উল্লেখ্য, মেহেরপুর জেলায় ক্রমাগত আউশ ধানের আবাদ বাড়ছে। গত ১০ বছরে আউশ আবাদ বেড়েছে দ্বিগুণ। ২০১০-১১ সালে আউশ আবাদ হয়েছিল ১০ হাজার ৪৩০ হেক্টর জমিতে। চলতি বছরে আবাদ হয়েছে ২০ হাজার ৮৩০ হেক্টর জমিতে। আর গতবছরের তুলনায় এবছর ৩০ ভাগ বেশি জমিতে আবাদ হয়েছে। ফলন ভাল হওয়ায় এ বছরের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৭০ হাজার ৮২২ মেট্রিক টন অর্জিত হবে আশা করছে মেহেরপুর কৃষি বিভাগ।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, আউশ আবাদ বৃদ্ধিসহ সবধরনের ফসল উৎপাদন বাড়ানোর জন্য বীজ, সার ও সেচসহ কৃষি উপকরণে বিভিন্ন প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার। মেহেরপুরে এবছর আউশ, মাসকলাই ও পেঁয়াজের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য ৮ হাজার ৫৫০ জন কৃষকের মাঝে ৩৮ লাখ টাকার প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া সেচের পানির কম ব্যবহারের ফলে উৎপাদন খরচ কম হওয়া এবং কৃষি বিভাগের নিরলস উৎসাহ-সহযোগিতার ফলে কৃষকেরা আউশ আবাদে আগ্রহী হচ্ছেন।

অনুষ্ঠানে তুলে ধরা হয়, করোনা পরিস্থিতিতে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে আমনে এ বছরের আবাদ লক্ষ্যমাত্রা ২৫ হাজার ৮০০ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৮৭ হাজার ৭২০ মেট্রিক টন নির্ধারণ করা হয়েছে। এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য আমনে উচ্চফলনশীল হাইব্রিড জাতের ধান চাষ ও লাগসই প্রযুক্তি ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব দিয়ে কার্যক্রম চলছে।

এছাড়া বাজার দর ভালো হওয়ায় মেহেরপুরে ক্রমাগত ভূট্টা চাষ বাড়ছে। গত ১০ বছরে ভূট্টার আবাদ বেড়েছে প্রায় ১০ গুণ। ২০১৯-২০ বছরে ১৬ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে ভূট্টার আবাদ হয়েছে, উৎপাদন হয়েছে ১ লাখ ৮২ হাজার ৬০০ মেট্রিক টন।

আউশ আবাদ কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক বেড়েছে মেহেরপুর


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর